পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سالا:G প্রবাসী—মাঘ, లరిగి [ లe* ভাগ, ২য় খও | কৰ্ম্মচারীতে ভৰ্ত্তি । দিনমানেও ঘরগুলার মধ্যে ভালো আলো যায় না বলিয়া বেলা চারটা না বাজিতেই ইলেক্‌টিক আলো জলিতেছে। ছোকরা টাইপিষ্ট নৃপেন সস্তপণে পর্দা ঠেলিয়া ম্যানেজারের ঘরে ঢুকিল। ম্যানেজার নকুলেশ্বর শীলের বড় জামাই দেবেন্দ্রবাবু। ভারী কড়া মেজাজের মানুষ । বয়স পঞ্চাশ ছাড়াইয়াছে, দোহারা ধরণের চেহারা । বেশ ফরস, মাথায় টাক। এক কলমের খোচায় লোকের চাকুরি খাইতে এমন পারদর্শী লোক খুব অল্পই দেখা যায়। দেবেন্দ্রবাবু বলিলেন—কি হে নৃপেন ? নৃপেন ভূমিকাস্বরূপ ছুইখানা কি কাগজ টাইপ ছাপা মঞ্জুর করাইবার ছলে র্তাহার টেবিলের উপর রাখিল । দেবেনবাবু একখানা তুলিয়া লইয়া একবার চোখ বুলাইয়৷ বিরক্তির সুরে বলিলেন-আ:,তোমার টাইপিং-এর কাটকুটি এখনও সারলে না!..টাইপ করতে করতে ঘুম আসে না কি ? : ইন্‌কাম্ ট্যাক্সের ফাইলটা নিয়ে এসো দেখি– নৃপেন বাহিরে আসিতেই ক্যাশ ডিপার্টমেন্টের যদুগোপাল ফিস, ফিস, বলিল—কি হ’ল ? নৃপেন কোনো কথার উত্তর ন৷ দিয়া রিং হইতে চাবি বাছিম্বা টেবিলের টানা খুলিয়া ফেলিল-নীচু হইয়৷ খুজিতে খুজিতে একখানা লাল ফিত-বাধা কাগজের ফ্ল্যাট ফাইল টান দিয়া বাহির করিয়া পুনরায় ম্যানেজারের ঘরে ঢুকিল । সহি শেষ হইলে নৃপেন একটু উস্থুস করিয়া কপালের ঘাম মুছিয়া আরক্তমুখে বলিল - আমি— এই—আজ বাড়ী যাব-একটু সকালে, চারটেতে গাড়ী কি না ? সাড়ে তিনটেতে না গেলে— —তুমি এই সেদিন তো বাড়ী গেলে মঙ্গলবারে । রোজ রোজ সকালে ছেড়ে দিতে গেলে আপিস চলে কেমন করে ? এখনও তো একখানা চিঠি টাইপ করনি দেখচি– এ আপিলে শনিবারে সকালে ছুটির নিয়ম নাই । সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার পূৰ্ব্বে কোনোদিন আপিসের ছুটি নাই। কি শনিবার কি অল্পদিন । কোনো পালপাৰ্ব্বণে ছুটি নাই, কেবল পুজার সময় এক সপ্তাহ, তামাপূজায় একদিন ও সরস্বতী পূজায় একদিন । অবশু রবিবারগুলি বাদ । ইহাদের বন্দোবস্ত এইরূপ—চাকরি করিতে হয় কর, নতুবা যাও । চলিয়া । এ ভয়ানক বেকার সমস্তার দিনে কৰ্ম্মচারিগণ নবমীর পাঠার মত কঁাপিতে কঁাপিতে চাণক্যশ্লোকের উপদেশ মত চাকরিকে পুরোভাগে বজায় রাখিয়া ও ছুটিছাট, অপমান অস্ববিধাকে পশ্চাদিকে নিক্ষেপ করিয়৷ কায়ক্লেশে দিন অতিবাহিত করিয়া চলিয়াছেন । নৃপেন কি বলিতে যাইতেছিল—দেবেনবাবু বাধা দিয়া বলিলেন-মল্লিক য়াও চৌধুরীদের মরগেজখান টাইপ করেছিলে ? নৃপেন কঁাদর্কাদ মুখে বলিল-আজ্ঞে, কই ওদের আপিস্ থেকে তো পাঠিয়ে দেয় নি এখনও ? —পাঠিয়ে দেয় নি তো ফোন করনি কেন ? আজ সাতদিন থেকে বলুচি-কচি খোকা তো নও }.যা আমি না দেখবো তাই হবে না ? চাপরাশিকে ডাকিয়৷ বলিলেন—ইংলিশ ক্লার্ককে বোলাও--- নৃপেন বলিল-আজে, অপুৰ্ব্ববাবু চ খেতে গিয়েছেন টিফিনের ঘরে। এই গেলেন—বলিতে বলিতে অপু অভ্র-বসানো কাটাদরজা ঠেলিয়। ঘরে ঢুকিয়া বলিল— আমায় ডেকেচেন ? —ই, দেখুন তো, আপনার ফাইলে মল্লিক য়াও, চৌধুরীদের চিঠিখানা আছে কি না? আর আজই একটা উত্তর ড্রাফট করে ফেলুন গিয়ে— —অরিজিনাল চিঠি রেকর্ডে পাঠানো হয়েচে । ও তো গত বছরের কাৰ্ত্তিক মাসের চিঠি, বিশু বাবুকে দিয়ে রেকর্ড ফেরৎ আনাই— নৃপেনের ছুটির কথা গোলমালে চাপা পড়িয়া গেল এবং সে বেচারী পুনরায় সাহস করিয়া সে-কথা উঠাইতে পারিল মা ! সন্ধ্যার অল্প পূৰ্ব্বে ক্যাশ ও ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের কেরাণীরা বাহির হইল-জষ্ঠ অঙ্ক কেরাণীগণ আরও ঘণ্টাখানেক থাকিবে । অত্যন্ত কম বেতমের কেরাণী বলিয়া কেহই তাহাদের মুখের দিকে চায় না, বা তার নিজেরাও আপত্তি উঠাইতে ভয় পায় ।