পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] পঞ্চদশী 8 აvS) হয় না । বড় বড় তার হাত পা, গাঢ়াগোটা গড়ন । চলতে গেলে বেঁকে চুরে চলে, হাসলে দাতগুলো বেরিয়ে পড়ে – এক কথায় তাকে স্বত্রীও বলা চলে না। কাজেই উমার আজও বিয়ে হয় নি। টাকা এবং রূপ দুটোরই অভাব । তাই বলে বাপ-ম| তো চুপ করে থাকৃতে পারে না । বাপ যদিওবা পারে, মা পারে না, কাজেই ভাবনায় চিন্তায় মায়ের রোগও সারে না । স্বামীকে অকৰ্ম্মণ্য জেনে মা ছেলের মুখ চেয়ে থাকে। উনিশ বছরের ছেলে । বিনোদ যেমন ধৈৰ্য্যের সঙ্গে চাকরির জন্যে উমেদারি করে তেমনি ধৈৰ্য্যে বোনের বিয়ের জন্যেও উমেদারি করে। শুধু মুখের কথায় কিন্তু দুটোর একটাও হয় না । পাওনাগণ্ডার আশা নেই দেখে ঘটক আর বাড়ীতে মাথা গলায় না, কাজেই বিনোদ নিজেই টে। টো করে ঘোরে । কিন্তু বৃথাই—মেয়ে দেখতে অনেকেই রাজি—কিন্তু বিয়ে করতে নয় । শেষ পর্যান্ত কিছু জলযোগ করে সবাই বাড়ি ফেরে । যে কেউ আসে তার সামনেই উমা নিজের কুরূপ নিয়ে দাড়ায় । দশকের নিষ্ঠুর সমালোচনা আর তাকে বাজে না, এমন কি সস্তা প্রসাধনের ছলনায় পুরুষকে ভোলাবার হীনতাটুকু তার সয়ে গেছে ৷ রূপ না হ’লে পুরুষের চলে ন৷ এ সত্য উম। সরলভাবেই বিশ্বাস করে, তাই ওকে কারুর পছন্দ হয় না ব’লে পুরুষের প্রতি ওর কোনো অভিমান নেই । কোনো নবীন যুবক ওর স্বামী হবে এ যেন উম ভাবতেই পারে না আজকাল । পাত্রের বয়স হ’লে বা দ্বিতীয় পক্ষের হ’লে কিছু তবু আশা হয়। কিন্তু তাও কই ? সম্প্রতি একটি প্রৌঢ় দ্বিতীয় পক্ষের পাত্র উমাকে বিনা পয়সায় নিয়ে যেতে রাজী হয়েছিল । আর পক্ষের তা’র তিনচারটে ছেলেমেয়ে আছে, সুতরাং খাটিয়ে মেয়েই সে চায়, কিন্তু সেও বিনোদকে চারবার ঘোরাবার পর সেদিন স্পষ্ট ব’লে দিয়েছে, অন্ততঃ তিনশো টাকা ন হ’লে বিরে করতে পারবে না-অন্য এক জায়গায় সে পাচশে টাকা পাচ্ছে । সেইদিন সকালে উমার বা-চোখ নেচেছিল, মাথার ওপর কাক ডেকেছিল, দেওয়ালে টিকটিকি আওয়াজ করেছিল এবং চোখের সামনে একটা বেড়াল ডানহাত দিয়ে কান চুলকোচ্ছিল। এতগুলি শুভচিহ্ন দেখলে কার না আশা হয় ? কিন্তু রাতে যখন দাদা এসে হতাশ হয়ে ব’সে পড়লো তখন আড়ালে উমার সে কি কান্না । কান্না একটু আসে বই কি। বিয়ে হ’ল না ব’লে কান্ন৷ নয়। কায় রাতে দাদার ঘুম হয় না ব’লে, মা’র রোগ সারে না ব’লে, আর দিনের পর দিন বাবার বকুনি খেতে হবে ব’লে । তা’কে খ ক।