পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9ჯ) তবু এই স্বল্প কয়েকটি দিন-রাত্রির মধ্যেই ষ্টেশনমাষ্টারের সঙ্কীর্ণ কোয়ার্টারটির হাওয়া যেন বদলে গেল । আজ হুদের মাঝখানে পাহাড়ে চড়া, কাল পাহাড়ের কোলে পিক্‌নিক্‌ করা, হাসি গান, ছুটোছুটি.. একটি প্রাচুর্য্য ও পরিতৃপ্তির স্বর সংসার-শ্রীকে উজ্জ্বল ক’রে তুলেছে— কিন্তু বিজন আর উমা বেশী দেরি করতে পাবুলে না। দু-দিন পরেই বিজনকে কলকাতায় একটা ‘কেস’ লড়তে হ’বে ; পৌছতে না পারলে মক্কেলের কাছে আক্কেল সেলামী দেবার প্রয়োজন হ’তে পারে । তাই, ধীরে ধীরে বিদায়ের দিনটি—যাত্রার মুহূৰ্ত্তটি আসন্ন হয়ে এল । সরযু উমাকে আড়ালে ডেকে এনে বললে, “কম্লীর সঙ্গে দেখা হ’লে আমার কথা বলিস—রাখালীকেও । ওর চিঠি দেয় না কেন, ওদের ঠিকানাই ব৷ কি—জিজ্ঞেস করবি ।” প্রণাম আশীৰ্ব্বাদ, চোখের জলের মধ্যে হাসি আনবার বৃথা চেষ্টা, আবার কবে দেখা হবে—এই সব মামুলী ব্যাপারগুলিও শেষ হয়ে গেল । বিজন ও উমা সরযু এবং রমেশকে ষ্টেশনে দাড় করিয়ে রেখে ট্রেনে উঠে ব’সূল। জগর মা জগন্নাথ স্বয়ং চার টাকা করে বকশিস পেলে । বিজন সরযুর হাতে দেবার জন্যে দু’খান নোট বার ক’রে বললে, “খোকাখুকীদের মিষ্টি কিনে দেবেন—ওদের জন্তে ত কিছুই জানতে পারিনি ।” সরযু বললে, “অত টাকার মিষ্টি ওরা খেতে পারবে কেন । আর গেলে ৪ অসুখ হ’বে—ডাক্তারের খরচ জোগাবে কে । ওটা তোমারই কাছে থাকৃ ভাই ।” 赛 妾 義 寮 -“ভারি বিশ । ভাল লাগে না, ভাল লাগে না ।” দিন ও রাত্রিগুলি ধেন অকারণ ও অনাবশ্যকভাবে দীর্ঘ হয়ে পড়েছে। আশ্চর্য্য ! উমা আর বিজন—ছোট দুটি প্রাণী, কিন্তু তারাই যেন এই স্বশৃঙ্খল সংসারটকে এলোমেলে ক’রে দিয়ে পালিয়ে গেছে। তাদের অ-বারণ প্রাণের প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড দুরন্ত খেয়াল দিয়ে তার ঘটিয়ে দিয়ে গেছে বিরাট পরিবর্তনের স্বর । উমার মুখে সরযু শুনেছে—বিস্ময়কর শহরের বিচিত্র পথঘাট, নব-লব ঐশ্বর্য্যের কথা—য সে দেখে আসেনি। রাখালী, কমলী, তাদের সেই পচ পুকুর আর বনঝোপে ভরা জন্মপল্লী সব যেন অকস্মাৎ ঘুম-ভেঙে সরযুকে হাতছানি দিয়ে ডাকৃছে—বৃহত্তর মুক্ত জীবনের দিকে । রমেশ চিরকালের নিয়ম মেনে কলের ঘোড়ার মত থেটে চলেছে ; ক’দিনের গোলযোগে যেটুকু অবহেল! দেখা গিয়েছিল, সেটুকু সে সুদক্ষদ্ধ ভরিয়ে তুলছে । বিজন ভারি আমুদে লোক-এ’কথা সে এক এক দিন স্বীকার করে সরযুর কাছে । উমা মেয়েটিও খাস । ...এই পৰ্য্যস্তই, রমেশ আর কিছুই বলে না । ছেলেমেয়েগুলে। তেমনি করে বিনিয়ে বিনিয়ে কঁপদে–বিশ্রী : দুধ পেতে এক মিনিট দেরি হয়ে গেলে মাটিতে প’ড়ে গড়াগড়ি দেবে আর অবিরাম চীংকার । ছোটটার সঞ্চি কাশি লেগেই আছে—মূপে কালী মাখছে, চোখ দুটে যেন বুজে আসছে—যাবেও হয়ত কোন দিন । কোন কোন রাত্রে সরযুর মনে হয়, এবার সে শ্রাস্ত হয়ে পড়েছে, তার ছুটি চাই—অন্ততঃ কিছুদিনের জন্য। কিছুদিনের জন্তে সে চায় নিরুৎসাহ আলস্তাটিকে প্রাণভরে উপভোগ করতে –কিন্তু এ সব তাকে দেবে কে, পাবেই বা কোথায় ? ন, মুক্তি নেই– ও একটা মায়া । সেদিন সন্ধ্যার পর আকাশ মেঘে ছেয়ে গেছে— চিল্কার তীরে গাছগুলোয় ব্যাকুল মৰ্ম্মরধ্বনি জেগেছে ! বৃষ্টি আসেনি বটে, কিন্তু দেরিও বড় বেশী নেই। রমেশ দেয়ালগিরির আলোয় ব’সে ব’সে ষ্টেশন-রুমে হিসেব মিলাচ্ছিল । সরযু এসে চেয়ারের পিছমটিতে দাড়াল। রমেশের কাধে হাত রেখে বললে, “কি করচে ?” কণ্ঠস্বরে একটি মধুর স্নিগ্ধতা ! রমেশ ঘাড় না তুলেষ্ট হাসবার চেষ্টা করে বললে, “ই কি ! একেবারে অন্দর ছেড়ে সদরে ! কি খবর বল শুনি !”