পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] সমুদ্র দ্বারা অন্তরিত অনেক অন্তর-দ্বীপ ভারত-দ্বীপ নামে জাখ্যাত ছিল । বড় দ্বীপের নিকটস্থ ছোট ছোট দ্বীপকে অনুদ্বীপ বলিত । বহু ক্ষুদ্র দ্বীপ বিশিষ্ট বৰ্হিণ দ্বীপ । মার্গই দ্বীপপুঞ্জ)। তারপর অঙ্গদ্বীপ, যমদ্বীপ যবদ্বীপ), মলয়দ্বীপ, শস্বীপ, কুশদ্বীপ, বরাহদ্বীপ, এই ছয় ও বহি৭ দ্বীপ, এই সাত ভারত-দ্বীপ নামে থ।ণত ছিল । রামায়ণের বর্ণমায় দপ্তরাজ্যোপশোভিত ঘবদ্বীপ এই । দেশের নাম যে কত পরিবর্তন হয়, তাহা এই সকল নামে দেথা যাইতেছে। মলয় ও যম বা যব, এই দুইটি চিনি ত পার। যাইতেছে । কিন্তু অপশ্চর্য, মৎস্তপুরাণকার এখানে বড়বার অস্তিত্ব শোনেন নাই। বায়ুপুরাণও শোনেন নাই। কিন্তু আর একস্থানে দেখিয়াছিলেন। বায়ুপুরাণ লিখিয়াছেন ৪৯ অঃ), শান্মল দ্বীপে মেঘবর্ণ মহিষ পশ্বত আছে। সেখানে বারিজ মহিধ-অগ্নি বাস করে। মৎস্তপুরাণ লিখিয়াছেন (১, ২ অঃ ), কুশদ্বীপে মেঘবর্ণ মহিষপবর্ত আছে । ইহা হরি-পবত নামেও খ্যাত । সেখানে মহিষ নামক জলজ অগ্নির নিবাস । এখানে দেখা যাইতেছে, দুই পুরাণেই পর্বতের বর্ণনা এক । কিন্তু একে শান্মলদ্বীপে, অস্তে কুশদ্বাপে বলিয়াছিলেন। পর্বতটিতে আগ্নেয়গিরি আছে, এবং কাম্পীয়ান হ্রদেয় দক্ষিণস্থ গিরিটি মনে হয়। এটি এলবারঞ্জ পরতের অঙ্গ। এই দেশ শান্মল ও কুশ, দুই দ্বীপেই বলা যাইতে পারে। আর একটু লক্ষ্য করিবার বিষয় আছে। মহিষ পর্বত পারিজ অগ্নিস্থান হইলেও ইহাকে বড়বা বলা হয় নাই । হয়ত ইহার আকার বড়ব৷ তুল্য নয়।-- { ভারতবর্ষ—পৌষ, ১৩৩৭ ) শ্ৰযোগেশচন্দ্র রায় সমাজ-গঠনে শিক্ষিত মারার প্রয়োজনীয়তা •••আমাদের মায়ের অনেকেই জানেন না কিভাবে শিশুকে সুস্থ ও সবল রাখা যায়, কিভাবে তাকে প্রথমে ছোটখাটো রোগের-- যা পরে মারাত্মক হয়ে দাড়াতে পারে,—হাত ধেকে রক্ষণ করা যায়। এ-সব ভেবে দেখলে নারী-শিক্ষার প্রয়োজন কতখানি, তা সহজেই বুঝা যায়। শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন ও স্বাস্থ্য সম্পূর্ণরূপে না হলেও অনেক পরিমাণেই মায়ের উপর নির্ভর করে।••• বস্তুতঃ সস্তানের দেহ ও মনকে মানুষের মত ক রে গড়ে তুলুতে নারীর প্রয়োজনই যেণী। ইউরোপের তুলনায় আমাদের এ দেশের শিশু-মৃত্যুর সংখ্যা কত বেশী, তাহ মৃত্যু-বিবরণী পড়লেই বুঝতে পারা যায়। এর প্রধানতম কারণ শিশু-পালন সম্বন্ধে মায়ের অনভিজ্ঞতা।