পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত শ্ৰীবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রেলে ও ষ্টীমারে অনেক দিন পরে চড়া। দুজনেই হাফ ছাড়িয়া বাচিল। দুজনেই খুব খুগী। অপর্ণাঞ্চ পল্লীগ্রামের মেয়ে, শহর তাহারও ভাল লাগে না। অতটুকু ঘরে জীবনে কোনোদিন থাকে নাই, সকাল ও সন্ধ্যাবেল যথম সব বাসাড়ে মিলিয়া একসঙ্গে কয়লার উকুনে আগুন দিত, ধোয়ায় অপর্ণার নিঃশ্বাস বন্ধ হইয়া আদিত, চোখ জলা করিত, সে কি ভীষণ যন্ত্রণ ! সে নদীর ধারের মুক্ত আলো-বাতাসে প্রকাও বাড়িতে মাতৃষ হইয়াছে, এসব কষ্ট জীবনে এই প্রথম,—এক একদিন তাহার তে৷ কান্ন পাইত । কিন্তু এই দুই বৎসরে সে নিজের সুখসুবিধার কথা বড় একটা ভাবে নাই। অপুর উপর তাহার একট। অদ্ভুত স্নেহ গড়িয়া উঠিয়াছে, ছেলের উপর মায়ের স্নেহের মত। অপুর কৌতুকপ্রিয়তা, ছেলেমাহৰ্ষী, খেয়াল, সংসারানভিজ্ঞতা, হাসিখুসী, এসব অপর্ণার মাতৃত্বকে অদ্ভুতভাষে জাগাইয়ু তুলিয়াছে। তাহার উপর স্বামীর দুঃখময় জীবনের কথা, ছাত্রাবস্থার দারিদ্র্য ও অনাহারের সঙ্গে সংগ্রাম-সে সব শুনিয়াছে। সে সব কথ। অপু বলে নাই, তাহার বলিতে লজ্জ করে, সে সব বলিয়াছে প্রণব । ন: থাইয়া যে-কেহ কষ্টপায়, অপর্ণার একথা জানা ছিল না। সস্থল ঘরের আদরে লালিত মেয়ে, দুঃখকষ্টের সন্ধান সে জানে না। সে মনে মনে ভাবে এখন হইতে স্বামীকে সে সুখে রাখিবে । এটা একট। নেশার মত তাহাকে পাইয়াছে । অল্প f:নই সে আবিষ্কার করিয়া ফেলিল, অপু কি কি থাইতে পবাসে। তালের ফুলুরি সে করিতে জনিত না, কিন্তু পু থাইতে ভালবাসে রলিয় মনসাপোড়ায় নিরুপমার ছৈ লিখিয়া লইয়াছিল। এখানে সে কতদিন অপুকে কিছু না জানাইয়া বাজার *ইতে তাল জানাইয়াছে, সব উপকরণ জানাইয়াছে। অপু হয়ত বর্ষার জলে ভিজিয়া আপিস হইতে বাসায় ফিরিয়া হাসিমুখে বলিত— কোথায় গেলে অপর্ণ ? এত সকালে রান্নাঘরে কি, দেখি ? পরে উকি দিয়া দেখিয়া বলিত তালের বড় ভাজ হচ্চে বুঝি ! তুমি জানলে কি করে--ব| রে 1. - অপর্ণ উঠিয়া স্বামীর শুকুনা কাপড়ের ব্যবস্থা করিয়া দিত, বলিত, এস না, ওখানেই বসে থাবে, গরম গরম ভেজে দি—অপুর বুকটা ছাৎ করিয়া উঠিত। ঠিক এই ভাবেরই কথা বলিত মা। অপুর অদ্ভুত মনে হয়, মায়েরই মত স্নেহশীল, সেবাপরায়ণা, সেইরকমই অন্তর্যামিনী । বাৰ্দ্ধক্যের কৰ্ম্মক্লান্ত মা যেন ইহারই নবীন হাতে সকল ভার সপিয়ু দিয়া চলিয়া গিয়াছে। মেয়েদের দেখিবার চোখ তাহার নতুন করিয়া ফোটে, প্রত্যেককে দেখিয় মনে হয় এ কাহারও মা, কাহারও স্ত্রী, কাহারও বোন। জীবনে এই তিনরূপেই সে নারীকে পাইয়াছে, তাহাদের মঙ্গলহন্তেয় পরিবেশনে এই ছাব্বিশ বৎসরের জীবন পুষ্ট হইয়াছে, তাহাদের কি চিনিতে বাকী আছে তাহার ? - ষ্টীমার ছাড়িয়া দুজনে নৌকায় চড়িল। অপর্ণায় খুড়তুতে ভাই মুরারী উহাদের নামাইয়া লইতে আসিয়াছিল, সেও গল্প করিতে করিতে চলিল। অপর্ণ ঘোমটা দিয়া একপাশে সরিয়া বসিয়াছিল। হেমস্তঅপরাহ্লের স্নিগ্ধ ছায়া নদীর বুকে নামিয়াছে, বা দিকের তীরে সারি সারি গ্রাম, একখানা বড় হাড়ি-কলসী বোরাই ভড় যশাইকাটির ঘাটে বাধা । , , অপুর মনে একটা মুক্তির জাননী—জার মনেও হয় না যে জগতে শীলেদের আপিসের মত ভয়ানক স্থান আছে । তাহার সহজ আনন্দ-প্রবণ”মন আবার লাচিয়া উঠিল, চারিধারের এই হামলতা, প্রসার, নদীজলের গন্ধের সঙ্গে তাহার যে নাড়ীর যোগ আছে। -