পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wob AMMMAMMAMAAASAAAS গঙ্গাচরণ বলিলেন, “যে চুলো থেকে সব-কিছু আসে। জমিজমা বাধা দিয়েও ওকে মানুষ করতে হবে । ওর জন্তেই ত সব । ও ভাল করে পাস করলে, তখন ওর উপার্জন খায় কে ?” গৃহিণী বলিলেন, “আমরা মরলে পরে বিধবা মেয়েট কি পথে বসবে ? দেশের ঘরখানা থাকুলেও সেখানে সে মাথা গুজে থাকৃতে পারত, না হয় ধান ভেনে থেত । সেটাও ঘুচিয়ে দিচ্ছ ?” গঙ্গাচরণ বলিলেন, “অত ভাবতে গেলে সংসারে কোনো, কাজ করা চলে না, হাত পা বাধা হয়ে পড়ে । থোকা কি বোনকে দুমুটাে খেতেও দেবে না ?” স্বরবালা বলিলেন, “বোনকে যা খেতে দেবে, তার ত নমুনা নিত্যি দেখতে পাচ্ছি। রোজ মেয়েটাকে নাকের জলে চোখের জলে করে, আদ্ধেক দিন তার পেটে ভাত ষায় না। হতভাগীর কপালই মন্দ, না হ’লে ভাইয়ের লাথি বাট খেতে আবার এই বাড়ি ফিরে আসে ?” গঙ্গাচরণ চটিয়া বলিলেন, "ছেলের কিছুই ত তুমি ভাল চক্ষে দেখ না । দশট নয়, পাচটা নয়, একটা ত ছেলে, তার নিন্দে তোমার মুখে রাত দিম লেগে আছে । যথন হয়নি তখন ত ছেলের জন্যে দুচোখে ধারা বইত ।” স্বরবালা বলিলেন, “ষাক গে, কথা বাড়িয়ে লাভ কি ? দাও গে যা ও জমি বাধা । কিরণের কথা আগেই বা আমরা কি ভেবেছি, যে এখন ভাবতে বসব ? লোহাসিঁদুর বজায় রাখবার পথ ত আমরা জেনে শুনে বন্ধ করেছি। তেকেলে বুড়োর হাতে মেয়েটাকে দিয়ে দিলাম, তার আদেষ্টে সুখ হবে কোথা থেকে ?” কর্তা বলিলেন, “অদৃষ্টে না থাকূলে মুখ কিছুতে হয় না, মানুষকে ছযতে যাওয়া বৃথা । দ্বিতীয় পক্ষের বউও ড্যাঙ ড্যাঙ, করে সি হুর মাথায় নিয়ে চলে যায়, আবার প্রথম পক্ষের বউও বিধবা হয় । যার ষা ভাগ্যলিপি । আর একটা কথা ভেবে দেখ ছ না । আমার ছেলে যদি বি-এ অবধি পাস করে যায়, তাহলে তার মত যোগ্যপাত্র বাজারে বেশী থাকৃবে না । ছেলের বিয়ে দিয়েই জমিজমা সব ছাড়িয়ে নিতে পারব ।” রান্নাঘরে উকুনের আঁচ বহিয়া যাইতেছিল, কিরণের প্রবাসী—ফাস্তুন, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড আজ আবার একাদশী, কাজেই গৃহিণী তাড়াতাড়ি চলিয়া গেলেন । কিরণ ঘর হইতে কখন উঠিয়া আসিয়৷ ইহারই মধ্যে তরকারি চড়াইয়াছে, না হইলে অনঙ্গের খাওয়ার সময় সব রান্না হইয়া উঠিবে না। তাহা হইলে বাবা এবং ভাই মিলিয়া মায়ের যা আপ্যায়ন করিবে, তাহা তাহার জানাই ছিল । মা ঘরে ঢুকিয় তাহাকে ঠেলিয়া সরাইয়া দিলেন। বলিলেন, “আবার মরতে এলি কেন এখানে ? তখন না বারণ করে গেলাম ?” কিরণ বলিল, “ঘরে বসে কেবল ঝগড়াই কবৃছ, এ দিকে আঁচ যে বয়ে যায় ? তারপর থেকে ষখন হেনস্ত। করবে, তখন ত কাদতে বস্বে ?” সুরবালা বঁটিখান টানিয়া বসিয়া গেলেন । মেয়েকে বলিলেন, “করে করবে, তুই বা ত! যে কটা দিন আমি আছি, একাদশীর দিনট। আর আগুনতাতে পুড়তে 으 1” কিরণ খানিক দূরে সরিয়া বসিল, তাহার পর বলিল, “তুমি যাবার পরও যদি ভগবান বাচিয়ে রাখেন, তাহলে যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাব, এ সংসারে আর থাকবে না ।” স্বরবালা বলিলেন, “মিথ্যে নয় বাছ, কি ষে তোর দশ হবে, ভেবে আমার আর মুখে ভাত রোচে না।” কিরণ মান হাসি হাসিয়া বলিল, “আর এখন ভেবে কি হবে মা ? বাঙালী ঘরের বিধবা তার জন্য আবার ভাবনা ।” মা উত্তর দিবার কিছু খুজিয়া পাইলেন না, মেয়েও উঠিয়া গেল । অনঙ্গমোহন কলেজে ভৰ্ত্তি হইল এবং বাক্স বিছানা বাধিয়া কলিকাতার মেসে চলিয়া আসিল । বাড়ির সঙ্কীর্ণ গণ্ডীর ভিতর হইতে মুক্তি পাইয়া সে যেন বাচিয়া গেল। এখানে তাহার মত আধুনিক আলোকপ্রাপ্ত ছেলের ডানা মেলিবার যথেষ্ট স্থযোগ সুবিধা ছিল । কলেজের মেসে কি পরিমাণ খরচ হয়, তাহা গঙ্গাচরণের ঠিক জানা ছিল না, কাজেই ছেলে টাকা চাহিলে সাধ্য মতে তিনি দিতে ক্রটি করিতেন না ।