পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] পঞ্চদশী 8›ዓ হলেই হয় । মার শরীর অনেক ভাল—চিস্তা কিছু কম এবং ওষুধ নিয়মিত পড়ে। উমা মল্লিকদের উদ্দেশে রোজ প্রণাম জানায়, আর প্রণাম জানায় তার বয়োবৃদ্ধ ভবিষ্যৎ স্বামীর উদ্দেশে। সংসারে তাহ’লে একজনের ঘরেও তার স্থান অাছে । ডাক্তারের সঙ্গেই আলোকের শেষ আসা নয়—সে আরও দু-একবার এ বাড়িতে এসেছিল । মাঝে একবার বিনোদ ভয়ানক অমুখে ভোগে । ডাক্তার দেখিয়ে অলোকই তাকে স্বস্থ ক’রে তুললে । আলোকের সামনে বেরোতে উমার মাথা কাটা যায় —দাদার ডাকে বাধ্য হয়ে তাকে ওঘরে যেতে হয়, কিন্তু প্রতি মুহূৰ্ত্তে তার বুক কঁপে, তার পা আড়ষ্ট হয়ে আসে.। সভ্য এবং বনেদী ঘরের ছেলের কাছে উমা তার রূপ গুণ শিক্ষা এবং অবস্থার দীনতা নিয়ে দাড়াতে পারে না । দাদার ঘরে ঢুকে উমা যেন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, পৃথিবীর কোনো কিছু তার মনে থাকে না – কি একটা অস্বাভাবিক শক্তি বিদ্যুতের মত তার ওপর ক্রিয় করতে থাকে। প্রতি মুঠৰ্ত্তে তার কাজে ভুল হয়। দাদার দুধ ঢালুতে হয়ত ওষুধই ঢেলে ফেলল। তারপর রুগ্ন দাদার বকুনি—দিন দিন তুই একটা অকৰ্ম্মের ধাড়ি হচ্ছিস. বুড়ে মেয়ে কোথাকার । যা পাল এখান থেকে, কিছু করতে হবে না । অলোক হয়ত বাধা দিয়ে বললে – কেন শুধু শুধু মাথা গরম করছে বিনোদ, ভুল কার না হয় শুনি ? দাদার তোমার মাথা খারাপ হয়েছে উমা কিছু মনে কোরো না | উমা প্রথমটা চমকে ওঠে, তারপর মুখ নীচু করে একটু হাসে হয়ত—ঘরের বাইরে গিয়ে কিন্তু সে হাফ ছেড়ে বঁাচে । অলোক যতক্ষণ থাকৃত উমার কিন্তু উদ্বেগের শেষ থাকৃত না । ভাবতে।-ছিঃ ঐরকম অন্ধকার ঘরে কি ভদ্রলোক বস্তে পারে,তাও যদি একটু বাতাস বইতে। বাবা:, বিছানাটা কি ময়লাই না হয়েছে উমার খালি ভয় হয়, এ বাড়িতে এলে বুঝি অলোকের ভয়ানক কষ্ট হয়। আলোকের ব্যবহারে কিন্তু কোনো আড়ষ্টতা ছিল না, সে বেশ সহজভাবে আসত যেত। এমন কি বিনোদের ছোট ছোট ভাইবোনগুলির সঙ্গেও অলোক অবাধে মিশতে । ধনীর দুলালের এই একান্ত সহজ সরলতা উমাকে আরও বিচলিত ক’রে তুলত। ভাইবোনগুলি অলোকবাবুকে ভয় করে না ব'লেও উমার লজ্জ যথেষ্ট— উনি কি একটা যে-সে লোক ? বিনোদ স্বস্থ হ’লে রোহিণী একদিন বললে—বিহু, অলোককে খেতে বলে কাল, বুঝলে ? গরীব হ’লেও আমাদেরও সাধআহলাদ অাছে । ۔۔بہ۔ بمعہ، عب^*.. ہ.۔ یہ بہتر یہ---می می۔ مہم سمجمسہ عمح বিনোদ অনেক কষ্টে রাজী হ’ল । উম। কিন্তু এসে বললো—দাদা, অলোকবাবুকে এনে খাওয়াবে কি ? —আমিও তাই বলছিলুম উমা, কিন্তু বাবা তে। শুনলেন না। তবে অলোকের কাছে আমার বিশেষ লজ্জা নেই । আমাদের সবই তো সে জানে । গরীব হলেও মল্লিকদের বাড়ির ছেলের সামনে ডালচচ্চড়ি ধ'রে দেওয়া যায় না । উমার রান্নার হাত আছে —অনেক ভাল ভাল খাবার তৈরি হ’ল । বিনোদ খরচ করতে কুষ্ঠিত নয়। অলোক তো চটেই অস্থির— কেন এত খরচ করা ? কিন্তু খেতে বসে আলোকের সে কি তৃপ্তি । উমা পরিবেশন করলে—অলোক তার রান্নার প্রচুর প্রশংসা করতে লাগল। কোনো সঙ্কোচ নেই, যেন সে বাড়িরই ছেলে—আরে উমা তো বেশ রাধতে শিখেচে.উমা, আর একটু এচোড়ের তরকারি আনো ভাই...মাংসটা কি তুমি নিজে রেধেছ ? বাঃ, বেশ হয়েছে তো !—কি কি দিয়ে রেধেছ একবার শিখিয়ে দেবে উমা ? প্রশংসা শুনে উমা লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল এত বড়লোক বলে কি ! কোথাও এতটুকু কি গৰ্ব্ব নেই ? নারী হয়ে জন্মানে এইখানেই সার্থক ! মানুষকে খাওয়ানোর তৃপ্তি জীবনে উমা আজ প্রথম পেলে । উম স্তম্ভিত হয়ে অলোকের কথা শুনতে লাগলো-আরে ঘরের ছেলে হয়ে তুমিই যে জামাই বনে গেলে বিহু, উমা দাদাকে আর একটু মাংস দাও । দাদাকে দিতে এসে উমা ভুলে অলোককেই দিয়ে ফেলল—আরে কর কি ! তুমি যে আমায় পেটুক ঠাওরালে উমা ! এ যে সেই তামাক খাবার ব্যাপার হ’ল । তারপর অলোকের হে হে করে হাসি। না বুঝে রোহিণীও খুক খুক করে হাসতে লাগল। আহারান্তে উমা পান নিয়ে এল। অলোক বললে—তুমি কিন্তু আজ একটাও কথা বলনি উমা একা আমিই ব’কে মরছি। অলোকের পায়ের ধূলো নিয়ে উমা বললো—সেদিন তাড়াতাড়ি চলে গেলেন, আপনাকে প্রণাম করা হয়নি কিন্তু । অত বড়লোকের কাছে এর বেশী আর কি বলবার আছে ? উমা আড়ালে চলে গেল। আহারাস্তে খানিকট কথাবাৰ্ত্তা চলল—উমা কান পেতে রইল, আলোকের প্রত্যেকটি কথা ও গিলছিল যেন। অলোক বলছিল—আপনার মেয়ে বড় লাজুক রোহিণীবাবু, কিন্তু বেশ কাজের—কেমন চমৎকার সব রান্না শিখেচে । একটু লেখাপড়াও যদি শেখাতেন ঐ সঙ্গে....