ঞ্চয় পছন্দ হয় না এমন কি \డిచి ఒ=t একটি বৃদ্ধও টাকা চেয়ে বসে, এ দোষ তো তারই । সে যে দেখতে ভাল নয় এও তো তারই দোষ । দাদার মুখের দিকে চাইতে উমার ভয় হয়, বাবার কাছে যেতে তার বুক কাপে । কাজেকৰ্ম্মে উমার হাত যেন আর নড়ে না, আধঘণ্টার কাজ সে দু-ঘণ্টায় করে, এক বাসন সাতবার মাজে, মাছ কুটতে হাত কেটে যায় । ভাতের দেরি দেখে দাদা বিরক্ত হয়ে বললে –কিরে রায় করতে তুই যে আজ বুড়ো হয়ে গেলি উমা-বিয়ে ভেঙে গেল ব’লে এতই দুঃখু ? রোহিণী কি একটা কাজে মেয়েকে বহুবার ডেকে সাড়া পায়নি, রেগে এসে বললো—কি গো, কানে যে কথা যায় না, লুকিয়ে নভেল পড়া হচ্ছে বুঝি ? দ্যাথে গরীবের ঘরে ওসব কেতাব-টেতাব চলবে না, বুঝলে ? কাজকৰ্ম্ম বেশ ক’রে শিখতে হবে- কোথায় কোন হাঘরে পড়বে তা’র ঠিক্‌ কি ! আর দ্যাখে ঐ নভেলি কায়দায় জানলায় দাড়িয়ে-টাড়িয়ে থাকাও হবে না-বয়সটি তো কম হয়নি তোমার ! কবে দাদার একখানি লাইব্রেরীর বই উমা একটু উণ্টে দেখেছিল, কবে নতুন বরষার সমাগমে ঘনায়মান আকাশের দিকে চেয়ে উমা থানিকক্ষণ জানলায় দাড়িয়েছিল, সেই সামান্ত ত্রুটি বাবা আজ ক্ষমা করেন নি—ঐ একই প্রসঙ্গ নিয়ে খোটা চলেছে বহুবার । মেঘের দিকে চেয়ে হয়ত উমার মনটি একটি অশ্রুসজল ব্যথায় উদাস হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তার থেকে ‘মেঘদূত’ কাব্যের কল্পনা কর বাবার পক্ষে একটু বেশীই । আর নভেল ? ঐ বইগুলিতে যা লেখে উমার পক্ষে তা হৃদয়ঙ্গম করা কিছু শক্ত । প্রেম ? উমার সাংসারিক অভিধানে ‘প্রেম' বলে কোনো শব্দই নেই। নারী আবার পুরুষকে পছন্দ করবে কি !... -- মা বললো—দিনকে দিন তুই কি হচ্ছিস বলতে উমা, চুলগুলো বাধতে পারিস নে ?- লোকের পছন্দ হবে কি ক’রে ! আন্তরিক মায়া যদি কারুর থাকে তো সে ঐ মায়ের । মায়ের কথায় উমা হয়ত চুলগুলি বাধলো—গায়ে একটু সাবান দিয়ে একখানি ফরসা কাপড়ও পরলো হয়ত, কিন্তু বাবা উঠলো জলে— গরীবের মেয়ের অত ফ্যাসান আমার সহ হয় না, বুঝলে ? পড়বে তো সেই কার না কার হাতে । চুলগুলো রুক্ষ আলগা থাকলেও রোহিণীর সহ হয় না, —ঘরের বিধবা মেয়েটি তো নও, স্বত তপিন্সির দরকার কি বাপু ? চুলগুলো একটু বাধলেই তো পার । গরীবের ঘরের কুরূপঞ্চদশী অনুঢ়া মেয়ে শত চেষ্টাতেও বাবার মন পায় : উদয়ান্ত সংসারে খাটে, তার امیر " از