পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

...আমরা যে-অগ্নি জ্বালি, কাঠ-তৃণাদি ইন্ধন না পাইলে সে-অগ্নি জ্বলে না। ঔৰ্বাগ্নি নির-ইন্ধন ।... প্রত্ন মানব তিনটি নিসর্গজ অগ্নি অবগত ছিল। একটি ভূমিতে জাত, ভৌম অগ্নি ; একটি অন্তরিক্ষে জাত, বিদ্যুদগ্নি ; অপরটি দিবালোকে শাশ্বত অগ্নি, সুর্য ।...ভৌম অগ্নি দ্বিবিধ। একটি শৈলের সন্ধিপথে নির্গত দাহ বাপ । কখন কখন ভৌতিক কারণে সে বাপ প্রজ্জ্বলিত হইয়া উঠে। সে অগ্নি-স্থানকে জ্বালামুখী বলে। অপরটি আগ্নেয়গিরির অগ্নি। এই অগ্নি যুগান্তকারী কালানল ও সংবতর্ক নামে খাত ছিল । ভূমণ্ডলে অসংখ্য আগ্নেয়গিরি আছে। কিন্তু অধিকাংশ গিরি সমুদের দ্বীপে কিংবা সমুদ্রের নিকটস্থ ভূখণ্ডে বিদ্যমান। এশিয়া মহাদেশে কামাটুকাস্কা হইতে দক্ষিণে জাপান, ফিলিপাইন, সিলিবিস, যব সুমাত্রা হইয়া আন্দামান দ্বীপের প্রায় শত মাইল পূর্বে বঙ্গসাগরে বারেণ ও নরকোণাম দ্বীপ পর্যস্ত আগ্নেয়গিরির সারি চলিয়া আসিয়াছে। আগ্নেয়গিরি হইতে উত্তপ্ত জলীয় বাষ্প দ্রবীভূত অশ্ম ( পাথর , এবং অশ্ম ও ভস্ম, এই ত্রিবিধ দ্রব্য উৎক্ষিপ্ত হয় । জলীয় বাষ্প দূর হইতে ধূমবৎ দেখায়। অশ্ব দ্রবের প্রচণ্ড তাপে গিরিমুখ জ্বালামালী মনে হয়। জলীয় বাষ্প বৃষ্টির আকারে পতিত হয়, এত যে মনে হয় সে গিরি জলপান করিয়াছিল । অত্যঙ্গ গিরি হইতে অশ্মদ্রব উদ্‌গীর্ণ হয় ৷ হইলে তাহ গিরির মুখের চতুর্দিকে শিথর নির্মাণ করে। দ্রব নির্গত না হইলে অশ্ম ও ভস্ম দ্বারাও গিরি নির্মিত হয়। কিন্তু বৃষ্টি বাতায় তাহা দীর্ণ হইয় পড়ে। শিখরও প্রায়ই ছিন্ন-শিধ হয় । কদাচিৎ শিখর হয় না । মধ্যস্থলে বিল অবগু থাকে । গিরিপাশ্বেও বিবর থাকে । বয়সে আগ্নেয়গিরি ত্ৰিবিধ । কতকগুলি মৃত, উদ্‌গারের বয়স গত হইয়াছে ; কতকগুলি সুপ্ত, কখন জাগিয়া উঠিবে বলিতে পারা যায় না ; অপরগুলি জাগ্রত, সর্বদা ধূমায়মান। ঋগ্বেবেদের ঋষিরা ত্ৰিবিধ অগ্নি প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন। স্বর্যাগ্নি সকল দেশেই সুলভ, কিন্তু সকল দেশেই বজ্রপাত হয় না, এবং সকল দেশেই ভৌম অগ্নি বিদ্যমান নাই । পুরাণ-মতে ঋধ ধাতুর অর্থ গতি হইতে ঋষি শব্দ উৎপন্ন। আদ্যকালে ঋষিরা যাযাবর ছিলেন । তখন তাহারা পঞ্চনজ প্রদেশে আসেন নাই । তখন তাহার। স্বদেশে স্বর্গে বাস করিতেন। তাঞ্ছার কাঠে কাঠে ঘষিয়া অগ্নি উৎপাদন করিতে শিখিয়াছিলেন । শিলায় শিলা বেগে নিক্ষিপ্ত হইলে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হয়, কিন্তু কাঠের অরণি-জাত অগ্নি অক্লেশে শুদ্ধ তৃণে সংক্রামিত করিতে পারা যায়। বোধ হয় এই হেতু তাইারা অগ্নি উৎপাদনের এই উপায় গ্রহণ করিয়াছিলেন । তাইশরা জাত অগ্নিকে কুমার বলিতেন । অগ্নি বিনা অন্ন পীক হয় না। সে অগ্নির যে নানা বিশেষণ থাকিবে তাহাতে আশ্চর্য নাই ৷ শীতকালে অগ্নি-সেবন সুখকর ; রাত্রিকালে বুকাদি হিংশ্র-পশু হইতে অঙ্গ-মেঘ-গবাদি রক্ষা করিতেও অগ্নি চাই। অতএব অগ্নিষ্ট পরমদেব ; তিনি ত্রিধ মূর্তিতে ভূমিতে, অস্তরিক্ষে ও আকাশে বিরাঞ্জিত । ఫె~) చి ঔর্বাগ্নি বভৌমাগ্নি অবস্ত