পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ট্যারা স্ত্রীরবীন্দ্রনাথ মৈত্র বছর ষোল আগেকার কথা । তেতাল্লিশ নম্বরের কলেজ মেস। সারারাত্রি অভিনয়দর্শনে রক্তচক্ষু রামহরিবাবু সকালবেলায় ডাকের চিঠিখান খুলিয়াই চীৎকার করিয়া উঠিলেন, “হুরূরে!” পাশের ঘরে দিগম্বরবাবু মোক্তারী পরীক্ষার নোট মুখস্থ করিতেছিলেন, ছুটিয়া আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি ব্যাপার }" "খবর হে, সুখবর ! গৃহিণী—” "খাওয়াও তাহ’লে ! ছেলে হ’য়েছে ?” রামহরিবাবু আর একবার চীৎকার করিয়া উঠিলেন, “পুত্র নয় হে, কন্যা। তবু খাওয়াব, ছেলেমেয়ের কোনো অফ’ং নেই আমার কাছে। মিছির !" মিছির-ঠাকুর আসিল এবং হুকুম পাইয়া মোড়ের সন্দেশের দোকানে চলিয়া গেল । আধঘণ্টার পর মেসমৃদ্ধ লোক নবজাতার কল্যাণকামনা করিয়৷ পান চিবাইতে চিবাইতে নিজ নিজ কামরায় প্রস্থান করিলেন। রামহরিবাবু তথন চিঠিখান একবার ভাল করিয়া পড়িয়া দেখিলেন-- “মেয়ের রং ফর্সা, তবে একটু ট্যারা ।” রামহরিবাবু শামীমূদীর গলির স্ত্রীস্বাধীনতা প্রচারিণী সভার সদস্য ছিলেন—এ সংবাদে দমিলেন না—হাসিয়া কহিলেন, "তা হোক! গুণে সব ঢাকবে। লেখাপড়া গানবাজনাতে এমন তালিম ক’রে তুলুব মেয়েকে-” ভাবিতে ভাবিতে উঠিয়া বৌবাজারের একটি বাদ্যযন্ত্রের দোকানে ছোট সেতারের কত দাম পড়িতে পারে মেটাস্বদ্ধ তখনই জানিয়া আসিলেন । R স্ত্রীশিক্ষা প্রচার ছাড়া আর একটি লক্ষ্য রামহরিবাবুর ছিল, সেটা নিতান্ত ব্যক্তিগত । আইন পাস করিয়া হাইকোর্টে ওকালতী করিবেন। কিন্তু দৈববিড়ম্বনায় বার-তিনেক বি-এ ফেল করিয়া স্বগ্রাম তেঁতুলিয়া হাইস্কুলে থার্ডমাষ্টারীতে ভৰ্ত্তি হইলেন । মাসিক বেতন ত্রিশ টাকার সিকিপরিমাণ কন্যার শিক্ষার জন্য বায় বরাদ করিলেন। গৃহিণী আপত্তি করিলেন, কিন্তু রামহরিবাবুকে আদর্শভ্রষ্ট করিতে পারিলেন না। প্রথম প্রথম রঙীন ছবির বই, ক্রমে ক্রমে ছবি আঁকিবার সরঞ্জাম ও একটি ছোট সেতার সমস্তই কন্যাকে যোগাইলেন। গৃহিণী রুখিয়া কহিলেন, “ও ছাইপাশগুলো দিয়ে হবে কি ? তার চেয়ে—” রামহরিবাবু কহিলেন, “সে ভাবনা আমার আছে।” গৃহিণী অতঃপর আর কিছু কহিলেন না। বারো বৎসর বয়সের বীণা সেতার বাঞ্জায় ; রামহরিবাবু চক্ষু মুদিয়া শোনেন, আর গৃহিণী রন্ধনশালায় ডাল সিদ্ধ করিতে বসিয়া কস্থার ভবিষ্যৎ ভাবিয়া আতঙ্কিত হইতে থাকেন। ভাবিতে ভাবিতেই বীণার বয়স তেরোর কোটায় গিয়া পৌছিল। গৃহিণী আর স্থির থাকিতে পারিলেন না ; তাহার মাতামহের শ্বশুর-বংশ পুরুষানুক্রমে পণ্ডিত, সে ছোয়াচ গৃহিণীরও লাগিয়াছিল ; একদিন স্পষ্টই রামহরিবাবুকে কহিলেন, “এইবার মেয়ে পার করবার ব্যবস্থা কর । আমি বেঁচে থাকতে আমার ৰাপঠাকুর্দা নরকে পচরে ।” রামহরিবাৰু মৃদ্ধ কহিলেন, “সে হবে।” কিন্তু সে বিযয় তাহার বিন্দুমাত্র ব্যস্ততা দেখা গেল না। গৃহিণী ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। রামহরিবাবুকে অনেক কহিয় দিনকয়েকের ছুটি লওয়াইয়ী পাত্রের সন্ধানে পাঠাইলেন। রামহরিবাবু সতেরো জায়গা ঘুরিয়া বাড়ী আদিয়া পারমণ্ডলীর নাম-ধাম গাই-গোত্র ও সেই সঙ্গে কঙ্কা গ্রহণের পারিশ্রমিকের অন্ধ সমস্ত এক তালিকাভূক্ত করিয়া গৃহিণীর সম্মুখে ফেলিয়া দিয়া কছিলেন, “স্থ হয় কর।” , &: · ·. - *** :