পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৬২ -ാ-് ۔------ "সে খবর এখন শুনো না। চিঠিটা দাও দেখি, চটুপটু একটা জবাব লিখে দিই ।” "শেষটা কি হয় একবার জানিয়ে ভাই ।” বলিয়৷ চিঠি রাখিয়া মূপেন স্ট্রকুমারের পিঠ চাপড়াইয়া বাহির হইয়া গেল । সুকুমারকে চিঠি পাঠাইবার পর হইতে কেবলই বীণার মনে হইয়াছে যাহা লিখিবার ছিল তাহা লেখা হয় নাই । নিজের এই ক্রটিতে ক্রমাগতই সে লজ্জিত হইতেছিল। ভাবিতেছিল, সুকুমার হয়ত রাগ করিবে এবং চিঠির জবাবই দিবে না, কিন্তু যথারীতি জবাব আসিল । ঘরের দ্বার বন্ধ করিয়া বার-বার বীণা চিঠিখান পড়িল । উৎসবের বঁাশীর স্বরের মত চিঠির কথাগুলি তাহার কানের মধ্যে সমস্ত দিন ঝঙ্কার দিতে লাগিল । চিঠিতে অনেক কথাই ছিল ; প্রতিদিন সন্ধ্যাকালে স্বকুমারের মন উদাস হইয়া যায় ; পড়িতে বসিলে একজনের স্নিগ্ধ আঁখি বহির পাতায় ভাসিয় ওঠে, তাহারই হাতের সেলাই রুমালখানা বুক পকেটে নীরব গুঞ্জরণে গান গাহিতে থাকে। স্বকুমারের এই প্রকার মারাত্মক অবস্থার বর্ণনায় চিঠিখানার আদ্যোপাস্ত পূর্ণ ছিল, শেষের দিকে গুটিকয়েক উপদেশও ছিল । সন্ধ্যায় চিঠিখানা বাক্সে তুলিয়া রাখিবার পূৰ্ব্বে তাহার উপরে মাথা রাখিয়া বীণা আপন-মনে বলিল, "আশীৰ্ব্বাদ কর, আমি যেন তোমার উপযুক্ত হতে পারি।” রামহরিবাবুর সেদিনকার কথা গৃহিণীর মনে ছিল ; এ পর্ষ্যস্ত কন্যার বিবাহ সম্বন্ধে কোনও আলোচনা তিনি করেন নাই। কাজেই স্বামীর তাত্ৰকূট সেবন ও কম্ভার সঙ্গীত-চর্চা একপ্রকার অব্যাহতই চলিতেছিল, কিন্তু সহসা সেদিন তিনি আবার সেই প্রসঙ্গ উপস্থিত করিলেন । সুকুমার বীণার নিকট চিঠি লেখে, রামহরিবাবু তাহা জানিতেন। কহিলেন, "কুমার ঠিক করবে বলে গেছে । দেখ তো~—” গৃহিণী অবিশ্বাসের স্বরে কছিলেন,"র্হ্যা, তার আবার সেকথা মনে আছে! বড়মানূষের ছেলে—গরীবের কথা ভাবতে দায় পড়েছে তার।” বীণা দরজায় আড়ালে প্রবাসী—মাধ, ృJులిడి [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড দাড়াইয় ছিল, মায়ের কথা শুনিয়া মৃদু হাসিল । রামহরিবাবু চশমা জোড়া মুছিতে মুছিতে কহিলেন, “দেখ তো আর মাসখানেক, সে তে সামনের ছুটিতেই আসছে, বোঝা-পড়া তার সঙ্গেই কোরে৷ ” বলিয়াই পরম নিশ্চিন্ত মনে পুনরায় তামাক টানিতে আরম্ভ করিলেন। সুকুমার পাত্র স্থির করিয়া দিবে এ সম্বন্ধে গৃহিণীর সন্দেহমাত্র ছিল না, সে শীঘ্রই আসিতেছে শুনিয়া তিনি খুশী হইয়া চলিয়া গেলেন । বড়দিনের ছুটিতে স্বকুমারের আসিবার কথা । পেটেণ্ট ঔষধের বিজ্ঞাপন সম্বলিত একখানি পকেট পঞ্জিকা জোগাড় করিয়া বীণা-প্রত্যহ বড়দিনের তারিখ দেখিত । দিনগুলি অতি মন্থর গতিতে কাটিতেছিল । ক্রমে বড়দিন আসিল । সেইসঙ্গে সুকুমার আসিল । সন্ধ্যায় মুকুমারের সহিত বীণার সাক্ষাৎ হইল। মুকুমারের বুকে মুখ রাখিয়া বীণা কহিল, “তুমি বাবাকে বোলে, আমি কলকাতায় পড়ব । তোমাকে না দেখে থাকতে পারব না ।” স্বকুমার কহিল, “তোমার বাবার যদি মত না হয় ?” বীণা মুখ তুলিয়া কহিল, “আমাকে জোর ক’রে নিয়ে যেয়ে ।” মুকুমার মুখ ফিরাইয় হাসিয়া কহিল, আগে ইস্কুল ঠিক করি, তার পর জিজ্ঞেস করব।” গৃহিণী প্রত্যহুই সঙ্কল্প করেন, বীণার পাত্রের কথ। সুকুমারকে জিজ্ঞাসা করিবেন কিন্তু অবকাশ হয় ন। বিশেষ রামহরিবাবু পত্নীকে বলিয়াছিলেন, স্বকুমার নিজে বীণার বিবাহের প্রসঙ্গ না তুলিলে তিনি যেন স্বকুমারকে কিছু জিজ্ঞাসা না করেন। দিনকয়েক গৃহিণী স্বামীর আদেশ অতি কষ্টে পালন করিয়াছিলেন কিন্তু কলিকাতা যাত্রার পূর্বদিন যখন স্কুকুমার তাহার নিকট হইতে বিদায় লইতে গেল, গৃহিণীর আর ধৈর্য্য রাহুল না। স্বকুমার কবে ফিরিবে সেকথা জিজ্ঞাসা করিয়াই তিনি বীণার বিবাহের প্রসঙ্গ পাড়িলেন। স্বকুমার কহিল, “তার এত তাড়াতাড়ি কিসের মালী-মা ! লেখাপড়া শিখুক।” গৃহিণী কহিলেন,

  • আচ্ছ।