পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হসন্তের পত্র ঐসুরেশচন্দ্র চক্ৰবৰ্ত্তা অশাস্ত, ছেলেবেলার কথা তোমার মাঝে মাঝে মনে পড়ে ? যখন আমরা উচ্চপ্রাইমারীতে পড়তাম-ননীদের লিচুবাগানে চড়িভাতি করতাম, ডাম্বেল সাহেবের কুঠীর ভগ্নও পের মধ্যে গামূলেটের সন্ধানে যেতাম, কাছনীর বিলে পদ্মের চাক খেতে যেতাম ? খুব সম্ভব বছরে একবারও তোমার সে-সব কালের ও-সব কথা মনে পড়ে না । কেন-না, তোমরা হচ্ছ কাজের মানুষ । তাই তোমাদের কারবার হচ্ছে বর্তমান নিয়ে। বর্তমানের দুৰ্ব্বার তাগিদে তোমাদের মনের ও প্রাণের কোনখানেই কোনো অবসর তোমাদের মৰ্ম্মসঙ্গীত “আগে চল, আগে চল sাই," ততট। নয় যতটা হচ্ছে “শুধু চল, শুধু চল ই ।” তাই তোমাদের একটা বাজার দর অাছে, যার দাবি আমরা কোনো বাজারেই করতে পারি নে— .২ীবাজারেও নয়, বড়বাজারে ৪ নয়। আমরা হচ্ছি অলিসের দলের লোক । তাই আমরা তোমাদের জগতে চিরকালই একটু হসন্তের মত হয়ে থাকি। অর্থাৎ অ দ-উচ্চারিত অবস্থায় । কাজের লোক যারা তার বাস পরে বর্তমানে, আর আলসে দলের লোক যারা তার বাস করে হয় অতীতে, নয় ভবিষ্যতে। তাই তোমরা ধেমান বাস কর বর্তমানে, আমরা তেমনি বাস করি হয় অ হাঁতে নয় ভবিষ্যতে । গভীর সত্যের দিক থেকে পেতে গেলে কিন্তু আমরাই সত্যিকার কালে বাস করি ! কেন-না, আমরা ত্রিকাল বলি বটে, কিন্তু আসলে কাল নেই । ই: মাত্র দুটি এক অতীত আর এক ভবিষ্যৎ, বৰ্ত্তমান ব' ল কোনো কাল নেই। ওটা হচ্ছে একটা চিহ্নবিশেষ । স্বপলে ও বস্তুটি হচ্ছে অনাদি কালের উপর একটি অসীম সর রেখা—অর্থাৎ যার দৈর্ঘ্য জাছে কিন্তু বিস্তৃতি নেই। এই সরলরেখারই একদিকে অতীত ও অন্যদিকে ভবিষ্যৎ । এই অসীম সরল রেখা ক্রমাগত সরছে, অতীতকে বাড়িয়ে ও ভবিষ্যৎকে কাছে এনে । স্বতরাং একথা বললে নেহাৎ ভুল হবে না যে, তোমাদের জীবনটাই হচ্ছে আসলে মায়া—তোমরা য়ারা স্রেফ বৰ্ত্তমানে বাস কর । কেন-না, যারা স্রেফ বর্তমান কালে বাস করে তার কোনো কালেই বাস করে না । কারণ বৰ্ত্তমান ব’লে কোনো কালই নেই। সে যা হোক সেই ছেলেবেলায় আমরা যখন পাঠশালায় পড়তাম, তখনও বিজ্ঞান রীডারের” আমদানি হয় নি। তখনও শিশুদের কচি মন ও কোমল মস্তিষ্ক নানাবিধ প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞান দিয়ে পরিপক্ক ক’রে তোলবার আয়োজন মুক্ল হয় নি । তখনও ছোট ছোট পড় য়াদের পাঠ্যজীবন– পেয়ার হে কি গুণ তোমার কঁচ খাই ডাসা থাই পাকার ত কথা নাই ; সব তাতে তৃপ্তি রসনার ॥ এমন একটি রিয়ালিষ্টিক রসপূর্ণ রচনায় সরস হয়ে উঠত। যদিও উক্ত রচনার রচয়িতার দৃষ্টি বা স্মৃতি-শক্তির একটু দোব না ধরে আমরা পারতাম না । কেন-ন, ওর দ্বিতীয় লাইনটি আসলে হওয়া উচিত— কাচ খাই, পাক খাই, ডাসার ত কথা নাই, তবেই ওট। নিভুল রিয়ালিটিক হয়ে ওঠে । যা হোক, ছেলেবেলার কথা তোমার মনে না পড়ুক আমার মাঝে মাঝে পড়ে। আর তখন ভাবি সে বয়েসে কত কম উপাদানেই নাকত বেশী খুশী হয়ে উঠবার সামর্থ্য ছিল । আর সে খুশীর মধ্যে কোনখানেই একটুকু কালে ছায়ার অভিালের আভাসও থাকবার উপায় ছিল না। সে খুশী ছিল যেমন:স্বতঃ, তেমনি সহজ, তেমনি অবিমিশ্র। আজ মনপ্রাণচিত্তের প্রসার বেড়েছে, অহং এর পাকা ভিত্ত্বি গড়ে উঠেছে, জগতটা কত বৃহৎ হয়ে