পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> S e প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড বোনদের মধ্যে সৰ্ব্বকনিষ্ঠ । বোনদের নাম ছিল সারদা, স্বথদা, জ্ঞানদা, নিস্তারিণী, লক্ষ্মী, নৃপময়ী ও প্রফুল্লময়ী। ভাই তিনটির নাম তারাপ্রসন্ন, শু্যামাপ্রসন্ন, দুর্গাপ্রসন্ন। আমার সৎবোন দুটির নাম অন্নদা ও সৌদামিনী । সৰ্ব্বপ্রথম মায়ের যে কন্যা হইয়াছিল সে খুবই অল্পদিনের ভিতর মারা যায়, সেইজন্য তা-র নাম রাখা হয় নাই । জ্ঞানদাকে আমার মনে পড়ে না, কারণ সেও পাচ বৎসর বয়সের সময় বসন্ত রোগে মারা যায় । অন্নদী ও সৌদামিনী দুইজনেই বেথুন স্কুলে পড়িয়াছিলেন। পিতার প্রথম পক্ষের স্ত্রী যিনি ছিলেন, তার স্বভাব বড়ই কর্কশ ও ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ ছিল । আমার ঠাকুরমা, তাহার নানা রকম দুর্ব্যবহারে অত্যন্ত জালাতন হইয়া আমার পিতার পুনরায় বিবাহ দেন। এই বেী-এর কোনও সস্তানাদি হয় নাই। ইনি বাপ মায়ের খুবই আদরের একমাত্র কন্যা ছিলেন বলিয়া, তার বাপ ম৷ র্তাহাকে শ্বশুরবাড়ী পাঠাইতেন না, শুনিতে পাই সেই সব নানা কারণে পিতা আমার মাকে বিবাহ করেন, এবং ঠাকুরমাও এই বিবাহ দিতে বাধ্য হন । আমার মেজমার (পিতার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ) স্বভাব বড়মার মতন রুক্ষ ছিল না, তিনি পতিব্ৰতা সরল প্রকৃতির স্ত্রীলোক ছিলেন। আমার মা মাকুরদ গ্রামে বাসাগু নিবাসী গোরাচাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা। মায়ের যখন দুই তিনটি সস্তান হয় তখন বড়মার দৌরাত্ম্যে পিতামাতা সকলে বঁাশবেড়ে ছাড়িয়া কলিকাতায় আসিয়া বাস করিতে থাকেন। প্রথমে কলিকাতায় আসিয়া আমার পিতা শাখারিটোলা, নেবুতলায় কিছুকাল বাড়ী ভাড়া করিয়া থাকেন। তারপর বৌবাজারে একটি বাড়ী ভাড়া করিয়া সেখানে কিছুদিন ছিলেন, সেই বাড়ীতেই আমার জন্ম হয়। মায়ের কাছে শুনিয়াছি, যখন সিপাহীবিদ্রোহ হয় সেই সময় আমি স্থতিকাগৃহে। আমার যখন বয়স পাচ ছয় বৎসর তখন আমার দুই বোন নিস্তারিণী ও লক্ষ্মীর পনের দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়। আমরা সে সময় শিয়ালদহে একটা বাড়ীতে বাস করি। নিস্তারিণীর শিমলাপাড়ায় বিবাহ হইয়াছিল। শ্বশুরবাড়ীর নানা রকম যন্ত্রণা ভোগ করায় তাহার শরীর মন ক্রমশঃ খারাপ হইতে থাকে, তাহা হইতেই কঠিন রোগের সূত্রপাত, তারপরই তাহার মৃত্যু ঘটে। লক্ষ্মী, বড় অভিমানিনী মেয়ে ছিল, সে কাহারও কর্কশ কথা সহ করিতে পারিত না, একদিন আমার ভাইয়ের কাছে কোনও কারণে মার খাইয়াছিল এবং তারপর হইতে তাহার প্রায়ই জর হইতে থাকে, সেই জরই তাহার মৃত্যুর এক রকম কারণ হয় । দুজনেই খুব অল্প বয়সে মারা যায়, নিস্তারিণী তের বছরে ও লক্ষ্মী দশ বছরে। তাহাদের দুজনের মৃত্যুর পর আমার পিতা সণতরাগাছিতে একটি বাড়ী কিনিয়া বরাবরের জন্য সেখানে বাস করিতে থাকেন । আমার বয়স যখন দশ বৎসর সেই সময় আমার দিদি নৃপময়ী দেবীর সহিত মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র হেমেন্দ্রনাথের বিবাহ হয় । ইহার পূৰ্ব্বে সারদাসুন্দরী ও সুখদার বিবাহ হইয়া গিয়াছিল । সারদাসুন্দরীর উত্তরপাড়ায় যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহিত বিবাহ হইয়াছিল। নুপময়ীর বিবাহের সময় আমাদের দিকে মহা গণ্ডগোল উপস্থিত হয়। আমাদের জ্ঞাতি কুটুম্বের সকলেই মনে করিলেন এই বিবাহ হইলে তাহাদের জাত নষ্ট হইবে, সেই আক্রোশে একশত লাঠিয়াল ঠিক করিয়া রাখিলেন, যে, যেমনি বর সভায় আসিবে তৎক্ষণাৎ তাহাকে লাঠির ঘায়ে শেষ করিয়া কনেকে তুলিয়া লইয়া যাইবেন। এই খবর পাইবামাত্র আমার ভাই দুর্গাপ্রসন্ন, পুলিশের সাহায্য লইয়া যাহাতে বিবাহে কোনও রূপ বাধাবিঘ্ন না ঘটে তাহার জন্যৎ সার্জেন কনেষ্টবল পুলিশের পাহারা বসাইয়া রাখিলেন। ভাগ্যক্রমে কোন বিপদ ঘটে নাই। বর যখন বিবাহের আসরে আসিয়া বসিলেন তথন মনে হইতেছিল সত্য সত্যই যেন মহাদেব ধরাতলে অবতীর্ণ হইয়াছেন। যেমন রূপ, আবার তেমনি সাজের বাহার! বর দেখিয়া পাড়ার লোকেরা স্তম্ভিত হইয়া গেল, চারিদিক হইতে লোকেরা বর দেখিবার জন্য উকিঝুকি মারিতে লাগিল। সে যে তাহাকে কি স্বন্দর দেখাইয়াছিল