পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা । প্রকৃতি ও মুসলমান Ο Κύ Σ মৰ্মস্থানীয় সেই আলেম সম্প্রদায়ই যে অতিরিক্ত puritanism-এর চর্চায় রসহীন, শুষ্ক, প্রসন্নতার প্রীতির চাপ তাদের চেহারায় নেই,- সেখানে সাধারণতঃ পরিলক্ষিত হয় একটা রুক্ষতা আর অপ্রসন্নতার ভাব । তরুণদের প্রতি এদের একটুও মমত্ববোধ থাকলে হয়ত এই উৎসবগুলি সঙ্গীতে শোভায় সত্যিকার উৎসবে পরিণত হত। কিন্তু, সে আশা করা অনেকট আগ্নেয়গিরির নিকট জল ভিক্ষার মতই নিষ্ফল। প্রতিবেশী হিন্দুসমাজের পানে চাইলে আজ স্বতই মনে হয় তাদের উৎসবগুলি কত সজীব, কত আনন্দময়। হিন্দুর বিশ্বপ্রবিষ্ট সগুণ ব্রহ্মেরও পূজা করে থাকে। Transcendant ff# f*fii Immanent-g, ##ìN অসীমেরই একটা খণ্ড প্রকাশ, এই ধারণ তাদের আছে । সুতরাং প্রকৃতির স্পর্শের মধ্য দিয়ে ভগবানের স্পৰ্শলাভ করা হিন্দুদের নিকট একটা ধৰ্ম্ম-ব্যাপার বলেই বিবেচিত হয় । প্রকৃতির অঙ্গে অঙ্গে ছড়িয়ে আছে শ্বে রসধারা তাতে অবগাহন ক’রে চিত্তকে সরস করে তোলার আর্ট তারা জানে । মুসলমান তার জীবন সরস ক’রে তুলতে চাইলে অঙ্গ তাকে এ-দিকট। সাদরে গ্রহণ ক’রে নিতে হবে । অন্তের অনুকরণ করছি, এই বোধের লজ্জাট যেন আজ আর স্থাকে ম্ৰিয়মাণ ক’রে না তোলে ; কেন-ন ‘নিবে অর দিবে মিলাবে মিলিবে, এই হ’ল আজকার যুগের মন্ত্র । আর বহু বছর ধরে পাশাপাশি বাস ক’রেও উভয়ে উভয়ের দ্বারা কিছুটা প্রভাবস্থিত হ'ব না, এই ধারণার মত অদ্ভুত দ্বিতীয় ধারণ কিছু আছে কি না সন্দেহ। পারিপাশ্বিককে বঞ্চনা ক’রে চলতে পারে এক মৃত যে সেই, জীবন্ত ব্যক্তি তার চারদিককার আবহাওয়া থেকে রস গ্রহণ ক’রেই জীবন্ত। অবশু প্রতিপক্ষের এখানে আপত্তি হাতে পারে, Pantheism ই একেবারে অনিন্দ্য মতবাদ নয় ; সুতরাং একে "মাদের জীবনে গ্রহণ করবার এতটা আগ্রহ কেন ? উত্তরে আমার বক্তব্য এই যে, কোন ismই ত সৰ্ব্বাঙ্গ- । “র নয় ; সব 'ism এরই ভাল মন্দ দিক আছে সুতরাং | antheism এর বেলায়ও তার মন্দ দিকটা, অন্ত কথায় { তার নীচের তলার Paganism-টা বাদ দিয়ে, তার ভাল দিকটা গ্রহণ করতে বললে আশা করি আমার ঘোর অনু্যায় হবে না । আর একটা কথা, এই Pantheistic ভাবট মুসলমানের জীবনে একেবারে নতুনও নয়। পারস্তের স্বফী কবিদের জীবনে এ রকম প্রভাব ছিল না। সাধারণের ইসলাম ও ও সুফীর ইসলামের পার্থক্যটা কি, দার্শনিক লেখক বরকত উল্লাহ সাহেবের প্রসিদ্ধ প্রবন্ধ “স্বফমত ও বেদান্ত” তে খানিকট উদ্ধৃত করে দেখাতে চেষ্টা করছি । তিনি বলছেন, “ইসলাম যেখানে বলে এক আল্লাহ, ভিন্ন দ্বিতীয় আল্লাহ কেহ নাই, সুফী ষেপানে বলেন, "এক আল্লাহ ব্যতীত দ্বিতীয় আর কিছুই মাই। হফীর আল্লাহ সপ্ততল আকাশের উপরে সত্তর হাজার পর্দায় ঘেরা থাকে না । তিনি সুধীর অস্তরেই বিরাজ করিতেছেন । শুধু উগ্র একার অন্তরে নয়, জগতে যা-কিছু আছে, সকলের ভিতরই সেই পরম সত্ত্ব স্পন্দন দিতেছে ("* এই উক্তিটি কি বেদাস্তের অদ্বৈতবাদের সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে না ? স্বতরাং শুধু Carpenter God-এর নীরস পূজায় মত্ত না থেকে রসস্বরূপ চৈতন্যময় আল্লাহর পূজায় মুসলমানের কি আপত্তি হ’তে পারে, আমার জানা নেই । প্রকৃতিকে অবজ্ঞ না ক’রে তার থেকে রস টেনে জীবনকে সরস করে তোলাই আমাদের কৰ্ত্তব্য । চিত্তের এই সরসতার উৎস থেকেই স্বষ্টি হবে আমাদের সাহিত্য দর্শন আর শিল্প । পার্থীর কাকলি, কুসুমের গন্ধ আজ আমাদের জীবনকে আকুলিত করে তুলুক, আর সপ্ত রঙের মেঘের মেলা আমাদের চক্ষে রূপের অঞ্জন বুলিয়ে দিক্ । তাহলেই দেখতে পাব, আমাদের কাছে জীবন মধুময়, জগৎ স্বন্দর হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমার এই কথাগুলোকে হয় ত আমার কেজে। বন্ধু অতিরিক্ত কাব্য বলে উড়িয়ে দেবেন। তাকে তাই বলে রাখছি, একটু কাব্যের আমেজ ছাড়া জীবনের আনন্দই যে অস্তহিত হয়ে বায়। বলতে কি, মানুষের জীবনটাই একটা কাব্য ; স্বতরাং জীবনের রসহীনতার চচ্চর্ণ করা আর মৃত্যুকে নিমন্ত্রণ করা একই • কথা । আর এটা সমন্বয়ের যুগ, স্বতরাং কেজো লোককে করতে হবে

  • “খাধিক, সওগাত'-দ্বিতীয় বর্ষ।