পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা j অপরাজিত ما তোরঙ্গটার মধ্যে অনেকদিন আগে ছিল, সেখানাও বাহির করিয়া বসিল । ( ه د ) ইহার পূৰ্ব্বেও অপু সহর দেখিয়াছে, তবুও ট্রেন হইতে নামিয়া শিয়ালদহ ষ্টেশনের সম্মুখের বড় রাস্তায় একবার আসিয়া দাড়াইতেই সে অবাক হইয়া গেল। এরকম কাণ্ড সে কোথায় দেখিয়াছে ? ট্রাম গাড়ী ইহার নাম ? আর একরকমের গাড়ী নিঃশব্দে দৌড়িয়া চলিয়াছে, অপু কখনো না দেখিলেও মনে মনে আন্দাজ করিল ইহারই নাম মোটরগাড়ী । সে বিস্ময়ের সহিত দু একখানার দিকে চাহিয়া চাহিয়া দেখিতে লাগিল । ষ্টেশনের অপিস্ ঘরে সে মাথার উপর একটা কি চাকার মত জিনিষ বন বন বেগে ঘুরিতে দেথিয়াছে, সে আন্দাজ করিল উহাই ইলেকটিক পাখা । যে ঠিকানা তাহাকে তাহার বন্ধু দিয়াছিল, তাহা খুজিয়া বাহির করা তাহার পক্ষে এক মহা মুস্কিলের ব্যাপার, পকেটে রেলের টাইম টেবলের মোড়ক হইতে সংগ্রহ করা কলিকাতার যে নক্সা ছিল তাহা মিলাইয়। হ্যারিসন রোড খুজিয়া বাহির করিল। জিনিষপত্র তাহার এমন বেশী কিছু নহে, বগলে ছোট বিছানাটি ও ডান হাতে ভারী পুট্রলিটা ঝুলাইয়া পথ চলিতে চলিতে সামনে পাওয়া গেল আমর্হাষ্ট্র ষ্ট্রীট। তাহার পর আরও খানিক ঘুরিয়া সে পঞ্চানন দাসের গলি বাহির করিল । ৫৬১ নম্বরের বাড়ীটা একটা ছোট গোছের দোতালা বাড়ী, খোজ করিয়া জানিল অখিল বাবু সেখানে থাকেন বটে কিন্তু এখন আপিসে গিয়াছেন, বৈকাল ছটার এদিকে আসিবার কোনো সম্ভাবনা নাই। অপুর থাওয়াদাওয়া হয় নাই, সে মেসে জিনিষপত্র রাখিয়া--রাস্তার ধারের একটা দোকান হইতে ছয় পয়সার খাবার খাইয়া আসিল । অখিল বাৰু সন্ধ্যার আগে আসিলেন, কালে নাদুস হুদুস চেহারা, অপুর পরিচয় ও উদ্দেশু শুনিয়া খুসি হইলেন ও খুব উৎসাহ দিলেন। বিকে ডাকাইয়া তখনই খাবার আনাইয়া অপুকে খাইতে দিলেন, সারাদিন খাওয়া হয় নাই জানিতে পারিয়া তিনি এত ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন যে, নিজে সন্ধ্যাহিক করিবার জন্য আসনখানি মেসের ছাদে পাতিয়াও আহ্নিক করিতে ভুলিয়া গেলেন। গোটা পঞ্চাশেক টাকা মাহিনী পান, সওদাগরি -আপিসের কেরাণী আর কোথায় সন্ধ্যার পর ছেলে পড়ান—তাতেই কোনো রকমে চলে। সদাশিব লোক, একটা ভাঙ্গা তানপুরা বাজাইয়া মাঝে মাঝে মোট গলায় শুাম-বিষয়ক গান গাহিয়া থাকেন, ধার দিতে মুক্ত হস্ত, অভাব জানাইয়া চাহিলে এ পর্য্যস্ত কাহাকেও বিমুখ করেন নাই, যদিও ধার লইবার পর হইতেই দেখা-সাক্ষাং বন্ধ করিয়াছে এরূপ লোকের সংখ্যা কম নহে। বাড়ী গিয়াই পাঠাইয়৷ দিব বলিয়া কত লোক ধার রাখিয়া কলিকাতা হইতে চলিয়। গিয়াছে, এ পর্য্যন্ত তাহীদের আর কোনে সন্ধান অখিল বাবু পান নাই। এ সকল কথা অপু ক্রমে ক্রমে মেসের লোকের মুখে শুনিল । সন্ধ্যার সময় সে মেসের ছাদে শুইয়া পড়িল । সারাদিন বেড়াইয়া সে বড় ক্লাস্ত হইয়া পড়িয়াছে। একজন কে বলিতেছিল—গড়ের মাঠে আজ মোহনবাগান আর ব্ল্যাকওয়াচের খেলা আছে, দেখতে যাবে না হে ? অপু ভাবিল, ‘গড়ের মাঠ’, মোহনবাগান কথাগুলা এরা এত সাথারণ ভাবে উচ্চারণ করে কেন ?.এ সব নামের চারিধারে অনেকখানি রহস্য ও মহিমা জড়ানো আছে, তাহার মনের মধ্যে । ‘গড়ের মাঠ’ কথাটা বলিবার সময় যেন সকলকে চুপ করিয়া দিয়া ইটে গাড়িয়া বিশেষ আয়োজনের সহিত তবে নামটা উচ্চারণ করিতে হইবে। আর ব্ল্যাকওয়াচ ?...সে তো কথাই নাই।-- সে তো কলিকাতায় আসিয়াছে-মিউজিয়াম, গড়ের মাঠ দেখিতে পাইবে তো ?...বায়োস্কোপ দেখিবে ?... এখানে খুব বড় বায়োস্কোপ আছে সে জানে। তাহাদের দেওয়ানপুরে স্কুলে একবার একটা ভ্রমণকারী বায়োস্কোপের দুল গিয়াছিল, তাহাতেই সে জানে কি অদ্ভুত দেঞ্জিতে। তবে এখানে নাকি বায়োস্কোপে গল্পের বই দেখায়। সেখানে তাহা ছিল না—রেলগাড়ী দৌড়াইতেছে, একটা লোক হাত-পা নাড়িয়া মুখভঙ্গি