পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88b প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ২য় খণ্ড শিক্ষা থাকা চাই, তবেই দর্শকদের ঔৎসুক্য ও মনোযোগ সে জাগিরে রাখতে পারে । অার একটি কথা তাকে বুঝতে হবে, মুজিয়মে কেবল একটি মাত্র ছবি নেই, অতএব একটা ছবিকে চিনে নেওয়া দর্শকের উদ্দেশু। হওয়া উচিত নয়, মুজিয়মে যে-সব বিশেষ শ্রেণীর ছবি ব্লক্ষিত আছে তাদের শ্রেণীগত রীতি বোঝা চাই । পরিচায়কের কৰ্ত্তব্য কয়েকটি ক’রে বিশেষ ছাদের ছবি বেছে নিয়ে তাদের প্রকৃতি বুঝিয়ে দেওয়া। আলোচ্য ছবিগুলির সংখ্যা খুব বেশি হলে চলবে না এবং সময়ও বিশ মিনিটের বেশি হওয়া ঠিক নয় । ছবির যে একটি স্বকীয় ভাষা, একটি ছন্দ অাছে, সেইটেই বুঝিয়ে দেবার বিষয়, ছবির রূপের সঙ্গে ছবির বিষয়ের ও ভাবের সম্বন্ধ কি সেইটে ব্যাখ্যা করা দরকার । ছবির পরস্পর বৈপরীত্য দ্বারা তাদের বিশেষত্ব বোঝানো অনেক সময় কাজে লাগে। কিন্তু দর্শকদের মন একটুমাত্র শ্রাস্ত হলেই তাদের তখনি ছুটি দেওয়া চাই । অশিক্ষিত দর্শকদের এর কি করে ছবি দেথতে শেখায় তারই একটি রিপোর্ট থেকে উল্লিখিত কথা গুলি তোমাকে ংগ্রহ করে পাঠালুম। এর থেকে আমাদের দেশের লোকের যেটি ভাববার কথা আছে সেটি ইচ্চে এই :– আশাকে যে চিঠি লিখেচি তাতে আমি বলেছি, সমস্ত দেশকে কৃষিবলে যন্ত্রবলে অতি দ্রুত মাত্রায় শক্তিমান করে তোলবার জন্তে এর একান্ত উদ্যমের সঙ্গে লেগে গেচে । এটা ঘোরতর কেজো কথা । অন্য সব ধনী দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের জোরে টিকে থাকবার জন্তে এদের এই বিপুল সাধন। আমাদের দেশে যখন এই-জাতীয় দেশব্যাপী রাষ্টিক সাধনার কথা ওঠে তখনি আমরা বলতে স্বরু করি এই একটিমাত্র লাল মশাল জালিয়ে তুলে দেশের অন্য সকল বিভাগের সকল আলো নিবিয়ে দেওয়া চাই, নইলে মাছুয অন্ত মনস্ক হবে । বিশেষত ললিতকলা সকল প্রকার কঠোর সঙ্কল্পের বিরোধী। স্বজাতিকে পালোয়ানি করবার জন্তে কেবলি তাল ঠুকিয়ে পয়তার করাতে হবে, সরস্বতীর বীণাটাকে নিয়ে যদি লাঠি বানানো সম্ভব হয় তবেই সেটা চলষে নতুবা নৈব নৈব চ। এই কথাগুলো যে কতখানি মেকি পৌরুষের কথা তা এখানে এলে স্পষ্ট বোঝা যায় । এখানে এর। দেশ জুড়ে কারখান চালাতে যে-সব শ্রমিকদের পাকা করে তুলতে চায়, তারাই যাতে শিক্ষিত মন নিয়ে ছবির রস বুঝতে পারে তারই জন্যে এত প্রভূত আয়োজন করেচে। এরা জানে রসজ্ঞ যারা নয় তারা বৰ্ব্বর, যারা বৰ্ব্বর তারা বাইরে রুক্ষ্ম,অন্তরে দুৰ্ব্বল । রাশিয়ায় নব-নাট্যকলার অসামান্য উন্নতি হয়েচে । এদের ১৯১৭ খ্ৰীষ্টাব্দের বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গে ঘোরতর দুৰ্দ্দিন দুর্ভিক্ষের মধ্যেই এর নেচেছে, গান গেয়েছে, নাট্যাভিনয় করেছে—এদের ঐতিহাসিক বিরাট নাট্যাভিনয়ের সঙ্গে তার কোনো বিরোধ ঘটেনি। মরুভূমিতে শক্তি নেই। শক্তির যথার্থ রূপ দেখা যায় সেইখানেই যেখানে পাথরের বুক থেকে জলের ধার কল্পোলিত হয়ে বেরিয়ে আসে, যেখানে বসন্তের রূপহিল্লোলে হিমাচলের গাম্ভীৰ্য্য মনোহর হয়ে ওঠে। বিক্রমাদিত্য ভারতবর্ষ থেকে শক শত্রুদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু কালিদাসকে নিষেধ করেন নি মেঘদূত লিখতে। জাপানীরা তলোয়ার চালাতে পারে ন৷ একথা বল বার জে নেই, কিন্তু সমান নৈপুণ্যেই তারা তুলিও চালায়। রাশিয়ায় এসে যদি দেখতুম এরা কেবলি মজুর সেজে কারখানা-ঘরের সরঞ্জাম জোগাচ্চে আর লাঙল চালাচ্চে, তাহলেই বুঝ তুম এরা শুকিয়ে মরবে। যে বনস্পতি পল্লবমৰ্ম্মর বন্ধ করে দিয়ে খট, থট আওয়াজে অহঙ্কার করে বলতে থাকে, আমার রসের দরকার নেই, সে নিশ্চয়ই ছুতোরের দোকানের নকল বনস্পতি—সে খুবই শক্ত হতে পারে কিন্তু খুবই নিষ্ফল । অতএব আমি বলে রাখচি এবং সাবধান করে দিচ্চি যে, দেশে ষখন ফিরে যাব পুলিসের যষ্টিধারার শ্রীষণবর্মণেও আমার নাচ গান বন্ধ হবে না । রাশিয়ায় নাট্যমঞ্চে যে কলাসাধনার বিকাশ হয়েচে, সে অসামান্ত। তার মধ্যে নূতন স্বষ্টির সাহস ক্রমাগতই দেপা দিচ্চে, এখনো থামেনি । ওখানকার সমাজবিপ্লবে এই নূতন স্থষ্টিরই অসমসাহস কাজ করেচে। এরা সমাজে রাষ্ট্রে কলাতত্ত্বে কোথাও নূতনকে ভয় করেনি । এদের যে পুরাতন ধৰ্ম্মউস্ত্র এবং পুরাতন রাষ্ট্রডম্ব বহুশতাব্দী ধরে এদের বুদ্ধিকে অভিভূত এবং প্রাণশক্তিকে নিঃশেষপ্রায়