••• আমাদের সমাজে মায়েদের এত বেশী পর্দানশীন করে রাখা হয়েছে যে, তাদের কাছে সুস্থ শিশু আশা করা বাতুলত। মাত্র।. আমাদের দেশে, বিশেষ করে পল্লীগ্রামে, সমাজের শ্রেষ্ঠ রত্ন শিশু আলো-বায়ুহীন ক্ষুদ্র ঘরে জন্মগ্রহণ করে ; কারণ অনেকেই প্রস্তুতি ও নবজাত শিশুকে একট) যেমন-তেমন ঘরে থাকবার ব্যবস্থা করে দেয় । তার উপর অন্ধবিশ্বাস ও গোড়ামির দরুণ নোংরামির জীবন্ত-মুক্তি অশিক্ষিত ধাইয়ের সস্থানপ্রসবের জ্ঞানের অথবা অজ্ঞানজার উপর নারীকে তার জীবনের ভীষণ পরীক্ষার সময় ছেড়ে দেওয়া হয় । সেই অনভিজ্ঞ স্ত্রীলোকের শুশ্ৰুষার অধীনে মঙ্গিম দুৰ্গন্ধ বিছানায় শুয়ে প্রস্থতি ও সমাজের ভবিষ্ণুৎ, শিশুকে অস্তুতঃ প্রথম চল্লিশ দিন কাটাতে বাধা হ'তে হয় । এমনিই তে। নারীর জীবনীশক্তি নানা অন্ধকারে ক্ষীণ হয়ে থাকে ; তার উপর সন্তান-প্রসবের পর আরও দুৰ্ব্বল হয়ে পড়ে । কষ্টিপাথর—সমাজ-গঠনে শিক্ষিত নারীর প্রয়োজনীয়তা ©8☾ জন্মাবার পর শিশুর জীবনীশক্তিও অত্যন্ত ক্ষীণ থাকে ; এই সময়টাতে মায়ের ও শিশুর—উভয়ের জীবন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় থাকে , সুতরাং এ সময়ে পরিচ্ছন্নতা ও সাবধানত অতিশয় প্রয়োজন ।••• আমরা অনেক সময়ে ইংরেজ শিশুদের স্বাস্থ্য দেখে অবাক হয়ে চেয়ে থাকি। আমাদের শিশুর চেয়ে তাদের স্বাস্থ্য কত সুন্দর। কিন্তু এর অন্তর্নিহিত কারণ কি ? ইংরেজ-শিশুর মা শিক্ষিত , সন্তানের স্বাস্থ্যতত্ত্ব বিষয়ে আমাদের মায়ের অপেক্ষা ভারা অনেক বেশী অভিজ্ঞ ।••• নারীকে মুখ করে রাখাতে জাতির মায়ের আজও বে সস্তানপালন শিখতে পারছেন না, এ-শুধু মাতৃজাতির পক্ষে লজ্জাঙ্গর নয়, দেশের ও সমাজের পক্ষেও বড় লজ্জার বিষয় .. বাংলার মুসলিম সমাজে শিক্ষিত নারী নাই, এ-কথা বলুলে বোধ হয় বেশ অত্যুক্তি হয় না। অথচ বাংলার মুসলিম সকলেই যে অশিক্ষিত, এ-কথা বল ভুল। শিক্ষিত ব্যক্তির সহধৰ্ম্মিণ অশিক্ষিত,— এমন মিলন স্বশ্বের হওয়ার আশা বাতুলতামাত্র। আমরা বুঝতে পারলেও ভুলে থাকতে চেষ্টা করি, সাংসারিক জীবনে শিক্ষিত স্বামীর শিক্ষিভ স্ত্রী হওয়। কতখানি প্রয়োজন ।...