পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ჯაზ e প্রবাসী—ফাল্গুন; ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ২য় খণ্ড যে পুরাণে তীর্থমাহাত্মা, ব্রতমাঙ্গাত্ম্য যত অধিক, সে পুরাণ তত আধুনিক বলা যাইতে পারে। বায়ুপুরাণে এই সকল মাহাত্মা নাই বলা চলে। পুরাণখানি নমদার উত্তরে মালবদেশে প্রসিদ্ধ হইয়া থাকিবে । মৎস্যপুরাণ এই পুরাণের বক্তা মীন, শ্রোতা মন্ত্র । তথাপি পুরাণখানি শৈব। ইহাতে বহু, ব্রত-ও দান-মাহাত্ম্য বর্ণিত হইয়াছে। ইহাতে রাজাব প্রয়োজনীয় অনেক বিষয় আছে . এই এই বিষয় ছাড়িয়া দিলে এই পুরাণে ও বায়ুপুরাণে এত সাদৃশ্ব আছে যে, মনে হয় যেন এক আদি পুরাণ হইতে দুইখানির স্বষ্টি হইয়াছে। বোধ হয়, পুরাণ-খানি বোম্বাই অঞ্চলে কোনও রাজার নিমিত্ত বৰ্দ্ধিতকলেবর হইয়াছিল। ইহাতেও ভাবি রাজবংশের উল্লেখ আছে । তথাপি ইহার অধিকাংশ আরও প্রাচীন । বায়ু ও মৎস্য পুরাণ ভারতের পশ্চিম দেশের এবং পুরাকালের বলিয়া এই দুই পুরাণে সুমাত্রা দ্বীপের বড়বার উল্লেখ নাই । ( পৌষ মাসের “ভারতবর্ষে” “ঔর্বাগ্নি” দেখুন । ) বিষ্ণুপুরাণ বিষ্ণুপুরাণ বৈষ্ণবপুরাণ। ইহা ছয় অংশে বিভক্ত। প্রথম চারি অংশ বায়ুপুরাণের তুলা। ইহাতে ব্রত ও তীর্থমাহাত্মা নাই। পঞ্চম অংশ শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলা । ষষ্ঠ অংশে মোট আটটি অধ্যায়। এই অধ্যায়ের বিষয় প্রথম চারি অংশে স্বচ্ছন্দে বসিতে পারিত। বোধ হয় আদি বিষ্ণুপুরাণে প্রথম চারি অংশ ছিল ; পঞ্চম ও ষষ্ঠ পরে যোজিত। পরে এই অকুমানের হেতু দেওয়া যাইবে । কিন্তু, পরে যোজিত হইলেও নারদপুরাণের পূর্বে যোজিত। নারদপুরাণ মতে বিষ্ণুপুরাণের উত্তর ভাগের নাম বিষ্ণুধৰ্ম্মোত্তর । অতএব বর্তমান বিষ্ণুপুরাণ, পূৰ্ব্বভাগমাত্র। বিষ্ণুপুরাণেও ভবিষ্য রাজবংশ আছে। এই পুরাণ ব্রহ্মাবতে খ্যাত হইয়াছিল । ৩ । পুরাণত্রয়ের আদি প্রণয়ন কাল । বায়ুপুরাণ কখন কথিত হইয়াছিল ? পুরাণের আরম্ভে লিখিত অাছে, “ যখন নৃপতি-সত্তম বিক্রাস্তু অনুপম-তেজঃ অধিসীমকৃষ্ণ ধমৰ্ণনুসাবে পৃথ্বী শাসন করিতেছিলেন, তখন নৈমিষারণ্যে ধমক্ষেত্র কুর,ক্ষেত্রে দৃষদবর্তী নদীতীরে নষ্টরজ শাস্ত দান্ত জিতেন্দ্রিয় ঋজু সংশিতাত্মা সত্যব্রতপরায়ণ ঋষিগণ যথাশাস্ত্র দীক্ষিত হইয়া এক দীর্ঘসত্র আরম্ভ করেন । তাহাদিগকে দেখিবার নিমিত্ত পৌরাণিকোত্তম মহাবুদ্ধি স্থত লোমহর্ষণ তথায় উপস্থিত হন। তাহার স্বভাষিত শ্রবণে শ্রোতৃগণের লোমহর্ষ হইত। এই হেতু তাহার নাম লোমহর্ষণ হইয়াছিল। তিনি বেদধ্যাসের ত্রিলোক-বিশ্রাত ধীমান্‌ মেধাবী শিষ্য ছিলেন। তাছাতে পুরাণ বেদ’ ও ‘বিপুল মহাভারত' প্রতিষ্ঠিত ছিল । যিনি সেই সত্রে গৃহপতি’ ( বৈশ্বাযজমান ) ছিলেন, তিনি ইঙ্গিত হইতে ঋষিগণের ভাব দেখিয়া লোমহর্ষণকে বলিলেন, “দেখ, তুমি ইতিহাস ও পুরাণ নিমিত্ত মহাবুদ্ধি ভগবান ব্যাসের উপাসনা করিয়াছ। এখানে উপস্থিত ধীমান ঋষিগণ পুরাণ শ্রবণে উৎসুক হইয়াছেন। ইহঁারা নানা গোত্র ইহার স্ব স্ব বংশবৃত্তান্ত শ্রবণ করন। আমরা যজ্ঞারম্ভের পূর্বে তোমায় স্মরণ করিয়াছিলাম।” এগনে এই বিক্রান্ত রাজার নাম অধিসীমকৃষ্ণ পাইতেছি । কিন্তু অন্যত্র তাহার নাম অধিসোমকৃষ্ণ আছে । এই পুরাণের কেবল এই এক স্থানে নয়, পরে ৯৯ অধ্যায়ে ( ৬৩৬ পৃ: ) লিখিত আছে, “সম্প্রতি ধমৰ্শতা মহাযশী অধিসীমকৃষ্ণের পৃথ্বী-শাসনকালে, দৃষদবর্তীর তীরে আপনাদের [ ঋষিদের ] দুশ্চর দীর্ঘসত্রের দুই বৎসর অতীত হইয়াছে।” পুনশ্চ একটু পরে, “অধিসীমকৃষ্ণ সোহয়ং সাম্প্রতম পৌরবান নৃপঃ” পুরুবংশের অধিসীমকৃষ্ণ সাম্প্রত নৃপতি । অধিসীমকৃষ্ণ কে ? উক্ত অধ্যায়ে পাইতেছি, রাজা পরীক্ষিতের পুত্র জনমেজয়, তস্য পুত্র শতানীক, তস্য পুত্র অশ্বমেধদত্ত, তস্য পুত্র অধিসীমকৃষ্ণ । অর্থাৎ পরীক্ষিতের পঞ্চম অধস্তন পুরুষ। কুরুক্ষেত্র-যুদ্ধ-বৎসরে পরীক্ষিতের জন্ম হইয়াছিল। অতএব তদনন্তর এক শত বৎসর পরে বায়ুপুরাণ কথিত হইয়াছিল। খ্ৰীষ্ট-পূর্ব ত্রয়োদশ শতকে যুদ্ধ হইয়াছিল, এই পুরাণ দ্বাদশ শতাবে প্রথম প্রণীত হইয়াছিল। '