পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ፃ\9 প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩৭ l అest ভাগ, ২য় খণ্ড কয়েকজন উড়িষ্যায় গিয়ে পাঠান-সর্দার কতলু থার সঙ্গে যোগ দিল ॥৭ যেদিন বৃদ্ধ শাজাহান রোগশয্যায় মরণাপন্ন এই ংবাদে দিল্লীর সিংহাসনের জন্ত চার ভাইয়ের মধ্যে যুদ্ধ লেগে গেল, সেদিন শুজা ছিলেন বাংলার শাসনকৰ্ত্তারূপে রাজমহলে । আওরংজীব ও মুরাদ এসে পৌছবার পূৰ্ব্বেই দারাকে হারিয়ে দিল্লী সিংহাসন অধিকার করতে হবে, তাই শুজা যা সৈন্ত ও অস্ত্র পেলেন তাই নিয়েই চললেন দিল্লীর অভিমুখে । পথে এলাহাবাদের কাছে স্থলেমান পথরোধ করে দাড়াল, যুদ্ধ হ’ল—শুজা পরাজিত হয়ে সৈন্তদের নিয়ে পালিয়ে এসে সেদিন এই মুঙ্গের দুর্গে ই আশ্রয় পেয়েছিলেন। পিছনে শত্রু ; দুর্গরক্ষার জন্য তখনই তিনদিকে প্রশস্ত পরিখা খনন করতে আদেশ দেওয়া হ’ল। মাঝে মাঝে ৫০ হাত অন্তর একটি ক’রে বুরুজ নিম্মাণ ক’রে দুর্গকে আরও দৃঢ় করবার ব্যবস্থা হ’ল । মতি মসজিদ, দেওয়ান-ই-আম, প্রভৃতি দিল্লীর সমৃদ্ধি, দিল্লীর বিলাসিতার সঙ্গে পরিচিত শুজা পূৰ্ব্বেই সম্রাটপুত্রের উপযোগী ক’রে দুর্গপ্রাসাদ নিৰ্ম্মাণ করেছিলেন, এখন আরও দুর্ভেদ্য ক’রে এইখানেই রাজধানী করলেন । স্থলেমান মুঙ্গের দুর্গ অবরোধ করে বসলেন, কিন্তু পিতার বিপদের সংবাদে র্তাকে ফিরে যেতে হ’ল । স্বজ সেই অবসরে আবার সৈন্য, রসদ ও অর্থ সংগ্রহে ব্যাপৃত হলেন । সংবাদ এল দারার পতন হয়েছে । আওরংজীব ও মুরাদের সৈন্তের অধিকারে দিল্লী ও আগরা, পিতা বন্দী, পিতার ধনরত্ব র্তাদের হাতে। তারপর সংবাদ পৌছল আওরংজীব বাংলায় আসবার জন্য প্রস্তুত, শুজা আর নিশ্চিস্ত থাকতে পারলেন না। আবার মুঙ্গের দুর্গ থেকে শুজার সৈন্য অস্ত্রশস্ত্র রসদ নিয়ে বা’র হ’ল, কাশীর কাছেই আওরংজীবের সৈন্য সম্মুখে পড়ল। শুজার এবারকার আয়োজনের সংবাদে আওরংজীব বিচলিত হলেন এবং পৌরুষের উপর নির্ভর না করে কূটনীতি অবলম্বন করলেন । শুজার সৈন্যবল, শুজার সাহস, শুজার সৈন্যচালনার কৌশল বৃথা হ’ল না, বিজয়লক্ষ্মী i Stuart's History of Bengal. শুঙ্গার প্রতি প্রসন্ন হলেন । আওরংজীবের সৈন্য ছত্রভঙ্গ হ’তে লাগল, আওরংজীবের পরাজয়বাৰ্ত্তা নিয়ে দিকে দিকে লোক চলে গেল, তখন শুজা হাতীর পিঠে বসে সৈন্ত পরিচালনা করছিলেন । শুজার প্রিয় অমুচর আলিবন্দী খ। কোথা হ’তে ছুটে এক ঘোড়া এনে শ্রাস্ত শুজাকে নামৃতে বললেন । সরল অসন্দিগ্ধচিত্ত শুজা বিশ্বাসঘাতকের চক্রাস্ত বুঝতে পারলেন না, হাতীর পিঠ থেকে নামবার সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যদের মধ্যে প্রচার করা হ’ল স্বজা নিহত ,* অমনি শুজার সৈন্য পালাতে আরম্ভ করল । দ্বারে উপস্থিত বিজয়লক্ষ্মী সামান্য ভুলের জন্য অপরের ঘরে গিয়ে উঠলেন । হতাশ হৃদয়ে শুজা যখন মুঙ্গের দুর্গে ফিরে এলেন, তখন তার সঙ্গে এক-চতুর্থাংশ সৈন্তও নেই, তখনও শুজা সাহস-সম্পদহীন নন। আওরংজীবের সৈন্য শুজার পশ্চাদ্ধাবন ক’রে এসে পথ পেল ন; , পাশ্ববৰ্ত্তী স্থানের রাজারা তাদের রাজ্যের মধ্য দিয়ে সৈন্য নিয়ে যেতে দিতে সম্মত নন। মুঙ্গের থেকে পাচ ক্রোশ দূরে সৈন্যশিবির স্থাপন করতে হ’ল। কিন্তু কৌশল সেনাপতি মীরজুমলা নিশ্চেষ্ট রইলেন না । মীরজুমলার ভয়ে ও সম্রাটের অনুগ্রহপ্রাপ্তির লোভে খড়গপুরের রাজার আপত্তি আর বেশী দিন রইল না । ৭ যেদিন সুজা শুনলেন যে, একদিকে মহম্মদ ও অপর দিকে মীরজুমলা খড়গপুরের মধ্য দিয়ে এসে রাজমহল দিয়ে আক্রমণ করতে আসছেন, তখন বুঝলেন যে আর কোনো আশা নেই। আওরংজীবের হাতে আপনার ও পুত্রকন্যার নির্যাতনের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠতে শিউরে উঠলেন ও পরদিন শাজাহানের পুত্র শুজা সমস্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ধুলোর সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে স্ত্রী পুত্র কন্যাদের নিয়ে সাধের মুঙ্গের চিরদিনের জন্য ত্যাগ করলেন। সেই বিদায়-দুপ্তের করুণ স্মৃতি আজও ভগ্ন প্রাসাদ বহন করে রয়েছে । আর একদিন ঠিক এমনি করুণ বিদায়ের দৃষ্ট এইখানে অভিনীত হয়েছে। বাংলার শেষ নবাব মীর কাসিম ইংরেজ গভর্ণর ও কলিকাতা কাউন্সিলের সভানে

  • Manucci's Storia do Mogor, Vol. I. * Sarkar's Aurangzib, Vol. II.