পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইংলণ্ড ও বর্তমান ভারতীয় আন্দোলন ঐসুধীর সেন, বি-এ প্রায় এক বৎসর পূর্ণ হইতে চলিল নিখিল ভারতীয় কংগ্রেস অহিংস আইনলঙ্ঘন নীতি অবলম্বন করিয়া সারা ভারতবর্ষে এক তুমুল আন্দোলনের স্বষ্টি করিয়াছে। স্বাধীনতা-অর্জনের যে বিরাট প্রচেষ্ট সমগ্র ভারতবর্ষকে বিক্ষুব্ধ করিয়া তুলিয়াছে, পশ্চিমেও যে তাহ কথঞ্চিৎ চাঞ্চল্যের সঞ্চার করে নাই, তাহা নহে। কিন্তু ভারতবর্ষ হইতে হাজার হাজার মাইল দূরে আসিতে আসিতে সে মহাতরঙ্গ তাহার দুৰ্দ্দম বেগের অনেকখানিটাই হারাইয় ফেলে। ইহার উপর দূরত্ব ভিন্ন তাহার পথে অন্য বাধাও আছে। হল্যাণ্ড যেমন বাধ বাধিয়া সমুদ্রকে ঠেকাইয়া রাখিয়াছে, তেমনি পশ্চিমের সংবাদপত্রসমূহও কৃত্রিম বাধা সৃষ্টি করিয়া ভারতীয় আন্দোলনের প্রবল গতিকে প্রাণপণ বলে প্রতিহত করিবার চেষ্টা করিতেছে। দূরত্বের ও সংবাদপত্রের এই দুল্লঙ্ঘ্য বাধাকে অতিক্রম করিয়া সে ঢেউ যখন পশ্চিমের দ্বারদেশে আসিয়া আঘাত করে, তখন তাহার গর্জন যে ক্ষণ এবং গতি যে মন্দীভূত হইয়া যাইবে, তাহাতে বিচিত্র কি ! বরং বিস্ময়ের বিষয় এই যে, সে ঢেউ এতদূর পর্য্যন্ত আসিয়া এদেশকেও অল্প-বিস্তর চঞ্চল করিয়া তুলিয়াছে। ইহা হইতেই এই আন্দোলনের যথার্থ আকার ও গুরুত্ব অচুমান করিয়া লইতে পারি। ভারতবর্ষের এই মহা-আন্দোলনের কতটুকু পশ্চিম জানিতে পাবে এবং সে-সম্বন্ধে পশ্চিম কি ভাবে, সে বিষয়ে বাংলার পাঠর-পাঠিকার কৌতুহল থাকা একান্ত স্বাভাবিক। আমি আজ কিয়ং পরিমাণে সেই কৌতুহল নিবৃত্তি করিবার প্রয়াস পাইব । টেলিফোন, টেলিগ্রাম, ওয়ারলেস ইত্যাদির কল্যাণে এ যুগ সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার যেরূপ সহজ হইয়া দাড়াইয়াছে, ইহা হইতে অনেকেই হয়ত অনুমান করিবেন যে, ভারতবর্ষ সম্বন্ধে কোনো কথাই আজ পশ্চিমের অবিদিত নাই। কিন্তু ভারতবর্ষ সম্বন্ধে পশ্চিমের প্রচণ্ড অজ্ঞতাই পশ্চিমপ্রবাসী ভারতবাসীর সব চেয়ে বড় বিস্ময়ের বিষয় । এ অঞ্জত হয়ত আর এক শতাব্দী পূৰ্ব্বে, এমন কি পঞ্চাশ বৎসর পূর্বেও নিতান্ত স্বাভাবিক বলিয়া মনে হইত এবং দূরত্বকেই মানুষ ইহার একমাত্র কারণ বলিয়া স্বভাবতই ধরিয়া লইত। কিন্তু বিজ্ঞান সে দূরত্বকে আজ প্রায় লোপ করিয়া দিয়াছে ! এক দেশের ঘটনা আজ সে দেশে ঘটিবার সঙ্গে সঙ্গেই, এমন কি সে দেশেরই লোকের শ্রুতিগোচর হইবার পূৰ্ব্বেই, হাজার হাজার মাইল দূরে প্রেরিত হয় । ভারতবর্ষ সম্বন্ধে পশ্চিমের এই অজ্ঞতার কারণ তবে কি ? তাহার প্রধান কারণ, বহির্জগতের সঙ্গে ভারতবর্ষের যে যে দ্বার দিয়া ভাববিনিময়ের সম্ভাবনা রহিয়াছে, তাহার : প্রত্যেকটি দ্বারেই এক একটি সশস্ত্র পাশ্চাত্য প্রহরী চক্ষু আরক্ত করিয়া দণ্ডায়মান ! খিড়কীর দরজাটুকুও আজ আর অরক্ষিত নাই ! বঃির্জগতের কৌতুহলাক্রান্ত উৎসুক দৃষ্টি যতই সেখানে গিয়া পড়ুক না কেন, অন্ত:পুরনিবন্ধ এই কন্যার সত্যিকার মনোভাব জানিবার উপায় তাহার ত নাই। প্রহরীদের কাছে আসিয়া পশ্চিম যখনই কন্যার কুশলবার্তা জিজ্ঞাসা করে, তখনই উত্তর পায়— কন্যা মুখনিদ্রায় বিভোর ! তবে এখানকার সব সংবাদপত্রের মধ্যেই ভারতবধ সম্বন্ধে এক দিক দিয়া একটি বিশেষ ঐক্য আছে । ভারতবর্ষের বর্তমান অশাস্তির কারণ অসংশয়ে নির্ণয় করিতে সমর্থ হইয়াছে মনে করিয়া এখানকার সংবাদপত্রসমূহ উদ্ধত স্পৰ্দ্ধার সহিত দিনের পর দিন যাহা ঘোষণা করে তাহা একটা নিৰ্ম্মম পরিহাস বলিয়াই মনে হয়। তাহাদে