পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ? অনঙ্গ বাছিয়া বাছিয়া ভাব করিল যত-সব উপরচালাক মুখফোড় ছেলের সঙ্গে। থিয়েটার বায়োস্কোপ দেখিয়া, কলেজের ডিবেটিং সোসাইটির মুখ উজ্জল করিয়া অবসর-মত পড়াশুনা একটু আধটু করিয়া তাহার দিন বেশ কাটিতে লাগিল । রবিবারে বাড়ি যাইতে বলিলেই তাহার মাথায় বাজ পড়িত। সেই দিনটা ছিল তাহার চিত্তবিনোদনের দিন, সেটাকে এমনভাবে মাঠে মারা যাইতে দিতে সে কিছুতেই রাজী ছিল না । বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্ব তাহার দুরন্তপন, গুণ্ডামি অনেকটাই কমিয়া গিয়াছিল। কিন্তু নিজের সুখ ও সুবিধা ভিন্ন আর কিছু সে ভাবিতেই পারিত না । অতিশয় ইনটেলিজেন্ট ছেলে না পড়িয়াও টপাটপ পাস করিয়া যায় এই স্বনামটা বজায় রাখিবার জন্ত রাত্রে তাহাকে লুকাইয়া খানিকট পড়িতে হইত, দিনের বেগাট। অবশ্ব ফুৰ্ত্তি করিয়াই সে কাটাইয়া দিত। বড় ছুটির দিনগুল প্রথম বৎসর বাধ্য হইয়া মা বাপের কাছেই কাটাইতে হইল। দ্বিতীয় বৎসর গরমের ছুটিতে শরীর খারাপের অজুহাত করিয়া সে দাৰ্জিলিং পলায়ন করিন্স । অযশু বাপকে বেশী ভোগায় নাই । নানারকম ফন্দি ফিকির করিয়া, ডাক্তারের সার্টিফিকেট জোগাড় করিয়া সে লুইস জুবিলি স্যানিটেরিয়মে একটা ফ্রী সিট ংগ্ৰহ করিল এবং ইন্টার ক্লাসেই চলিয় গেল। অবশু আবশ্বকীয় শীতবস্ত্রের জোগাড় করিতে স্বরবালার হাতের রুলি জোড়া বিক্রয় করিতে হইল। এবার তাহার শাখা সম্বল হইল, বাকি গহনা বিক্ৰী করিয়া হিরণের বিবাহের পর জমি ছাড়ান হইয়াছিল। ছুটিট। তাহার বড় আনন্দে আরামে কাটিল । একে-ত খাওয়া শোয়ার এমন নবাবী ব্যবস্থা, ষে তাহাতে অনঙ্গের মত স্বধী প্রকৃতির প্রাণী খুনী না হইয়াই পারে না। তাহার উপর এমন পরিপূর্ণ স্বাধীনতা, রাস্তায় ডিগবাজী খাইলেও কেহ খুৎ ধরিবার নাই। অনঙ্গ মনে মনে ভাবিল, “লোকে যে কেন হোম সিৰু হয়, আমি কিছু ভেবেই পাই না, আমার ত বাড়ির থেকে যত দূরে যাই, তত ফুঞ্জি বাড়ে।” একটা মাস তাহার যেন একটা দিনেরই মত ক্ষতগত্তিতে কাটিয়া গেল। و هسسعه ها : মেয়ের মান JVషి میستم নিজের রূপ এবং বুদ্ধির প্রশংসা শুনিতে না পাইলে অনঙ্গের মোটেই স্থবিধা হইত না, সবই তাহার কাছে বিস্বাদ লাগিত । সৌভাগ্যক্রমে সেটাও তাহার অভাব হইল না । স্তানিটেরিয়মে বুদ্ধগোছের বাঙালী ভদ্রলোকের রীতিমত ভিড়, তাহাদের ভিতর অনেকেই এই অতি প্রিয়দর্শন যুবকের ভক্ত হইয়া উঠিলেন। কথাবাৰ্ত্তায় পরের চিত্ত আকর্ষণ করিতে অনঙ্গের জুড়িদার কমই ছিল, এই ক্ষমতাটাও সে কাজে লাগাইবার বেশ সুযোগ পাইল । - প্রথম কয়দিন সে বেড়াইতে ব্যস্ত ছিল, তাহার চারিদিকে কাহার। বাস করিতেছে, সে-খোজ বিশেষ করে নাই । ক্রমেই চারিদিকে তাহার নজর পড়িতে লাগিল। অনঙ্গ আবিষ্কার করিল যে, কেবল বৃদ্ধ বাঙ্গালী বাবুই এখানে নাই, অন্তরকম মাহুষও অনেকগুলি আছে। অতি নিকটেই এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক পরিবার লইয়া আছেন । তিনি, তাহার স্ত্রী এবং দুটি ছেলে মেয়ে। মেয়েটি বেশ বড়, দেখিলে বছর কুড়ি বয়স মনে হয়, ছেলেটি অনেক ছোট, বারো-তেরো বৎসরের বেশী হইবে না । মেয়েটি দেখিতে কিছু স্বন্দরী নয়, রং ত রীতিমত কালোই। তবে মুখে বেশ একটি সতেজ শ্ৰী আছে । শরীরে বা মুখে কোথাও জড়তার লেশমাত্র নাই, বেশ সপ্রতিভ আর কর্মিষ্ঠা । তাহাকে অনঙ্গ কোনো সময়ে চুপ করিয়া বসিয়া থাকিতে দেখিত না। মা বাপকে সে শিশুর মত যত্ন করিত, তাহাদের সেবার কোথাও এতটুকু ক্রটি ছিল না। বাকি সময় ভাইকে পড়াইভ, সকলে মিলিয়া বেড়াইতে যাইত এবং মেঘলা সন্ধ্যায় প্রায়ই এস্রাজ বাজাইয়া বাপকে গান শুনাইতে বসিত । গলাটা মন্দ নয়, তবে একেবারে খুব যে চমৎকার তাহাও নয় । রূপ জিনিষটার দাম ছিল অনঙ্গের কাছে সকলের চেয়ে বেশী। বিশেষ করিয়া নারীর মধ্যে রূপ ভিন্ন আর কোনো জিনিষ ষে লক্ষ্য করিবার মত থাকিতে পারে, তাহা সে মুনেই করিত না । পিতামাতা তাহার বিবাহ দিয়৷ অনেক টাকা লাভ করিতে চাহেন, তাছা সে জানিত। কিন্তু ধেমেয়ের রূপ তাহার রূপক্ষেও হার খণ্ডে না