পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বংশানুক্রমিত—ফরাসী দার্শনিক রিবোর De la Hérédité গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ । অনুবাদক—শ্ৰীহরিনাথ চট্টোপাধ্যায় । মুল্য ২\ । যে-সকল উপায়ের দ্বারা ভাষা পুষ্টিলাভ করে, বিদেশীয় গ্রন্থের অনুবাদ তাহাদের অন্যতম। অধিকাংশ শিক্ষিত ব্যক্তিরই ইংরেজী ভাষার সহিত পরিচয় থাকায় ইংরেজীতে প্রকাশিত গ্রন্থের অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা অনেকে হয়ত স্বীকার করিবেন না, কিন্তু ফরাসী গ্রস্থাদির অনুবাদ সম্বন্ধে সে কথা থাটে না। যুক্ত হরিনাথ চট্টোপাধ্যায় মহাশয় রিবেরি 0e la I]। ধlit(' নামক বিখ্যাত গ্রন্থ ফরাসী ভাষা হইতে অনুবাদ করিয়া বাঙ্গালীর কৃতজ্ঞতাভাজন হইয়াছেন। রিবো একাধারে বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক বলিয়া সুধীসমাজে প্রসিদ্ধ। Heredity বা বংশানুক্রমিতা সম্বন্ধে তিনি অনেক গবেষণা করিয়াছেন । উiহার মতামত বাঙালী পাঠকের জানিবার সুবিধা হইল । বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লিখিতে হইলে পদে পদে পরিভাষার অভাবে কষ্ট পাইতে হয় এবং অনুবাদককে অনেক সময়েই পরিভাষা বৃষ্টি করিতে হয়। পরিভাষা সব সময়ে শ্রুতিমধুর করা দুরূহ। পরিভাষার দোষে ও মূল গ্রন্থকারের লিখনভঙ্গী অবিকৃত রাথিবীর চেষ্টা করায় অনুবাদে প্রসাদগুণের অভাব হইয়াছে। হরিনাথবাবু প্রভূত পরিশ্রম করিয়াছেন, কিন্তু আমরা বলিতে বাধ্য যে, রিবোর গ্রন্থে বংশানুক্রমিতার অনেক নুতন তথ্যের উল্লেখ নাই, এ কারণে র্তাহার পুস্তকের তেমন আদর না হইতে পারে। গ্রন্থে মুদ্রাকরপ্রমাদ যথেষ্ট থাকিয়া গিয়াছে। পাঠক একটু কষ্ট স্বীকার করিয়া পুস্তকখানি পড়িলে অনেক কৌতুহলপ্রদ বিবরণ দেখিতে পাইবেন । ঐগিরীন্দ্রশেখর বসু নূতনের সন্ধান—গ্ৰহভাষচন্দ্র বহু প্রণীত। ১৫২ পৃষ্ঠা, দাম ১০ টাকা । স্বভাষবাবুর “লুতনের সন্ধান” পড়িলাম। ভালই লাগিল। ১৯২৭ সালের মধ্যভাগে মান্দালয় জেল হইতে মুক্তি পাইবার পর ১৯৩• সালের জামুরারি মাদ পৰ্য্যন্ত ভারতবর্যের নানাস্থানে ছাত্র ও যুবজান্দোলন সম্পৰ্কীয় বক্তৃতাপ্রসঙ্গে ইংরেজী ও বাংলায় স্বভাষচন্দ্র জাতীয় নবজাগরণের যে আভাষ দিয়াছিলেন এবং ভারতীয় চিন্তাধারায় যে নুতনের স্রাত আনয়নে প্রয়াসী হইয়াছিলেন, এই পুস্তকে তাহারই পরিচয় দেওয়া হইয়াছে । জাতীয় স্বাধীনতা-সংগ্রামে নিরত সুভাষচন্ত্রের মুক্তির আদর্শ কিরূপ সৰ্ব্বতেীব্যাপী তাহার বর্ণনাপ্রসঙ্গে তিনি বলিয়াছেন—“স্বাধীনতা বলিতে আমি বুঝি সমাজ ও ব্যক্তি, নর ও নারী, ধনী ও দরিদ্র সকলের জন্য স্বাধীনতা। ইহা শুধু রাষ্ট্ৰীয় বন্ধনমুক্তি নহে, ইহা অর্থের সমান বিভাগ, জাতিভেদ ও সামাজিক অবিচারের নিরাকরণ ও সাম্প্রদায়িক সঙ্কীর্ণত ও গোড়ামি বর্জনও স্বচিত করে।" জাতীয় জীবনের যত দিক দিয়া প্রকাশ হইতে পারে, স্বাধীনতায় অংশিকৰূপ ততগুলি। এই স্বাধীনতা লাভ করিতে হইলে সমগ্র জাতীয় শক্তি, বিশেষতঃ ছাত্র ও