পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8>b [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড রোহিণী বললো—লজ্জাটজ একটু থাকা ভাল অলোক, বিশেষ করে আমাদের ঘরে । অার উমার বয়স তো কম হয়নি বাবা –বিয়ে দিলেই হয়-- । —কি আর এমন বয়স রোহিণী বা বু? বিদেশে ঐ বয়সের মেয়েরা ফ্রক পরে ঘুরে বেড়ায়, জানেন তো ? আলোক বিনোদের দিকে চেয়ে বললো—বিস্তু, শুনছি নাকি তোমরা উমার বিয়ের ঠিক করেছ...দ্বিতীয়পক্ষের পাত্র না ? রোহিণী বিমর্ষমুখে বললো—কি করবো বাবা, জান তে৷ টাকা না থাকূলে মেয়ের বিয়ে আজকাল হয়ই না । —নাই বা হ’ল বিয়ে—তা ব’লে মেয়েকে জলে ফেলে দেবেন ? আমার মতে এ বিয়ে আপনাদের না দেওয়াই উচিত । একটা কথা কিন্তু আমার মনে হয়েছে, আমি মনে করছি..আপনার যদি আপত্তি না থাকে.আচ্ছা দু-একদিন পরে আপনাকে জানাব, রোহিণীবাবু। কিন্তু এ বিয়ে তুমি ভেঙে দাও, বিহু । যতদুর দেখেছি মনে হয় উমা ভারি সরল শাস্ত মেয়ে. লেখাপড়া একটু কম জানে বটে তা শিখিয়ে নিলেই হ’ল । বাহজান শূন্ত হয়ে উমা শুনছিল অলোকের কথা ! এবার বুঝি সে সংজ্ঞ হারাবে । জীবনে এতখানি সহায়ুভূতি সে যে কখনও কারুর কাছে পায় নি। যদি সম্ভব হ’ত উম গিয়ে আলোকের পায়ে লুটিয়ে পড়তে । আলোক চলে গেলে রোহিণী বিনোদের দিকে চেয়ে চেয়ে বললে,—বিহু, ব্যাপারটা কিছু কি বুঝলে ? আলোক যে হঠাৎ বলতে গিয়ে থেমে গেল ? মেয়েটার বরাত ভাল মনে হচ্ছে, হঠাৎ চোথে লেগে গেছে বাবাজীর ! বিনোদ বিরক্ত হয়ে বললো—কি ষ-ত ভাবছেন বাবা, যা সম্ভব নয় অনর্থক তাই নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ কি ? খবর তো দু-একদিন পরেই আসবে। রোহিণী অপ্রস্তুত হ’ল, কিন্তু মন তার শাস্ত হ’ল না । ভাবনার তার শেব নেই–সংসারে অসম্ভব কি ? গিল্পীর সঙ্গে রোহিণী আলোচন করতে লাগল— বিনোদকে দেখলেই কিন্তু দুজনে চুপ করে যেত। শুনলে বিনোদ অসন্তুষ্ট হবে। গিল্পী কথায় কথায় জিব কাটে। বলে--কি ভাবতে কি ভাবছি ঠাকুর, দোষ নিও না যেন। মেয়েটার যা হোক একটা হিল্পে হলেই হ’ল । আমরা গরীব বড় আশা তো করি নে ... কিন্তু মনকে যতই চোথ ঠারুক রোহিণীর ভাবনা মোটেই কমৃত মা,–সংসারে অসম্ভব কি ? .-----. -رہ.م.......--محبتیں ٭۔ ۔ہبی یہ ہبہ۔ ممہ بہ ہبہ۔بقہ مم -به vجس*مہم۔ --مب অবস্থা কিন্তু সকলের চেয়ে শোচনীয় হ’ল উমার। রাতে সে ঘুমোত না । যদি বা একটু তন্দ্র আসে, এমন সব স্বপ্ন দেখে যা শুনলে লোকে তাকে পাগল বলবে । উমার আত্মহত্যা করবার ইচ্ছে হ’ত । নিজেকে তার ভয়ানক পাপী মনে হ’ত 1 জানতে পারলে অলোকবাবু হয়ত তার মুখ দর্শন করবেন না । কিন্তু সেদিন তিনি কি বলতে চেয়েছিলেন ? উমা আকাশ-পাতাল ভাবতে থাকে। কিন্তু আইবুড়ে মেয়ে সে, এ সব কি তার ভাবতে আছে ? f দু-দিন আগে যে মেয়ের ভাববার কিছুই ছিল না, একটি বৃদ্ধ পাত্রের অসম্মতিতে যার চোখের জলের শেয ছিল না, আজ তার ভাবনার শেষ নেই—স্বপ্নের শেষ নেই। উমা আজও বাসন মাজে, বাটন বাটে, ঘর ঝাট দেয়—আজও সে একে বেঁকেই চলে, হাসতে গেলে তার মাড়ি বেরিয়ে পড়ে, তবু আজ স্বপ্ন দেখতে তার বাধে না । মুখের একটি কথায় স্বৰ্গ রচনা করা চলে আবার সেই একটি কথায় স্বৰ্গ ভেঙে যায়ও । মাটির বুকে বসে উমা দেখত আকাশের প্রশান্ত নীলিমা, সমুদ্রের উদার বিস্তৃতি । সে দেখত চাদের স্বপ্ন, যে চাদের কলঙ্ক নেই সেই চাদের ?-- তারপর একদিন স্বপ্ন ভেঙে গেল । আলোক রোহিণীকে লিখে পাঠালো—আমাদের বুদ্ধ সরকার রামলোচনবাবুর বড় ছেলেটি এবার বি-এ পাস করেছে। ঞ্জেনে দেখলাম ঘরটর সবহ ঠিক আছে । আপনার যদি ইচ্ছে থাকে, গোবৰ্দ্ধনের সঙ্গে উমার বিয়ে দেওয়া অসম্ভব হবে না—খরচ আমার মা-ই সব করবেন। গোবৰ্দ্ধন পাত্রের নাম । গোবৰ্দ্ধনই হোক আর দুৰ্য্যোধনই হোক রোহিণীর আনন্দের শেষ নেই । উমার ভাগ্যে বি-এ পাস পাত্র—একি কম কথা ! রোহিণীর কাছে উমার দাম বেড়ে গেল । বাবার কাছে সে আর বকুনি খায় না। রোহিণী বললে{—হঁ্যা ছেলে বটে ঐ অলোক-একেই বলে বড়লোকের ছেলে । বিকু, বেশ মন দিয়ে কাজকৰ্ম্ম কোরে বাবা । দেথে যেন রেগে-মেগে ছেড়ে দিও না । কিন্তু সবচেয়ে আশ্চৰ্য্য এই যে, উমার চোখে আজকাল বাদল নেমেছে । বিয়ে ভেঙে গেলে যে মেয়ে কাদতো, বিয়ের ঠিক হবার পরও তার মুখে হাসি নেই। আশ্চর্য্য না ? ? " ": ছেড়ে যেতে হবে, বোধ হয় তাই ! কিংবা হয়ত সেই বৃদ্ধ দ্বিতীয় পক্ষের ওপর তার মায় পড়ে গেছে । মা-ও মেয়ের সঙ্গে কাদে—এমন কি বাবার চোখেও জল আসে । এ রোহিণী যেন অন্য মানুষ । এখন রোহিণী বুঝছে, উমা সংসারের কতখানি ছিল ।