পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

y:్నby প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড يحتويجع تسمية معهم عينهي عمج ممهتميميه يحيين ক্রমশঃই খারাপের দিকে যাইতে লাগিল। যেদিন সে জন্মের মত আমাকে তাহার বন্ধন হইতে মুক্ত করিয়া চলিয়া গেল, সেইদিন রবি ( আমার ছোট দেওর ) আসিয়া আমাকে বলিলেন যে, “তুমি একবার তার কাছে যাও, সে তোমাকে মা, মা করিয়া ডাকিতেছে । আমি এক এক সময় তাহার যন্ত্রণা দেখিতে না পারিয়া পাশের ঘরে গিয়া বসিয়া থাকিতাম। রবির কথা শুনিয়া যখন তার কাছে গিয়া তার পাশে বসিলাম, তখন তাহার সব শেষ হইয়া আসিয়াছে। মনে হইল, আমাকে দেখিয়া চিনিতে পারিল, তাহার পর একবার বমি করিয়া সব শেষ হইয় গেল। তখন ভোর হুইয়াছে। সুর্য্যদেব ধীরে ধীরে তাহার কিরণচ্ছটায় পৃথিবীকে সজীব করিয়া তুলিতেছিলেন, ঠিক সেই সময় তাহার দীপ নিভিয় গেল। অনেক্ষণ তাকে লইয়া বসিয়া রহিলাম। তুারপর সকলে আমাকে অন্য ঘরে লইয়া গেল। যখন আবার ফিরিয়া আসিলাম তখন সে নাই, ঘর শূন্য পড়িয়া রহিয়াছে। বুকের মধ্যেও সবই তখন শূন্ত হইয়া গিয়াছে। সেই শূন্যতার কঠিন মৰ্ম্ম তারাই বুঝিতে সক্ষম হইবে, যাহারা" এই পুত্ৰশোকের তীব্র জালা অনুভব করিয়াছে। তাহার স্মৃতি চারিদিক হইতে আমাকে প্রতিমুহূৰ্ত্তে দগ্ধ করিতে লাগিল। তারই ঘর সাজাইবার জন্য নানারকম জিনিষ কিনিয়া দিয়াছিলাম, তখন মনে হইতে লাগিল তাহারই চিতার সঙ্গে এইগুলিও সব জালাইয়া ছারখার করিয়া ফেলি। কিন্তু বউটির মুখের দিকে চাহিয়া তাহা হইতে নিরস্ত হইলাম। যেদিন তার মৃত্যু হয় সেইদিন আমার স্বামী ক্রমাগত ঘর আর বাহির করিয়াছিলেন । শুনিয়াছি চাকরদের নিকট বার বার জিজ্ঞাসা করিয়াছেন, “বাড়ীতে সব তালাবন্ধ কেন ?” যদিও তখন তিনি উন্মাদ অবস্থায় ছিলেন, কিন্তু ভগবান তার ভিতরেও পুত্ৰশোকের দারুণ যন্ত্রণার অনুভব-শক্তি দিয়াছিলেন। যাহাকে ছাড়িয়া কখনও থাকিতে হইবে একথা মনেও আনিতে পারি নাই, তাহাকে ছাড়িয়া একত্রিশ বছর কাটিয়া গেল। উনত্রিশ বছর বয়সে ১৩০৬ সাল, ৩রা ভাদ্র তাহার মৃত্যু হয় । - তাহার মৃত্যুর পর সেই ঘরেই দরজা বন্ধ করিয়া অচেতন অবস্থায় পড়িয়া থাকিতাম। মনে হইত, সে যেন পূৰ্ব্বেকার মত আমার কাছে দাড়াইয়া আছে। তাহারই ঘরের সামনের বারান্দায় একটি মাদুরের উপর দিনরাত্রি শুইয়া কাটাইতাম । জল ঝড় বৃষ্টি সবই আমার উপর দিয়া যাইত, কিন্তু আমার তখন কোনও দিকেই হুস ছিল না, কেবল সৰ্ব্বদা মনে হইত আমি না থাকায় তাহার আহারের না জানি কতই কষ্ট হইতেছে। সে যখন যাহা খাইত, আমি নিজের হাতে তাহ খাইতে দিতাম। তাহার জন্য গরু কিনিয়াছিলাম এবং গরুটিকে নানা রকম ভাল জিনিষ থাইতে দিতাম, কেন না তাহার দুধ ভাল হইলে বলুর শরীর স্থস্থ হইবে। সেই দুধের সর তুলিয়া নিজের হাতে মাখন করিয়া তাহারই ঘি হইতে সে যাহা খাইত সব রকম খাদ্য প্রস্তুত করিতাম। এইসব যখন মনে হইত ও খাবার সময় নিকটে আসিত তখন মন আরও অস্থির হইয়া পড়িত। একদিন বৈকাল বেলা তাহার কথা চিন্তা করিতে করিতে মনে হইল, কে যেন আমাকে বলিতেছে, “কে তোমাকে দুধের ঘটি দিয়া তাহার সঙ্গে পাঠাইয়াছিল ?” যখন এই কথাটা মনের মধ্যে জাগিয়া উঠিল তখন মনে অনেকটা শান্তি পাইলাম । মনে হইল, যিনি তাহাকে দয়া করিয়া আমার কোলে আনিয়া দিয়াছিলেন তিনিই তাহার সমস্ত অভাব মোচন করিয়া দিবেন। বিদ্যারত্ব মহাশয় সেই সময় আসিতেন, তিনি আমার মনে শান্তি আসিবার জন্য গীত, উপনিষদ, ভগবদগীত পড়িয়া শুনাইতেন । আমার এক ভাইপে শিবপ্রসন্ন তখন আমার কাছে থাকিত, তারও খুব ধৰ্ম্মের ভাব ছিল, সেও শুনিত, এবং আমার সঙ্গে আহুতি করিত। আমার বড় ভাস্করের পুত্রবধু হেমলতা দেবীর কাছে পরমহংস শিবনারায়ণ স্বামী আসিতেন, তার নিকট হইতে অনেক সৎ উপদেশ পাইয়া মনে শান্তিলাভ করি । তিনি আহুতি করিতে বলেন এবং বলুও বলিয়াছিল যে “আক্ষতি কর মনে শান্তি পাবে । ভগবানের দর্শন পাবে।” ভগবানের দর্শন পাইবার জন্য তখন মন বড়ই ব্যাকুল হইয়া উঠিল, আহুতি করিবার পর হইতে মনে একটা বিশেষ আরাম অনুভব করিতে লাগিলাম।