পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

tఫిe করে নিতে হয়, কাজ স্বরু হয় সেই মুহূৰ্ত্তে। সেদিনকার পরেও অনেক দিন চলে গেল । সেই পাবন কনফারেন্সে পল্লীসম্বন্ধে যা বলেছিলুম তার প্রতিধ্বনি অনেকবার শুনেছি—শুধু শব্দ নয় পল্লীর হিতকল্পে অর্থও সংগ্ৰহ হয়েচে–কিন্তু দেশের যে উপরি তলায় শব্দের আবৃত্তি হয় সেইগানটাতেই সেই অর্থও আবৰ্ত্তিত হয়ে বিলুপ্ত হয়েচে, সমাজের যে গভীর তলায় পল্লী তলিয়ে আছে সেখানে তার কিছুই পৌছল না । একদা আমি পদ্মার চরে বোট রেখে সাহিত্যচর্চা করছিলুম। মনে ধারণা ছিল, লেখনী দিয়ে ভাবের খনি থনন করব এই আমার একমাত্র কাজ, আর কোনো কাজের আমি যোগ্যই নই। কিন্তু যখন একথা কাউকে ব’লে-কয়ে বোঝাতে পারলুম না যে, আমাদের স্বায়ত্বশাসনের ক্ষেত্র হচ্চে কৃষিপল্লীতে, তার চর্চা আজ থেকেই স্বরু করা চাই, তখন কিছুক্ষণের জন্যে কলম কানে গু"ঞ্জে একথা আমাকে বলতে হ’ল— আচ্ছা, আমিই একাজে লাগব । এই সঙ্কল্পে আমার সহায়তা করবার জন্যে সেদিন একটি মাত্র লোক পেয়েছিলুম, সে হচ্চে কালীমোহন। শরীর তার রোগে জীর্ণ, দুবেল তার জর আসে, তার উপরে পুলিশের খাতায় তার নাম উঠেচে । তারপর থেকে দুর্গম বন্ধুর পথে সামান্ত পাথেয় নিয়ে চলেছে সেই ইতিহাস । চাষীকে আত্মশক্তিতে দৃঢ় করে তুলতে হবে এই ছিল আমার অভিপ্রায়। এ সম্বন্ধে দুটে৷ কখা সৰ্ব্বদাই আমার মনে আন্দোলিত হয়েচে—জমির স্বত্ব ন্যায়ত জমিদারের নয়, সে চাষীর ; দ্বিতীয়ত সমবায় নীতি অনুসারে চাষের ক্ষেত্র একত্ৰ ক’রে চাষ না করতে পারলে কৃষির উন্নতি হতেই পারে না । মান্ধাতার আমলের হাল লাঙল নিয়ে আল-বাধ টুকরো জমীতে ফসল ফলানো আর ফুটে৷ কলসীতে জল আন একই কথা । কিন্তু এই দুটো পন্থাই দুরূহ। প্রথমত চাষীকে জমির স্বত্ব দিলেই সে স্বত্ব পর মুহূৰ্ত্তেই মহাজনের হাতে গিয়ে পড়বে, তার দুঃখভার বাড়বে বই কমবে না । কৃষিক্ষেত্র একত্রীকরণের কথা আমি নিজে একদিন চাষীদের ডেকে আলোচনা প্রবাসী—ফাল্গুন, ১৩৩৭ একথা বলব। মাত্র তার দায়িত্ব তখন থেকেই স্বীকার করেছিলুম। শিলাইদহে আমি যে-বাড়ীতে থাকতুম, [ ৩eশ ভাগ, ২য় খণ্ড هم. هر তার বারান্দ থেকে দেখা যায় ক্ষেতের পর ক্ষেত নিরস্তর চলে গেছে দিগন্তু পেরিয়ে । ভোরবেলা থেকে হাল লাঙল এবং গোর নিয়ে একটি একটি করে চাষী আসে, আপন টুকরো ক্ষেতটুকু ঘুরে ঘুরে চাষ করে, চলে যায়। এই রকম ভাগ করা শক্তির যে কতটা অপচয় ঘটে প্রতিদিন সে আমি স্বচক্ষে দেখেচি । চাষীদের ডেকে যখন সমস্ত জমি একত্ৰ ক’রে কলের লাঙলে চাষ করার সুবিধের কথা বুঝিয়ে বললুম তারা তখনই সমস্ত মেনে নিলে । কিন্তু বললে, আমরা নিৰ্ব্বোধ, এত বড় ব্যাপার করে তুলতে পারবো কি করে ! আমি যদি বলতে পারতুম, এ ভার আমিই নেব তাহলে তখনই মিটে যেতে পারত। কিন্তু আমার সাধ্য কি ? এমন কাজের চালন-ভার নেবার দায়িত্ব আমার পক্ষে অসম্ভব—সে শিক্ষা, সে শক্তি আমার নেই । কিন্তু এই কথাটা বরাবর আমার মনে জেগেছিল। যখন বোলপুরের কো-অপারেটিভের ব্যবস্থা বিশ্বভারতীর হাতে এল তখন আবার একদিন অাশা হয়েছিল এইবার বুঝি স্থযোগ হতে পারবে । যাদের হাতে আপিসের ভার তাদের বয়স অল্প, আমার চেয়ে ভাদের হিসাব বুদ্ধি এবং শিক্ষা অনেক বেশী । কিন্তু আমাদের যুবকের ইস্কুলে-পড়া ছেলে, তাদের বই মুখস্থ করার মন । যে-শিক্ষা আমাদের দেশে প্রচলিত তাতে করে আমাদের চিস্ত করার সাহস, কৰ্ম্ম করবার দক্ষত থাকে না, পুথির বুলি পুনরাবৃত্তি করার পরেই ছাত্রদের পরিত্রাণ নির্ভর করে । বুদ্ধির এই পল্লবগ্রাহিত ছাড়া আমাদের আর একটা বিপদ ঘটে। ইস্কুলে যারা পড়া মুখস্থ করেচে, আর ইস্কুলের বাইরে পড়ে থেকে যারা পড়া মুখস্থ করেনি, তাদের মধ্যে শ্রেণী-বিভাগ ঘটে গেছে,— শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত । ইস্কুলে-পড়া মনের আত্মীয়তাবোধ পুথি-পোড়োদের পড়ার বাইরে পৌছতে পারে না। যাদের আমরা বলি চাষাভুষো, পুথির পাতার পর্দা ভেদ করে তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি পৌছতে পারে না, তারা আমাদের কাছে অস্পষ্ট। এই জন্ধেই ওরা আমাদের সকল প্রচেষ্টা থেকেই স্বভাবত বাদ