পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] হইতে বিদায় হইয়া যাইবার পূৰ্ব্বেই প্রচুর সোনাদান তাহাকে দিয়া যাইবেন । তবে বাবার হুকুম-মত কাজ কর চাই । মাধির বুক দুরন্থর করিতেছিল, কথা না কহিয়া মাথা ঝাকাইয়া সম্মতি জানাইয়া সে চলিয় গেল । অtশু সোনাদান প্রাপ্তির ভরসায় মনট প্রফুল্ল ছিল, যাইবার সময় গিরিশ চাটুযোকে একট। প্রণাম ও করিয়া গেল। গিরিশ চাটুষ্যে মনে মনে হাসিয়! কছিলেন –“এখন ৪ তে বৃন্দাবন কুণ্ডলীই বাকি আছে, কাল বাদ পরশু ‘তু বলতেই—” সন্ধ্যায় বাবা হনুমানদাস একবার ময়ুরাপাড় ঘুরিয়া তাহার বন্ধু মদন ময়রার সঙ্গে গোপনে সাক্ষাৎ করিয়া অসিলেন । १ ভোরের প্রতীক্ষায় সমস্ত রাত্ৰি জাগিয়া কাটাইয়৷ প্রভাত হইতে গিরিশ চাটধ্যে যাগযজ্ঞের আয়োজন আরম্ভ করিলেন । সমস্ত আয়োজন অতি সস্তপণে এবং গোপনে করিতে হইবে এই আদেশ ছিল, কাজেষ্ট আপনাকেই মধ্যাহ্নে উপবাসী চাটুম্বো মহাশয় বাবাকে ভূরিভোজন করাইয়৷ ‘বৃন্দাবন কুণ্ডলী’ করিবার ব্যবস্থা করিতে চলিলেন। বাবার আদেশমত মাধি আসিল । বাঞ্ছিতাকে সৰ্ব্ব অলঙ্কারে মণ্ডিত করিয় তাহার সম্মুখে বসিয়া তিন হাজার আটচল্লিশবার বাবার প্রদত্ত মন্ত্র সমস্ত রাত্রি ধরিয়া জপ করিতে হইবে। বাব সমস্তই মাধিকে বুঝাইয়া দিলেন। মাধি প্রথমে মিহি রকমের একটু আপত্তি করিতেছিল, কিন্তু গিরিশ চাটুয্যের স্বগীয়া সহধৰ্ম্মিণীগণের পুঞ্জীকৃত অলঙ্কার দেখিয় তাহার চোখ ঝলসাইয় গেল, সে আর কথা কহিল না। নিবপত্তিতে অলঙ্কারমণ্ডিত হইয়া ঠাকুরঘরে গিয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। মধ্যে একবার বাব| তাহাকে দপিতে আসিয়াছিলেন, সেই সময় মাধি র্তাহাকে জিজ্ঞাস করিল, “গয়না ফিরিয়ে নেবে না তো ?” বাবা জানাইলেন যে, তাহার হুকুম-মাফিক চলিলে গঠন চিরকালের জন্য তাহারই থাকিবে । মাধি খুশী ইয়া বসিয়া রহিল। সমস্ত করিতে হইতেছিল। ৬৫১ ক্রমে সন্ধ্য হইয়া আসিল । গিরিশ চাটুযো উপবাসে অবসর হইয়া ঢুলিতেছিলেন। বাবা তাহাকে বাকি দিয়া কহিলেন, “গণপতিনাথ কী চরণামৃত পিয়ে লেও বাচ্চ।” চাটুয্যে মহাশয় সসম্বমে চরণামৃতের পাত্রটি নিঃশেষ করিয়া 'বৃন্দাবন কুণ্ডলী জপের জন্য প্রস্থত হইলেন। বাবা সাড়ম্বরে তঁfহার কালে বীজমন্ত্র দান করিলেন এবং রাত্রি এক প্রহর অতীত হইলে চাটুযো মহাশয় ও মাধিকে দেবালয়ের পশ্চাতে আশশেওড়ার ঝোপের মধ্যে বসাইয়া রাখিয়া আসিলেন । ঝোপের মাঝখানে থানিকট স্থান ‘বুন্দাবন কুগুলী” যজ্ঞের জন্য পরিষ্কার করিয়া, রাগ হইয়াছিল। গিরিশ চাটুয্যে মহাশয় পদ্মাসনে বসিয়া মাধির দিকে একবার চাহিয়া দেখিলেন, তাহার মন্ত্র ভুল হইয়া যাইবার উপক্রম হইল । এমন সময় বাব! আসিয়া ভয়কে মুখোমুখী দুই আসনে বসাইয়া জপের প্রণালী দেখাইয়া দিয়া চলিয়া গেলেন । Ես রাত্রি গভীর হইয়া আসিতেছিল। মাধি আঁচল দিয়া মশ ক্রীড়াইতেছিল আর মাঝে মাঝে গলার সাক্তনৱটি নাড়িয়া চাড়িয়া দেখিতেছিল । চাটুযো মহাশয় নির্মীলিত নেত্রে ঢুলিতে ঢুলিতে বিড় বিড় করিয়া মন্ত্রজপ করিতেছিলেন। জপ যখন দেড় হাজারের কোঠায় গিয়া পৌছিয়াছে তখন গণপতিনাথের চরণামৃতের প্রসাদাং নিদ্রাবিষ্ট হইয়া চাটুযে মহাশয় মাধি গোপিনীর চরণপ্রান্তে পড়িয়া গেলেন । মাৰি চাটুয্যে মহাশয়কে জাগাইতে যাইতেছিল এমন সময় কে পিছনের ঝোপের মধ্য হইতে কহিয়া উঠিল, “চুপ ” মাধি মূখ ফিরাইয়া দেখিল, স্বয়ং বাবা ! বাবা পরিস্কার বাংলায় কহিলেন, “চেচিও না ! চৌকীদার শুনলে এখুনি বেঁধে থানায় নিয়ে যাবে। গয়না-চুরির ফ্যাসাদে পড়বে—” মাধি হতভম্ব হইয়া কহিল, “তবে ? “চলে এস।” বলিয়া বাবা একরূপ তাহাকে টানিয়াই পথে লইয়া আসিলেন । গভীর অন্ধকার। চারিদিক নিস্তব্ধ। শুধু একখানি