আমি একথা অস্বীকার করতে চাইনে, যে, নারীর পুর্ণতা মাতৃত্বে । কিন্তু মাতৃত্ব তার পূর্ণতার একটি মাত্র অলঙ্কার, কিন্তু তার পূর্ণতার প্রধান অলঙ্কার তার নারীত্ব, যা দিয়ে সে আনন্দ দিতে পারে।...ষ্ট্ৰী-হিসাবে নারীর কৰ্ত্তব্য শুধু স্বামীর ভোগ্যবস্তু হয়ে থাকাই নয় । একট। intellectual happiness ( SIRossa assassifiktaš ) cost: তাদের কৰ্ত্তব্য। কিন্তু বাইরের জগতের সঙ্গে তার পরিচয় এত কম, যে, আট ও বিজ্ঞানের সঙ্গে তার সম্বন্ধ নেই ; আর অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান, এ-সব বিবয়ে তো ‘ক’ অক্ষর গো-মাংস বললেই চলে । বিবাহিত নারীর প্রধান কৰ্ত্তব্য স্বামীর যাতে কৌতুহল, তাতে কৌতুহলী হওয়া, তার বিফলতার সময় উৎসাহ দিয়ে উদ্বন্ধ করা, তার আলোচনার বিষয়ে যোগ দেওয়া, সৰ্ব্বোপরি ভার জীবনের প্রধান আদর্শকে সফল করবার জন্তে অনুপ্রাণিত করা । এগুলির অভাব ব’লেই নারীর ভিতরে প্রকৃত চিত্তবিনোদনের খোরাক পাওয়৷ ষায় না, এবং আমার বিশ্বাস, এইজন্তেই আমাদের সমাজে নরনারীর বিবাহিত জীবন এত একঘেয়ে ও অসুখী ।---অনেকেই হয়ত মনে করেন যে, মেয়েলোক শিক্ষিত হ’লে সংসায়ের কাজ করতে চাইবে না, সংসারের কাজে তাদের মন বসবে না, তার বিবিয়ানার ভক্ত হয়ে উঠবে। কিন্তু আমি অনেক অশিক্ষিত বড়লোক ও দরিত্র নারীর গৃহ দেখেছি –বড়লোক অশিক্ষিত গৃহিণী কম বিবিয়ান চান না, বরং একটু বেশীই চান ! জলটুকু পৰ্য্যন্ত নিজের গড়িয়ে পেতে চান না, অস্তের সেবা করা তো দূরের কথা। স্বগৃহিণী তে তারা মোটেই নন, উপরন্তু কুড়েমির জলত্ত প্রতিমূৰ্ত্তি । কোন কাজকৰ্ম্ম না করাতে, কেবল বসে ও শুয়ে থাকাতে, শরীরটিও অনেকের বাতে বা অস্কান্ত রোগে পঙ্গু করে ফেলে। তার যদি সমাজের লোকের নিকটু ক্ষমার্থ হন, তবে সুশিক্ষিত। নারীর যদি সংসারের প্রতি টানটা একট কমই দেখান, উগরাই বা কেন ক্ষমা পাবেন না ? তবে এটাও ঠিক যে, শিক্ষিত নারী কুড়েমির প্রশ্রয় অত বেশী দিতে পারেন না ; কারণ শিক্ষ। তাদের ভিতর এমন একটা প্রেরণ ও পিপাসা জাগায় যে, তাদের কখনই দিনরাত বিছানায় শুয়ে কাটাতে দেয় না। তারা হয়ত তেমন সুগৃহিণী হন না, কিন্তু অন্ততঃ সমাজসেবায়, নারীশিক্ষায়, বা রাজনৈতিক বিষয়ে, একটা কিছু নিয়ে জীবনটা ঠার কাজের মধ্যে কাটাতে চাইবেলই ।---