পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

من سيا প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৭ তারপরে বাজারের চত্বরে গেলুম। একটী বড়ো গোছের গুজরাট খোজার কাপড়ের দোকানে উঠলুম। স্বদেশীয় ব’লে এর অত্যন্ত খাতির করলে, জোর ক’রে সোড লেমনেড খাওয়ালে। বোম্বাইয়ে খোজাদের খান পাচেক দোকান আছে বাদুঙ-এ । রবীন্দ্রনাথের বলিদ্বীপের আগমনের কথা এদের মধ্যে কেউ কেউ শুনেছে । এতগুলি ভারতবাসীকে দেখে এরা ভারী খুশী হ’য়ে গেল । যে দোকানটাতে আমরা প্রথমে উঠি, তার মালিকের নাম ফিদা হোসেন । লোকটী বেশ । প্রায় বিশ বছর বলিদ্বীপে কাপড়ের কারবার ক’রছেন, এখন বেশ সঙ্গতিপন্ন লোক হ’য়ে দাড়িয়েছেন । বাদুঙ শহরের একটু পূবে সমুদ্রের ধারে একট বাগান বাড়ী কিনেছেন, তার এই বাগান বাড়ীর কাছেই মাল নামাবার ছোটো একটী বন্দর আছে ; নিজের মোটর ক’রে ফিদা হোসেন আমাদের সেখানে নিয়ে গেলেন। একজন ভারতবাসী এতদূরে এসে কেমন ক’রে নিজের প্রতিষ্ঠা ক’রে নিয়েছেন তা দেখে ভারী আনন্দ হ’ল। ফিদা হোসেন আর তার সঙ্গেকার একটী গুজরাট দোকানদারের কাছ থেকে বলিদ্বীপের সম্বন্ধে দুচারটে টুকিটাকি খবর পাওয়া গেল । ১৯০৮ সালে ডচেরী মানোয়ারী জাহাজ থেকে বাদুঙ শহরে গোলাবর্ষণ ক’রেছিল, সে কথা আমাদের ব’ললেল। বলিদ্বীপের লোকেদের খুবই প্রশংসা করলেন । বললেন, ‘ইয়ে লোগ অচ্ছে হৈ, কৌম বহুং বহাদুর হৈ, ওঁর হিন্দু আদমী হৈ, ইস বাস্তে ইন্‌মে সবর বহুত হৈ–বেশ লোক এর, জা’ত হিসাবে খুব সাহসী, কিন্তু এরা হিন্দু তাই এদের মধ্যে ধৈর্য্য খুব ? এদের দেশে বরকনে পরস্পরকে নিৰ্ব্বাচন ক'রে নেয় । বিবাহের রাতি অতি সরল, আর বিবাহ ভঙ্গ সহজেই হয় । বাপ মার অমত হ’লে বিবাহেচ্ছ ছেলে আর মেয়ে কোথাও পালিয়ে গিয়ে একত্র বসবাস করে, আর তাতেই তারা বিবাহিত ব'লে গণ্য হয়। বিয়ের সময়ে পদ গুর আসে, মন্ত্র-টক্স পড়ে। আমাদের একটা খুশী করবার জন্য ফিদা হোসেন আমাদের ব’ললেন, পুত্বাবুলাব, এরা হিন্দু বটে, কিন্তু এদের কতকগুলি আদৎ বড়ো খারাপ, ভারতবর্গের হিন্দুদের মতন এরা শুদ্ধাচারী নয়। আমরা বলিদ্বীপে খালি সৈর’, বা ভ্রমণ ক’রতেই আসি নি,—এদের রীতি নীতিও দেখতে এসেছি, এদেশের—ব্রাহ্মণদের মধ্যে সংস্কৃতের চর্চা আছে কিনা, শাস্ত্র-টাস্ত্র কি আছে সে সব দেখাও উদ্দেশু, এই কথা শুনে ফিদা হোসেন বললেন যে বছর কতক পূৰ্ব্বে ভারতের একজন সাধু বা পণ্ডিত বলিতে এসেছিলেন, তার উদেশ্ব ছিল সংস্কৃত পুথি সংগ্রহ করা ; তিনি আচারপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন, ফিদা হোসেন যত্ন ক’রে র্তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, তিনি নিজে রোধে খেতেন । তবে যে-রকম সংস্কৃত বইয়ের খোজে তিনি বলিতে এসেছিলেন সে-রকম বই তিনি পাননি। তার নামটা কি, আর কোন প্রদেশের লোক, ফিদা হোসেনের মনে নেই । র্তার বাগান-বাড়ী মালের গুদাম সব দেখিয়ে ফিদ হোসেন আমাদের ফিরতী পথে সানোর’ ব’লে একটী গ্রামের ভিতরে নিয়ে গেলেন । সেখানে একজন ওস্তাদ কাঠের খোদাই মিস্ত্রী আছে, সে চমৎকার মূৰ্ত্তি তৈরী ক’রে থাকে। ফিরতী পথে সমুদ্রের তীর আর বাদুড় শহরের মাঝে বা-হাতে একটা ছোটে রাস্ত ধ’রে সানোর গায়ে আমাদের মোটর এল। কাঠের মিস্ত্রির বাড়ীতে ছোটাে বড়ে অনেকগুলি মুক্তি দেথলুম,- সম্পূর্ণ তৈরী, আধা তৈরী, সবে হাত দেওয়া হয়েছে, নানা অবস্থায় । তিন চার জন সহকারী কাজ ক’রছে । শক্ত ভারী কাঠে তৈরী সব মৃষ্টি । স্বরেনবাবু বিশ্বভারতীর কলাভবনের জন্য গুটি তিনেক মূৰ্ত্তি কিনলেন । এই খোজারা আমাদের হ’য়ে ব’লে ক’য়ে দরট ন্যাঘা বা শস্ত ক’রে দিলেন ; এরা তোমাদেরই সমধৰ্ম্মী, এদের মধ্যে আবার পদগু আছেন, সাহেবদের কাছে যে দাম নাও সে দাম নিতে পারবে না, ইত্যাদি ব’লে । বাদুঙে ফিরে এর আমাদের বাসায় পৌছে দিয়ে গেলেন, আর রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা ক'রে গেলেন। দ্রেউএস এদের সঙ্গে মালাই ভাষায় আলাপ করলেন, রবীন্দ্রনাথের সম্বন্ধেও দুচারটে কথা ব’ললেন । এর কবিকে অভিবাদন ক’রে বিদায় নিলেন । পরে একদিন ফিদা হোসেন স্বয়ং আমাদের জন্ত স্বদেশীয় খাদ্য, চাপাটি কোর্শ্ব। হালুয়৷ প্রভৃতি এনে দিয়ে গিয়েছিলেন। বিদেশে এসে এই