পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●ፃፋይ তবুও লে হাসিমুখে কৌতুকের স্বরে বলিল—এমনি দিলুম ছেড়ে, ভাল লাগে মা আর, কি হবে পড়ে ? তাহার এই হালকা কৌতুকের স্বরে লীলা মনে আঘাত পাইল, অপূৰ্ব্ব কি ঠিক সেই পুরানো দিনের অপূৰ্ব্ব-ই আছে ? না যেন । অপু বলিল—তুমি ত পড়চো, না ? লীলা নিজের সম্বন্ধে কোনো কথা হঠাৎ বলিতে চায় না, অপুর প্রশ্নের উত্তরে সহজ ভাবে বলিল--এবার আই-এ পাশ করেচি, থার্ড ইয়ারে পড়চি। আপনি আজ কাল পুরোনো বাসায় থাকেন, না, আর কোথায় উঠে গিয়েছেন ? লীলার মা ও মসিীমা আসিলেন । লীলা নিজের আঁকা ছবি দেখাইল । বলিল—এবার আপনার মুখে সেই ‘স্বৰ্গ হইতে বিদায়’ট শুনবো, মা আর মাসীমা সেই জন্যে এসেচেন । আরও খানিক পরে অপু বিদায় লইয়া বাহিরে আসিল, লীলা বৈঠকখানার দোর পৰ্য্যস্ত সঙ্গে আসিল, অপু হাসিয়া বলিল, লীলা, আচ্ছা ছেলেবেলায় তোমাদের বাড়ীতে কোন বিয়েতে তুমি একটা হাসির কবিতা বলেছিলে মনে আছে ? মনে আছে সে কবিতাটা ? —উঃ ! সে আপনি মনে করে রেখেচেন এতদিন । সে সব কি আজকার কথা ? অপু অনেকটা আপন মনেই অন্তমনস্ক ভাবে বলিল— আর একবার তুমি তোমার জন্যে-আন দুধ অদ্ধেকট জামায় খাওয়ালে জোর করে, শুনলে মা কিছুতেই—ওঃ, দেখতে দেখতে কত বছর হয়ে গেল ! বtলয় সে হাসিল, কিন্তু লীলা কোনো কথা বলিল না। অপু একবার পিছন দিকে চাহিল, লীলা অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া কি যেন দেখিতেছে। ফিরিবার পথে একটা কথা তাহার বার বার মনে আসিতৃেছিল। অপর্ণ স্বন্দরী বটে, কিন্তু লীলার সঙ্গে এ পর্য্যন্ত দেখা কোনো মেয়ের তুলন। হয় না, হওয়া অসম্ভব । লীলার রূপ মানুষের মত নয় যেন, দেবীর মত রূপ, মুখের অনুপম শ্ৰীতে, চোখের ও জ্বর ভঙ্গিতে, গায়ের রং-এ, গলার স্বরে, গতির ছন্দে । - ഹം ..--l.**:-സഹാ. শিরায় উপশিরায় রক্তের তাণ্ডব নৰ্ত্তন তোলে না। [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড অপু বুঝিল সে লীলাকে ভালবাসে, গভীর ভাবে ভালবাসে, কিন্তু তা আবেগহীন, শান্ত, ধীর ভালবাসা । মনে তৃপ্তি আনে, স্নিগ্ধ আনন্দ আনে, কিন্তু লীলা তার বাল্যের সাথী, তার উপর মায়ের পেটের বোনের মত একটা মমত, স্নেহ ও অমুকম্প, একটা মাধুৰ্য্যভর ভাল বাস । দিন কয়েক পরে একদিন লীলার দাদামহাশয়ের এক দরোয়ান আসিয়া তাহাকে একথান পত্র দিল, উপরে লীলার হাতে ঠিকানা লেখা। পত্ৰখানা সে খুলিয়া পড়িল, দু-লাইনে পত্র, একবার বিশেষ প্রয়োজনে আজ বা কাল ভবানীপুরের বাড়ীতে লীলা যাইতে লিখিয়াছে ; লীলা সাদাসিধা লালপাড় শাড়ী পরিয়৷ মাঝের ছোটঘরে তাহার সঙ্গে দেখা করিল যাহাই সে পরে তাহাতেই তাহাকে কি সুন্দর না মানায় ! সকাল আটটা, লীলা বোধ হয় বেশীক্ষণ ঘুম হইতে উঠে নাই, রাত্রির নিদ্ৰালুত এখনও যেন ডাগর ডাগর স্বন্দর চোখ হইতে একেবারে মুছিয়া যায় নাই, মাথার চুল অবিন্যস্ত, ঘাড়ের দিকে ঈষৎ এলাইয়া পড়িয়াছে, প্রভাতের পদ্মের মত মুথের পাশে চূর্ণ কেশের দু এক গাছ। অপু হাসিমুখে বলিল—থার্ড ইয়ার বলে বুঝি লেখাপড় ঘুচেছে ? আটটার সময় ঘুম ভাঙল ? না, এখনও ঠিক ভাঙেনি ? লীলা যে কত পছন্দ করে অপুকে তাহার এই সহজ আনন্দ, খুসি ও হালকা হাসির আবহাওয়ার জন্য ! ছেলেবেলাতেও সে দেখিয়াছে শত দুঃখের মধ্যেও অপুর মুখের আনন্দ, উজ্জ্বলতা ও কৌতুকপ্রবণ মনের খুন্সি কেহ আটকাইয় রাখিতে পারিত না, এখনও তাই, একরাশ বাহিরের আলো ও তারুণ্যের সজীব জীবনানন্দ সে সঙ্গে করিয়া আনে যেন, যখনই আসে-আপন-আপনিই এসব কথা লীলার মনে হইল। তাহার মনে পড়িল মায়ের মৃত্যুর খবরট সে এই রকম হাসিমুখেই দিয়াছিল লালদীঘির মোড়ে। : —আমন, বক্ষন, বস্থান। কুড়েমি করে ঘুমুই নি, কাল রাত্রে বড় মামামার সঙ্গে বাম্বোস্কোপে গেছলাম