পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Œዓb፦ থেলো ও অপ্রকৃত কথা বলেন । তিনি কি বলিয়াছেন, তাহা বলিতেছি । বিলাতে সম্মান দেখাইবার একটা প্রথা, কোন-না-কোন শহরের ফ্রাডম্ অর্থাৎ উহার পেীর অধিকার কাহাকেও দেওয়া । তাহাকে সেই শহরের ফ্রী ম্যান অর্থাৎ স্বাধীন মানুষ বলা হয় । সম্প্রতি একটি সভা করিয়া এডিনবরা শহরের পৌরত্ব ভুপালের নবাব এবং শ্ৰীনিবাস শাস্ত্রীকে দেওয়া হইয়াছে । দাস-দেশের কোন ব্যক্তির স্বাধীন দেশের কোন নগরের পেীরত্বের খেতাব প্রাপ্তির মধ্যে যে অনভিপ্রেত উপহাস আছে, তাহা শ্ৰীনিবাস শাস্ত্রী উপলব্ধি না করিয়া বরং আহলাদিত হইয়াছেন, তাহাতে দুঃখ করা বৃথা । তিনি বলিয়াছেন, "একথা বলিলে কোন গুপ্ত কথা অকালে ব্যক্ত করা হইবে না, যে, আমাদের একটি সব-কমিটির চেয়ারমঠুষ্য বলিয়াছেন, গোলটেবিল কনফারেন্সের আগামী পূর্ণ অধিবেশনে প্রধান মন্ত্রী গবন্মেণ্টের পক্ষ হইতে যাহা বলিবেন তাহাতে ভারতীয় লোকদের মনোবাঞ্ছা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা তৃপ্তি অনেক দূর পর্য্যস্ত হইবে।” ইহা ভাবিয়া তিনি আহলাদে আটখানা হউন, আমরা হইতেছি না। তাহার পর তিনি বলিয়াছেন, “বিধাতাকে ধন্যবাদ, আয়াল্যাণ্ডের মত উপায়ে নহে, কিন্তু আলোচনা, রফ, পরস্পর বুঝাপড় এবং আপোষের দ্বারা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লব্ধ হইতে যাইতেছে।” আমরা আয়ার্ল্যাণ্ডের অবলম্বিত উপায় পছন্দ করি না । সুতরাং তাহার কথিত উপায়ে হইলে ত ভালই । তিনি যদি তাহা হইতেছে বিশ্বাস করেন করুন ; আমরা করি না । তিনি শেষে এই কথা বলিয়াছেন, "সেন্ট জেম্স প্রাসাদে আজ গ্রেট ব্রিটেনের ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায় লিখিত হইতেছে । কতিপয় কারাদণ্ড ও কতিপয় লাঠির ঘা ছাড়া অন্য কিছু ব্যতিরেকে কেমন করিয়া একটি দীর্ঘ সংগ্রামের সুখকর পরিসমাপ্তি হইল, সেই কাহিনী ভবিষ্যৎ বংশাবলীর উপকারের জন্য তাহাতে লেখা থাকিবে ।” ইহা তিনি বিশ্বাস করুন, তাহাতে আপত্তি করি না ; আমরা বিশ্বাস করি না । আমরা “কতিপয় কারাদণ্ড ও প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ২য় খণ্ড কতিপয় লাঠির ঘ” কথাগুলি অত্যন্ত বেদনাদায়ক মনে করি । শেক্সপীয়্যারের রোমিও ও জুলিয়েট নাটকে যে আছে, “He jests at scars that never felt a wound” "যে কখনও আঘাত অনুভব করে নাই, ক্ষতচিহ্ন তাহার উপহাসের বিষয়” তাহা ইংরেজীতে প্রবাদ বাক্যে পরিণত হইয়াছে। শ্রীনিবাস শাস্ত্রী তাহা জানেন । গায়ে যাহাতে একটুও তাচড় না-লাগে, সেই রূপ সাবধানতার সহিত আমরাও চলি, পৌরুষের কোন দাবি আমাদের নাই । ইহাও আমরা মনে করি ন}, য়ে, স্বাধীনতা লাভের জন্য ভারতসন্তানগণ এখনও খুব বেশী স্বাৰ্থত্যাগ ও দুঃখ সহ্য করিয়াছেন । কিন্তু নিজের কামরায় মুখাসীন হইয়া কিংবা সুন্দর একটি হলে আরামে দাড়াইয়। ইহা বলাও অশোভন মনে করি, যে, কেবল আল্পসংখ্যক লোক জেলে গিয়াছে বা লাঠির প্রহার খাইয়াছে । চল্লিশ পঞ্চাশ ষাট হাজার কি অল্পসংথা ক ? তাহ অপেক্ষা অনেক বেশী লোক-- কয়েক লক্ষের কম হইবে ন—লাঠি দ্বারা প্রহৃত হইয়াছে । সেই সংখ্যা কি অল্প ? কারাদণ্ড ও লাঠির ঘা ছাড়া কি আর কিছু ভারতবর্ণে ঘটে নাই ? কেহ মরে নাই, সৰ্ব্বস্বাস্ত হয় নাই, লাঞ্ছিত অপমানিত হয় নাই ? বিলাতে কি কোন খবরই পৌছে না ? না, শ্রনিবাস শাস্ত্রীর মত লোকের চোখ কান বুজিয়া থাকেন ? যদি কারাদণ্ডের ও লাঠির ঘায়ের সংখ্যা বাস্তবিক খুব কমই হইয়া থাকে, এবং ভারতীয়েরা আর কোন প্রকার ক্ষতি ও দুঃখ সহ্য না করিয়া থাকে, তাহা হইলেও শ্ৰীনিবাস শাস্ত্রী মহাশয় ত প্রক1রাপ্তরে স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছেন, যে, শুধু আলোচনা, রফ, পরস্পর বুঝাপড় ও আপোষের দ্বারা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লব্ধ হইতে যাইভেছে না, কারাদণ্ড ও লাঠির ঘা খুব বেশী না হইলেও কাহাকেও কাহাকেও অল্প কিছু সহ্য করিতে হইয়াছে—যদিও শ্ৰীনিবাস শাস্ত্রী মহাশয়কে সহ করিতে হয় নাই । তিনি বাক্যের দ্বারাই কাজ হাসিল করিতেছেন ।