পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] মহাপ্রভু ১৫১৫ ঈশাদের বিজয় দশমীর দিন বৃন্দাবন যাত্রা করিয়াছিলেন । মাঘ মাস আরম্ভ হইলে | জানুয়ারি ১৫১৬ ] বুন্দাবন ত্যাগ করিয়া বরাহক্ষেত্রে গিয়াছিলেন । মাঘ মাসের দশদিন থাকিতে প্রয়াগে আসিয়া ত্রিবেণী স্বান করিয়াছিলেন । অতএব জানুয়ারি [ ১৫১৬ ] মাসের শেষে কোনও স্থানে পাঠান রাজপুত্রের সহিত তাহার সাক্ষাৎ হইয়াছিল। সিকদের লোদীর রাজত্বকালে প্রধান প্রধান প্রাদেশিক শাসনকৰ্ত্তার তাহার জ্ঞাতি লোদী-বংশীয় ছিলেন। অবস্থাবিশেষে অতি তরুণবয়স্ক অথবা শিশুরা ও শাসনকৰ্ত্তার পদে নিযুক্ত হইত, রাজকাযা তাঙ্গদের প্রতিনিধি নায়েব অথবা ‘অতলীক’ বা শিক্ষকরা করিত । র্তাহার সময়ে লক্ষ্মেীর, অযোধ্যার শাসনকৰ্ত্ত ছিলেন বালক আহমদ থা-বিন মোবারক খ লোদী। গুপ্ত সংবাদদাতার মুখে সম্রাট সংবাদ পাইলেন যে, আহমদ খা আপনার কতক গুলি অতুচরসহ ইসলাম ছাড়িয়া হিন্দুধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াছে। সম্রাট কুপিত হইয়া আহমদ থার ভ্রাতাকে আজ্ঞাপত্র লিখিলেন যে, যদি কুমার আহমদ খা তাহার কুকস্ট্রের জন্য অনুতপ্ত হইয়! আবার সত্যধৰ্ম্ম গ্রহণ না করে, তবে তাহাকে অনুচরসহ বন্দী করিয়া আমার কাছে পাঠাইবে, আমি স্বয়ং শাস্তি দিব । - ঐতিহাসিক ফেরেশতা এই সংবাদটি সিকন্দর লোদীর সময়ের প্রবাদ শুনিয়া ১৫৯০ ঈশাদের কাছাকাছি পুস্তকে লিখিয়া ইহার সত্যতা সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন । তিনি লিখিয়াছেন—প্রবাদ এইরূপ বটে, কিন্তু কোন হিন্দু সম্প্রদায়ই মুসলমানকে হিন্দু বলিয়া স্বীকার করে না । তিনি এ সংবাদ কোনও পুস্তক হইতে সংগ্রহ করেন নাই। ১৫০৮ ঈশান্ধের সংবাদ মধ্যে প্রবাদ রূপে লিখিয়াছেন । এরূপ প্রবাদে সময়ের ঠিক থাকে না । প্রয়াগ ও কাশীতে অনেকে বলে যে, সিকন্দর লোদী রামনাম করিবার অপরাধে সাধু কবীরকে কাশী হইতে তাড়াইয়৷ দিয়াছিলেন। কবীর মগহর নামক স্থানে গিয়া বাস করিয়াছিলেন। কিন্তু কোন সনে তাড়াইয়াছিলেন • সে-বিষয়ে আজকাল গবেষকরাও একমত নহেন । এই গল্প অর্থাং পাঠান বৈষ্ণব—াজপুত্র বিজুলী খাঁ 8ఏt সম্বন্ধে এক “ঐতিহাসিক গল্পে” নিম্নলিখিত বিবরণ পাইয়াছি, কতদূর সত্য বলিতে পারি না। আহমদ খার সহচর ও অন্য রাজকৰ্ম্মচারীরা বেশ জানিতেন ঘে, সিকন্দর এরূপ অপরাধ ক্ষমা করিবার পাত্র ছিলেন না ও তাহার স্বয়ং শাস্তি দিবার অর্থ শিরশ্ছেদন । সকলে মিলিয়৷ নানাপ্রকার চেষ্টা করিয়াও যখন কুমারের মত পরিবর্তন করাইতে পারিলেন না, সিকন্দরের আজ্ঞা পরিবৰ্ত্তনের আর কোন আশাও যখন রহিল না, তখন একাস্ত বাধ্য হইয়া সকল অনুচরসহ কুমারকে বন্দীরূপে রক্ষিবেষ্টিত করিয়া আগ্রান্তে পাঠাইয়া দিলেন । র্তাহারাও পথে যতদূর সম্ভব দেরি করিতে করিতে চলিতে লাগিলেন। আগ্রা পৌছিবার পূৰ্ব্বেই রক্ষীরা সংবাদ পাইলেন যে, সিকন্দর হঠাৎ পীড়িত হইয়া মৃত্যুমুখে পতিত হইয়াছেন [ ২ ডিসেম্বর ১৫১৭ ] ; ও তাহার পুত্র ইব্রাহীম লোদী সিংহাসন লাভ করিয়াই ঘোষণা করিয়া দিয়াছেন যে, প্রজারা আপনার ইচ্ছামত ধৰ্ম্ম পালন করিতে পারে ; প্রজাদের ধৰ্ম্মবিশ্বাসে রাজক্ষমতা হস্তক্ষেপ করিবে না । এই সংবাদ পাইয়া কুমারের রক্ষীরা তাহাকে ছাড়িয়া দিতে বাধ হইল। অবশু এ বর্ণনাতে ইহা নিশ্চয়রূপে জান গেল না যে, * আহমদ খাঁ লোদী ও বিজলী খ। একই ব্যক্তি কি না, কিন্তু হওয়াও অসম্ভব নহে । দুই ঘটনাই সিকন্দরের সময়ের, বৈষ্ণবদের কথার সময় বা সন ও মাস নির্দেশ করা সম্ভব, কিন্তু ফেরেশতা-উল্লিখিত প্রবাদের সময় ১৪৮৯হইতে ১৫১৭র মধ্যে। সেকালের ধনবানদের ছেলেরা, যাহারা আট দশ জন অশ্বারোহী সৈনিক লইয়া ভ্রমণ করিত, তাহারা প্রায়ই নবাব, মালিক বা শাহজাদা বলিয়া আপনাদের পরিচয় দিত । দিল্লীর উপকণ্ঠে এখনও লোদী-বংশীয় পাঠানদের বাস আছে । তাহার বেশীর ভাগ সাধারণ শ্রমজীধী । .# এখনও চার শতাব্দী পরে আপনাদের সম্রাট-বংশীয় দি। বলিয়া সম্মান দাবি করে, অতএব চরিতামৃতে রাজপুত্র শব্দ আছে বলিয়া বিজুলী খাকে নিশ্চয়রূপে সম্রাটপুত্র বলা যায় না । o মুসলমান-সমাজে সাধারণতঃ যে-প্রকার নামকরণ করা নিয়ম তাহাতে বিজুলী খাঁ নাম হয় না, সে কথা সত্য,