পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8〉や প্রবাসী—পৌষ, ১৩৩৭ অলোকবাবুকে ভেতরে নিয়ে এসো, বাইরে দঁাড় করিয়ে রেখে না। ঘরে এসে বিনোদ বললো—এই যে এইথানে ব’লে ভাই, গরীবের ঘর, বুঝলে তো- রুগীর কাছে তোমার গিয়ে কাজ নেই অলোক । রোহিণী বললো—ডাক্তারবাবুকে তোমার মার কাছে নিয়ে যাও বিচু । অলোকবাবু এইখানেই থাকুন -- অলোক, বাবা বোস ! কিন্তু বস্বার জায়গা কই ? ছোট্ট ঘর গাদাখানেক জিনিয়ে বোঝাই—আলো-বাতাসের জায়গাই নেই তো মাচুষের ! ঘরের অনেকটা জুড়ে একটা তক্তাপোষ, তাতে পুরানো একটা বিছানা । চাদরের অভাবে তার ওপর একটা পরবার ধুতি বিছানো—উমাই বুদ্ধি ক’রে পেতেছে, নইলে বিছানা উলঙ্গই থাকে । ঘরদোর পরিষ্কার করলেও রাতারাতি দেওয়ালগুলোতে বালি-রং ধরিয়ে চূণকাম তো করা যায় না, তাই দাত বার করা ঘরে অন্ধকার ইদুর এবং মশার রাজত্ব কিছু বেশী । রোহিণী অধৈয্য হয়ে বললো—না বললে কিছু যদি একটা করবে, এদের নিয়ে আর পারা যায় না । নাঃ, উমা—ওরে উমি, একটা চেয়ার নিয়ে আয় শীগগির – বুড়ো মেয়ের কিছু যদি বুদ্ধি আছে দ্যাখে দিকি ভদ্রলোক কোথায় যে বসবেন— রান্নাঘরের জানালায় উম ঠিক তেমনিভাবে তখনও দাড়িয়ে—মন তার কোথায় কে জানে ? মল্লিকদের বাড়ির ছেলে তাদের সামান্য কুটীরে এসেছে—এ যেন তখনও তার বিশ্বাস হয়নি। বাবার ডাক তার কানে এলো, কিন্তু সে কি করবে ? সে কি আলোকের সামনে গিয়ে দাড়াতে পারে । কিন্তু ভদ্রলোক কোথায় যে বস্বেন সেও একটা ভাববার কথা। বাড়িতে কি ছাই একটাও চেয়ার আছে ?—বাবা তো হেঁকে বসলেন । কিন্তু উমার সবচেয়ে কষ্ট ঘরের অবস্থা কল্পনা ক’রে । কে জানে অলোক আসবে? তাহ’লে সে ঘরটিকে আরও ভাল করে গোছাতে পাৰ্বতো—অনাবতক কতকগুলি ঞ্জিনিষ বাইরে বার করে দিতে। যেমন করেই হোক একটা চেয়ার জোগাড় করে রাখতে, এমন কি গোট|দুই ধূপও জেলে রাখতে হয়ত। ছিঃ ছিঃ, দাদা যদি একটু আগেও বলতে একবার. . ভাইবোনগুলি ঘরের জানলা দিয়ে উকি মারছে, যেন অপরূপ কেউ এসেছে । তাদের মধ্যে কেউ কেউ উলঙ্গ, কারুর পরণে সামান্ত একটা ইঞ্জের মাত্র। লজ্জায় উমার মাথা কাট যাচ্ছিল । তার ইচ্ছে হচ্ছিল, ওদের টেনে এনে বেশ ঘা-কতক দিয়ে দেয় । * , অলোক বললো- না, না থাক আপনি ব্যস্ত হবেন [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড না ! আমি এই বিছানাতেই বস্ছি- চোরের কি দরকার । আপনারও তো অসুখ শুনেছি রোহিণী বাবু! রোহিণী বললো—হঁ্য বাবা, শরীর আর আমার ভাল কই ? বাতে একেবারে পঙ্গু, তবে... তারপরই রোহিণীর "উমাউ করে কান্না—আমার আর কি হয়েছে বাবা, বিস্তুর মা বুঝি আর বঁাচে না । অলোক সাস্তুন দিয়ে বললে!—কিছু ভাববেন না আপনি, সব সেরে যাবে—ডাক্তার খুব ভালই, রোহিণী বাবু। রোহিণী চোখ মুছে বললো-হ্য। বাবা তা ঠিক ; বিল্লুকে তুমি ভালবাস, তাই যা ভরসা, নইলে. রোহিণীর চোখে আবার জল এসে পড়ল। প্রাতমুহূৰ্ত্তে বুদ্ধের কান্না দেখে অলোক তে অস্থির । ডাক্তার পরীক্ষা ক’রে এঘরে ফিরে এলেন । ঐটুকু সময়ের মধ্যে রোহিণী নিজের কাজ করে নিল, অর্থাৎ ংসারের যাবতীয় দুঃখের কথা অলোককে জানিয়ে ফেলল—এমন কি পয়সার অভাবে মেয়েটার যে বিয়ে হচ্ছে না সেটুকুও জানাতে ভুললে না । ডাক্তারের সঙ্গে সঙ্গে অলোক গাড়ীতে গিয়ে বলে । রোহিণী বললো-চললে অলোক, একটু বসলে না বাবা-তোমার জন্তে যে একটু মিষ্টি আনতে দিয়েছিলাম । —ব্যস্ত হবেন না কাকাবাবু, না হয় আর একদিন খেয়ে যাব’খন,—আজি একটা বিশেষ কাজ রয়েছে কিনা। বিনোদের আনন্দ ধরে ন!—ডাক্তার বলেছেন ম৷ শীঘ্রই সেরে উঠবেন। রোহিণী হেসেই খুন, তার মুখে অন্ত কথা নেই—হঁ্যা ছেলে বটে ঐ আলোক। কাকাবাবু! হেঁ হেঁ । বাবা বিস্তু, ভাল ক’রে কাজ কোরো বাবা, ফট করে রেগেমেগে ছেড়ে দিও না যেন । কাকাবাবু! আহা প্রাণ যেন জুড়িয়ে গেল।. একদিন বিনোদ এসে রোহিণীকে বললো-বাবা তুমি কি উমার বিয়ে নিয়ে অলোককে কিছু বলেছিলে ? —কেন বলতো ? – আলোকের মা সব জিজ্ঞেস করছিলেন । তিনি উমার বিয়ের সমস্ত খরচ দেবেন বলেছেন । আলোককে ওসব কেন বলতে গেলে বাবা ? জান তো ও আমার জন্তে কত করে। মার ওষুধ আর ডাক্তারের খরচই তো কম নয় | wo —তাতে কি হয়েছে বিচু, ওরা বড়লোক আর আমরা ভিখারী—আমাদের আবার লজ্জা কি ? সেই দ্বিতীয় পক্ষ পাত্রটির সঙ্গে উমার বিয়ের কথা এবার পাকাপাকি হবার সম্ভাবনা। বিয়ের দিন ঠিক