যুবশক্তি সঙ্ঘবদ্ধ করিতে হইবে এবং আমাদের মাতৃজাতিকে প্রকৃত শক্তিস্বরূপিণী করিতে হইবে। যাহারা মনে করে যে, রাষ্ট্রীয় বন্ধন হইতে তাহারা দেশকে মুক্ত করিবে, কিন্তু সমাজের পূর্বাবস্থা বজায় রাখিবে—অথবা যাহারা মনে করে যে সামাজিক বন্ধন সব চুৰ্ণ করিবে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে কোনে বিপ্লব আনিবে না, তাহারা সকলেই ভ্রান্ত । আমাদের এই শত-ছিদ্র-যুক্ত পুতিগন্ধময় সমাজের দ্বারা পূর্ণ-স্বাধীনতা লাভ কোনোদিন হইবে না। পূর্ণ-স্বাধীনতা লাভ করিতে হইলে সমস্ত জাতিকে মুক্তিলাভের জন্ত ক্ষিপ্তপ্রায় হইতে হুইবে । কুভাষচন্দ্রের মুখে নুতন পন্থা সন্ধানের এই বার্তা শুনিয়া আমরা আশান্বিত হইলাম । বস্তুতঃ বইখানির মধ্যে অনেক কথাই রহিয়াছে যাহা শুদ্ধমাত্র বাংলার তরুণ নেতার নিজস্ব সম্পত্তি নহে। ইহার পূৰ্ব্বে বাংলার ও বাহিরের অন্যান্ত নবীন কৰ্ম্মীর মুখেও ইহা শুনিয়াছি। দুঃখের কথা এই যে, শুদ্ধমাত্র বক্ততাপ্রসঙ্গে মুখের কথা ন হইয়। যদি এই আদর্শ ও কৰ্ম্ম-প্রণালী ইহাদের মনের কথা হুইত, তাহ হইলে কি বাংলা, কি অন্যত্র, রাষ্ট্র ও ছাত্র-আন্দোলনে অহেতুক কলহ ও আত্মস্তরিতার স্থান থাফিত না । সুভাষচন্দ্রের বইখানির বাধাই ও ছাপা সুন্দর হইয়াছে । ভাষার সৌন্দৰ্য্যও উপভোগ্য বটে। এইরূপ সুললিত ও প্রাণস্পশী ভাষায় কুভাষবাবুর রচিভ অন্যান্ত পুস্তকের প্রতীক্ষায় রছিলাম। শ্ৰীনলিনাক্ষ সান্যাল শকুন্তলা—মহাকবি কালিদাসের পদানুসরণে—শ্ৰীঅপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বিরচিত । গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সঙ্গ, ২•৩।১।১ কর্ণওয়ালিস ষ্ট্রট, কলিকাতা । মূল্য এক টাকা । নাটকের মধ্য দিয়া বাঙ্গালা সাহিত্যের পুষ্টিসাধনে এবং বাঙ্গাল রঙ্গমঞ্চের উন্নতি সাধনে স্ত্রীযুক্ত অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের কুক্তিত্ব সৰ্ব্বজনবিদিত। ইহার রচিত নাটকগুলি বাঙ্গালী জনসমাজে সৰ্ব্বত্রই বিশেষভাবে আদৃত। সম্প্রতি ইহঁার অনূদিত শকুন্তলা নাটকথানি পাঠ করিয়া বিশেষ আনন্দ লাভ করিয়াছি । কালিদাসের শকুন্তলার মত একখানি শ্রেষ্ঠ-সাহিত্য-স্বষ্টির ভাল অনুবাদ থাকা যেকোনও ভাষার পক্ষে গৌরবের কথা। স্ত্রীযুক্ত অপরেশবাবুর অনুবাদ বাহির হওয়ায় বাঙ্গালা ভাষা এইরূপ একখানি ভাল অনুবাদ লাভ করিল । যে দুইটী গুণ থাকিলে কোনও অম্বুবাদ-গ্ৰস্থকে ভাল বলা যায় সে দুটা গুণ শ্ৰীযুক্ত অপরেশবাবুর শকুন্তলায় দেখিতেছি । ইহা মুলালুসারী, এবং মূলের রস যথাযথ রক্ষা করিতে সমর্থ হইয়াছে। মূল গ্রন্থ রচয়িতার উক্তিকে অবিকৃত রাখিয়া তন্নিহিত রস ও ভাবপ্রবাহকে ভাষাস্তরে ফুটাইয়া তোলা—এইখানেই অনুবাদকের কৃতিত্ব। প্রত্যেক ভাষার স্বকীয় ও স্বতন্ত্র একটি বৈশিষ্ট্য আছে। অন্ত ভাষায় সেই বৈশিষ্ট্যকে যথাসগুয অক্ষুণ্ণ রাখিতে পারিলেই অম্বুবাদের সার্থকত। বাঙ্গালায় সংস্কৃত গ্রন্থের অম্বুবাদকালে সাধারণতঃ অনুবাদকগণ সে বিরে অবহিত হন না, এইহেতু প্রায়ই সংস্কৃত