পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@సెB প্রবাসী—পৌষ, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ২য় খণ্ড ছেড়ে বেরোও না, তাই আমি সেটাকে কাজে লাগাই । এই যে প্রভাসদাটা বেরচ্ছে, প্রভাসদ, ও প্রভাসদ৷ ” ইন্দু দেখিল মহা মুস্থিল। অজয় এইভাবে ডাকাডাকি করার পর, সে আর প্রভাসকে বাধা দিতে পারিবে না । তাহ অত্যন্ত বেশী অভদ্রত হইবে। যাহা হইয়৷ গিয়াছে, তাহার আর চারা নাই, সুতরাং সে নীরবে প্রভাসের আগমন প্রতীক্ষা করিতে লাগিল । প্রভাস বেশ বুঝিয়াছিল, ইন্দু তাহাকে মায়ার নিকটে যাইতে দিতে চায় না। কারণটা ঠিক না বুঝিলেও ইহাতে সে মনে আঘাত পাইয়াছিল। সে মায়ার বাল্যবন্ধু, তাহাকে দিয়া উহার কি মায়ার অনিষ্টের আশঙ্কা করেন ? তাহা হইলে প্রভাসের আর এ বাড়িতে বাস করাই উচিত নয়। মায়ার অনিষ্ট হোক বা নাই হোক, প্রভাসের নিজের ক্ষতি কিছু কিছু হইতেছিল। অকারণ নিজেকে দুঃখ পাওয়ার পথে দাড় করাইয়া লাভ কি ? অজয় ডাকাডাকি করাতে সে একটু বিপদে পড়িয়া গেল। না যাইলে অজয় এবং মায়া কি মনে করিবে, এবং যাইলে ইন্দু কি মনে করিবে ? একটুখানি অগ্রসর হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি মহা চেচামেচি জুড়ে দিয়েছ যে ?” অজয় বলিল, "আস্কন না, একটু, আমাদের সঙ্গে কয়েক পাক ঘুরে যান। মায়া-দির বাগান বোধ হয় আপনি ভাল করে দেখেনই নি ।” প্রভাস আর একটু আগাইয়া আসিয়া বলিল, “ইn, বাগানটা খুবই স্বন্দর বটে। প্রথম এসেই ওটা আমি লক্ষ্য করেছি। সবটাই মায়ার তৈরি না কি ?” মায়া মুখ নীচু করিয়া দাড়াইয়া রহিল। বাগানট তাহার—মানে কি ? যাহা হউক, প্রভাস যে কাছে আসিয়া কথা বলিতেছে, ইহাতেই সে খুশী হইতেছিল। এখন পিসীমা তাহাকে সাততাড়াতাড়ি বিদায় না করিয়া দিলেই হয় । মায়া-সম্বন্ধে প্রভাসের মনোভাবটা এখনও স্বপরিস্ফুট হয় নাই, তবু অনেকখানি আগ্রহ যে তাহার ভিতর ছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। এত কাছে আসিয়া, একটু কথা বলার লোভ সে সংবরণ করিতে পারিল না। জিজ্ঞাসা করিল, “ছোটবেল গ্রামের বাড়িতেও তুমি খুব বাগান করতে, না মায়া ?” - মায়ার মুখখানা একেবারে লাল হইয়া উঠিল। সে কথার কি উত্তর দিবে ? আবার না দিলে যদি প্রভাস রাগ করিয়া চলিয়া যায় ? সে নতমুখে উত্তর দিল, “হা, মনে আছে।” প্রভাস বলিল, “এখন আর সে-সব গাছ একটাও নেই, সব ছাগল গরুতে শেষ করেছে।” ইন্দু বলিল, “বাড়ি-ঘরই কে দেখে তার ঠিক নেই, তা ফুলের গাছ । আমি মরবার পর ধরদের পড়ে গেলেও কেউ চেয়ে দেখবে না।” মায়া ফিশ ফিশ করিয়া বলিল, “আমায় যদি বাব যেতে দেন, তাহলে গিয়ে থাকি, এখানে আমার একটুও ভাল লাগে না ।” ইন্দু তাড়া দিয়া বলিল, “হ্যা, তুমি না থাকলে যত খড়ের ঘর, শাক, বেগুন আগলাবে কে ? আর ত সংসারে লোক নেই ? মেয়ের যত অনাস্থষ্টি কথা ।” প্রভাস বলিল, “আচ্ছা, আমি তবে একটু ঘুরে আসি ৷” এমন সময় হর্ণ বাজাইয়া একটা মোটর গেটের ভিতর ঢুকিয়া পড়িল । গাড়ী হইতে নামিল দেবকুমার ; সে বাড়ির ভিতরেই ঢুকিতে যাইতেছিল এমন সময় বাগানের দিকে চোখ পড়ায় সকলকে দেখিতে পাইল। ধীরে ধীরে সে অগ্রসর হইয়া আসিতে লাগিল । যতই নিকটে আসিতে লাগিল, তাহার মুখের ভাব ততই , কঠোর, চোখের দৃষ্টি ততই ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিতে লাগিল । মায়ার আরক্ত মুখ, তাহার লজ্জানত দৃষ্টি, এ সব কাহার জন্য ? শুধু তাহাকে ভুলিয়াই কি যথেষ্ট হয় নাই ? আবার একজনকে তাহারই আসনে ইহারই ভিতর বরণ করিয়া লইতে হইবে ? তাহার হৃদয়ে যেন বিষের তীর ফুটিয়া গেল । দেবকুমার কাছে আসিতেই মায়া চকিত হইয়। ইন্দুর পিছনে গিয়া লুকাইল। অজয় হাসিয়া বলিল, “মায়াদি, কত তামাশাই যে দেখাবে। একটা ঘোমটা টেনে দাও না ?” -