পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8●● প্রবাসী-মাঘ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড বাজনা শুনিয়। স্বকুমার অবাক হইয়া গেল। জিজ্ঞাসা করিল, “বাজনা কে শিখাল বীণা ?” বীণা মুখ না তুলিয়াই বলিল, “নিজেই শিখেছি।” রামহরিবাবু কহিলেন, “মাষ্টার রাখবার পয়সা কোথায় বাবা ? ত। নইলে ইচ্ছা ছিল মেয়েটাকে ইংরেজী আর সংস্কৃতের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের সব চলতি ভাষা একটু একটু শেখাই। তা জান তো উত্থায় হৃদি লীয়স্তে-” স্বকুমার কহিল, ‘আমি বাজনা শুনে অবাক্ হয়ে গিয়েছি মাষ্টার-মশাই! ভাবছি শুধু শিক্ষার মুযোগ থাকূলে বীণা কি হতে পারত।” কথা শুনিয়া বীণা তাহার পড়ার ঘরে ঢুকিল । স্বকুমার একবার অপাঙ্গে তরুণীর দিকে চাহিয়া হতভাগ্য দেশের মুক্তির জন্য বীণার ন্যায় নারীর সাহায্য কতখানি প্রয়োজন তাহা পল্লবিত ভাষায় উচ্ছ্বাসের সহিত কহিয়া গেল। রামহরিবাৰু শুনিয়া স্বকুমারের মাথায় হাত দিয়া আশীৰ্ব্বাদ করিয়া কহিলেন, “দীর্ঘজীবী হও বাবা, দেশের মুখ উজ্জল কর।” পড়ার ঘরে দরজার আড়ালে বীণা দাড়াইয়া ছিল ; মুকুমারের কথাগুলিতে সে যেন এক নূতন জগতের আহবান শুনিল, তাহার সমস্ত মন আনন্দে ও ভরসায় সজীব হইয়া উঠিল । বীণাকে দেশ-বিদেশের নারী-প্রগতির কাহিনী শুনাইতে রামহরিবাবু মুকুমারকে বলিয়াছিলেন । মুকুমার প্রত্যহ নিয়মিত আসিত এবং তাহার সমিতির উদ্বেশু নারী ও পুরুষের অধিকার প্রভৃতি জটিল বিষয়ের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম আলোচনা করিয়া বীণার অন্তর-লক্ষ্মীকে জাগাইবার চেষ্টা করিত। বীণা কতক বুঝিত, কতক বুঝিত না ; যে-কথা বুঝিত না তাহাও তাহার ভাল লাগিত। সুকুমারের কথা শোনা নেশার মত ক্রমে ক্রমে তাহাকে পাইয়া বসিল । সেদিন কি কারণে স্বকুমারের আসিতে বিলম্ব হইয়া গিয়াছিল, বীণার কিছু ভাল লাগিতেছিল না। এমন সময় স্বকুমার আসিয়া উপস্থিত হইল। বীণা জিজ্ঞাস করিল, “আজ এত দেরি হ’ল কেন ?” কথার স্বরে অভিমান প্রচ্ছন্ন ছিল, মুকুমার বুঝিল। বীণার চিবুক ধরিয়া কহিল, “আমি না আসলে কষ্ট হয় তোমার বীণা ?” বীণা মুখ না তুলিয়াই বলিল, “হ্য।” হুকুমার মুছ হাসিল, তাহার পর বীণার দুই কাধের ওপর হাত রাখিয়া কহিল, “আর আমি দেরি ক’রে আস্ব না বীণা ; কিন্তু তোমাকে আমার একটা কথা রাখতে হবে, বল রাখবে }” . বীণা কহিল, “রাখব। কি কথা ?” মুকুমার কহিল, “আমাকে ‘তুমি' বলে ডাক্তে হবে, আপনি' বলতে পারবে ন৷ ” বীণা সঙ্কুচিত হইয়া কহিল, “সে অামি পারব না, আমার লজ্জা করবে।” কিন্তু বীণার লজ্জা বেশীক্ষণ রহিল না, স্বকুমার সেইদিনই বীণাকে ‘তুমি বলাইয়। ছাড়িল । সেদিন বীণার মনে হইল স্বকুমার বড় আপনার হইয়া গিয়াছে। পড়ার ঘরে বসিয়া স্বকুমারের মূৰ্ত্তি মনে মনে চিন্তা করিয়া ক্রমাগতই বীণা তাহাকে ‘তুমি' বলিয়া ডাকিতে লাগিল ৷ ভাবিতে ভাবিতে কখন বীণ ঘুমাইয় পড়িল, স্বপ্ন দেখিল স্বকুমার তাহার হাত ধরিয়৷ এক নূতন দেশে লইয়া চলিয়াছে। ক্রমে স্বকুমারের ছুটি ফুরাইল, বিদায় লইতে আসিয়। দেখিল বীণা কাদিতেছে। “কাদছ কেন বীণ ?” স্বকুমার জিজ্ঞাসা করিল। “তুমি চলে যাচ্ছ যে ” বীণা অতি মৃদ্ধশ্বরে ককিল । “সামনের ছুটিতেই আবার আসব বীণ, তুমি কেঁদে না” বলিয়া সুকুমার রুমাল বাহির করিয়া বীণার চোখের জল মুছাইয়া দিল । বীণা কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া স্বকুমারের ডান হাতখানি দুই হাতে মুঠ করিয়া ধরিয়া কহিল, “আমাকে ঘৃণা করবে না বল ।” স্বকুমার আশ্চৰ্য্য হইয়া বলিল, “স্কৃণা কেন তোমাকে করব বীণা ? কি করেছ তুমি ?” বীণা কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া মুখ নীচু করিয়াই কহিল, “আমি যে ট্যায়, আমাকে-” বলিয়াই বীণা আবার কাদিয়া ফেলিল । স্বকুমারের ওষ্ঠপ্রান্তে কৌতুকের মৃদু হাস্য থেলিয়া গেল, পর মুহূর্তেই বীণার চিবুক ধরিয়া তুলিয়া সে কহিল, “তুমি ট্যার বলেই তে৷ আরও বেশী করে তোমায় ভাল লাগে বীণা ’ কথা : শুনিয়া বীণার মুখে হাসি দেখা দিল । সে উঠিয় মুকুমারকে প্রণাম করিল। - :