পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৬০ প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩৭ { ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড আর এই উদ্বোধন হ’তে পারে শিক্ষায় ও দীক্ষায় । ইতিহাস যদি অন্তঃদৃষ্টি দিয়ে দেখ,তবে দেখবে যে, সমাজে মনের এই উদ্বোধন হলেই দেখা যাবে যে, মানুষ তার আশু প্রয়োজনের তাগিদকে ছাড়িয়ে উঠেছে । তখন সে বুঝবে যে, যেটা সবার চাইতে স্পষ্ট সেইটেই সবার চাইতে প্রধান নয়। কাজেই দেখতে পাচ্ছ যে, শিক্ষার যত প্রসার বাড়বে ততই আমাদের দলের লোকের জয়জয়কার হবে--আমাদের দলের লোক, অর্থাৎ যার মানুষের মস্তিষ্ককে মানুষের পেশীর চাইতে উচুতে স্থান দেয়। সুতরাং প্রলেটারিয়েটুর শিক্ষায় দীক্ষায় সভ্যতর ভব্যতর হয়ে উঠুক-এর বিরুদ্ধ মত আমাদের হতেই পারে না। একমাত্র অশিক্ষিত বৰ্ব্বরকে দিয়েই ভ্যাণ্ডালিজমের কাজ চলে, শিক্ষিত সভ্য মানুষের দ্বারা নয় । একটা গুর্থ পুলিস যা করতে পারে, তুমি আমি তা পারিনে । এতক্ষণ আমি যা বলেছি সে কেবল সমাজ-শাসন সমাজ-পোষণ সমাজ-রক্ষা ইত্যাদির দিক থেকে । কিন্তু এর চাইতে একটা বড় দিক আছে। যেটা মামুষের বৃহত্তর দিক। এই বৃহত্তর দিকটার কথা হচ্ছে এই যে, মাকুষ ক্রমাগত আপনাকে প্রকাশ ক’রে ক’রে চলেছে। বিশ্বমানবের প্রগতির কথাটা যদি নাই-ই মানা যায়, তার গতির কথাটা কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। এই যে গতি, এই গতির মধ্যেই রয়েছে বিশ্ব-মানবের মানবসভ্যতার প্রকৃত তাৎপৰ্য্যট, বড় অর্থটা, অবশু জড়ের চাইতে জীবকে যদি বড় ব’লে স্বীকার করা যায়—যা আমরা সবাই করি। এথন এই যে গতি—যা মানবসভ্যতার বড় অর্থ, প্রকৃত তাৎপর্যা--এই গতিকে গতি দান করছে মানুষের কি ? তার হাত নয়, তার মস্তিষ্ক । অর্থাৎ তার শারীরিক শ্রম নয়, তার চিন্তার শক্তি । শ্রমিকদের ধৰ্ম্মঘটে হুলুস্কুল প’ড়ে যায়। কিন্তু সারা পৃথিবীর ভাবুকরা, intellectuals যারা, তারা যদি ধৰ্ম্মঘট করে, তবে কি ব্যাপার দাড়ায় সেটা একবার কল্পনা করবার চেষ্টা কর । সে যা হোক, বিশ্ব-মানবের যতদিন এই গতি থাকৃবে, ততদিন মানুষের মস্তিষ্ককে লাষ্ট ক্লাসে ফেলে দিতে চাইলেও তা লাষ্ট ক্লাসে প’ড়ে থাকৃবে না । সে একদিক দিয়ে না একদিক দিয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠবেই। আসলে সমস্ত যেখানে যেখানে বিপ্লব ঘটেছে, সেখানে সেখানেই ভিতরের কথাটা হচ্ছে এই যে, সমাজপতির। সেখানে মস্তিষ্কের শক্তি হারিয়েছে, সুতরাং গতির পথে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। ষোড়শ লুইয়ের ফ্রান্স, আবদুল হামিদের তুরস্ক, দ্বিতীয় নিকোলাসের রাশিয়া বা আমাদের স্মৃতিচঞ্চুদের হিন্দুসমাজ–এ সকলেরই ভেতরের কথাটা হচ্ছে এই যে এদের শীর্ষস্থানীয় যারা তাদের চিন্তাশক্তিও গিয়েছে, imagination ও গিয়েছে । সেই দুটি বস্তুই মাহুয়ের গতিদান করে । কাজেই এমন মানুষের দরকার হয়েছিল, যারা হবে more dynamic, আমরা বাহিরের দিক থেকে বলছি বটে, ফ্রান্সে অভিজাত গিয়ে বুর্জোয়ে এল, বা রাশিয়াতে রাজা গিয়ে গণ এল, ব। আমাদের হিন্দুসমাজে স্মৃতিচঞ্চু গিয়ে Ph.D. বা M. Sc. এল, কিন্তু ভিতরের দিক থেকে দেখছি কেবল এক বস্তু গিয়ে আর এক বস্তু এল—মস্তিষ্কহীন গিয়ে চিন্তা বীর এল—অর্থাৎ জড় গিয়ে চৈতন্ত এল— স্থাবরত্ব গিয়ে গতিশীলতা এল । সুতরাং dignity of labour যত উচুতেই স্থাপন করা যাক না কেন, মস্তিষ্ক তারও উচুতে আপনার স্থান করে নেবেই নেবে । এই সব কথা মনে করেই আশা করি এ-কথা ভাব। চলে যে, গণতান্ত্রিক আজ যে রকম ক্রুদ্ধই হোক না কেন, হাতে মাথা-কাটা কিছুতেই চলবে ন—মাথা কেশকলাপে কেশরঞ্জন তেল মেথে বসে থাকলেও নয় । মাথার যদি অভাব হয় তবে সবার আগে আকৰ্ম্মণ্য হবে হাত । স্বতরাং মাভৈঃ --রাজতন্ত্রই হোক বা গণতন্ত্রই হোক, ফ্যাশিজমুই হোক বা বলশেভিজমই হোক, এদের মাথায় যারা থাকৃবে তারা হবে মাথাওয়ালা লোক। অর্থাৎ এ পৃথিবীর সভ্য-সমাজে চিরকাল জয় জয়কার হবে হাতের নয়, মাথার-দেহের নয়, মনের- জড়ের নয় চৈতন্যের । আমার এই প্রকাও গবেষণাময় পত্র পড়ে তোমার মাথা ধরবে না এই আশা ক’রে আঞ্জ এইখানে শেষ দাড়ি টানছি। ইতি-- তোমার হসন্ত