বিস্ময়াবহ। পুরাণে ইহার উৎপত্তির ব্যাখ্যা আছে । হরিবংশের দুই অধ্যায়ে দুই উপাখ্যান আছে । ৪৫ অধ্যায়ে এক উপাখ্যান আছে। এটি মৎস্ত পুরাণে অবিকল আছে। উপাখ্যানটি এই—সত্য যুগে বৃত্ৰাসুর বধের পর দেবাম্বরে তারকাময় সংগ্রাম হইয়াছিল। অস্বরদিগের নাম দানবও ছিল । দানবের মায়াযুদ্ধে নিপুণ ছিল। দেবরাজ তামস অস্ত্র দ্বার রণভূমি তমসাবৃত করিয়া ফেলিলেন । সে অন্ধকারে কে দেবদৈস্য কে দানবসৈন্ত নির্ণয় হইতে পারিল না। তখন ময়দানব মায়। দ্বারা যুগান্তকারী ঔর্বাগ্নির তুলা উগ্র অগ্নি স্বষ্টি করিল। সে অগ্নি দ্বারা অন্ধকার দূর হইল, কিন্তু দেবগণ দগ্ধপ্রায় হইলেন, দেবরাজ বরুণকে সে অগ্নি নির্বাপিত করিতে অনুরোধ করিলেন । বরুণ বলিলেন, এই অগ্নি জল দ্বারা নির্বাপিত হইবার নয়। পূর্ব কালে উর্ব-ব্রহ্মর্বির তপঃপ্রভাবে নিখিল জগৎ সস্তপ্ত হইয়। উঠে। তখন দেব, ঋষি, মুনি এবং দানবেম্বর হিরণ্যকশিপু, উর্ব ঋষিকে নিবেদন করিলেন, "ভগবন, ঋষিবংশের মধ্যে আপনার বংশ নিমুল হইতে চলিল। আপনি এক, আপনার পুত্রানি নাই...।” উর্ব উত্তর করিলেন, তিনি কৌমারত্ৰত বনবাসী, তাহার ত গৃহস্থাশ্রম নয়। আর, যদি অপত্য চাই, ব্ৰহ্মা মানসী স্বষ্টি করিয়াছিলেন, তিনিও স্বীয় দেহ হইতে পুত্র উৎপাদন করিবেন । অনস্তুর উর্ব স্বীয় উরু অগ্নিতে নিবিষ্ট করিয়া এক কুশ দ্বারা উরু মন্থন করিতে লাগিলেন। সহসা তাহার উরু ভেদ করিয়া নিরন্ধন অগ্নিশিখ। উদ্‌গত হইল। এই অগ্নি উর্বের পুত্র, ঔর্ব। উৎপন্নমাত্র পুত্র পিতাকে বলিলেন, “আমি ক্ষুধায় পীড়িত, আমায় ত্যাগ করুন, আমি জগৎ ভক্ষণ করি।” তখন ব্ৰহ্মা আসিয়। উর্বকে বলিলেন, “তুমি সব লোকহিতকামনায় তোমার পুত্রের তেজ ধারণ কর, সমুদ্রের বদনম্বরূপ বড়বা-( অশ্বা ) মুখে ইহার বাস, এবং জল ইহার হবিঃ-স্বরূপ অল্প হইবে। তোমার এই পুত্র কালান্তক অমল হইবে।” হিরণ্যকশিপু এই অদ্ভুত ব্যাপার দেখিয়া উবের অনুরক্ত শিব হইল । উর্ব প্রীত হইয়া দানবেশ্বরকে বিনা ইন্ধনজাত অগ্নিরূপ মায়া দান করিলেন। তাহার জীবদ্দশা পর্য্যন্ত ইহার প্রভাব থাকিয়৷ পরে, বিলুপ্ত হইবে। এই বৃত্তান্ত শুনিয়া দেবরাজ চন্দ্রকে হিম বর্ষণ করিতে বলিলেন । সে হিমে দানবেরা নিপীড়িত হইতে লাগিল । এই উপাখ্যান হইতে পাইতেছি,--(১) ভূ-পৃষ্ঠের উক সদৃশ কোন দীর্ঘ পর্বতে ঔর্ব দৃষ্ট হইয়াছিল । বোধ হয় এই পর্বতের নাম উর্ব ছিল । সেই হেতু তৎপুত্রের নাম ঔব। অরণি-মন্থন না করিলে কুমার জন্মিতে পারে না ; এই হেতু মন্থনের ব্যপদেশ। তা ছাড়া বিলও চাই। (২) পরে সেরূপ অগ্নি সমুদ্রের কোন দ্বীপের গিরিতে দেখা গিয়াছিল। সে গিরির আকার অন্ধমুখতুলা, ছিন্ন-শিরঃ শিখর। (৩) বোধ হয় ঔর্বের দেশে জল-বর্ধণ হয় না হিম-বর্ষণ হয় । (৪) পৌরাণিকের কল্পিত উপাখ্যানের কালের পৌর্বাপর্যে অবস্থিত হইতেন না। কিন্তু ঔর্ব যে অতি প্রাচীন কালের ঘটনা, তাহ৷ সত্যযুগ দ্বারা নির্দেশ করিয়াছেন । এই সত্যযুগ, পাঞ্জির সত্যযুগ নয়। বুঝিতে হইবে ত্রেতাযুগের পূর্বে। তারকাময় সংগ্রাম, এই নাম হইতেই প্রকাশ, সে সংগ্রাম আকাশে যজ্ঞ-পুরুষ বা কাল-পুরুষ নক্ষত্রে ঘটনাছিল। সে অাঞ্জি