পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ృషిe একটা স্থযোগ পাইলাম। কত অবস্থার পরিবর্তনের মধ্য দিয়া এক একটি মনুষ্যজীবন গঠিত হইতেছে, আবার কত প্রকারে সংসারের তাড়নায় মুহূর্বের মধ্যে চূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া যাইতেছে, তাহাই ভাবিতে লাগিলাম। আমরা সংসারের নানা কোলাহলের মধ্যে সেই দিনগুলি চিন্তা করিবার স্বযোগ খুজিয়া পাই না বলিয়াই মনের বিক্ষিপ্তত আসিয়া থাকে, এইজন্যই মহাপুরুষেরা নির্জনতার মধ্যে আপনাকে জানিবার পথ অন্বেষণ করিয়া থাকেন । ঈশ্বরের দয়ায় আমার সেই সুবিধা জীবনে একটিবার মাত্র ঘটিয়াছিল। সাহানা ওখান হইতে চলিয়া আসার পর পুনরায় তাহার অনুরোধে আবার সেই চিরপরিচিত জোড়াসাকো বাড়ীতে আসিলাম । সে আমাকে ছাড়িয়া বেশীদিন কোথাও একলা থাকিতে পাবিত না, খুব ছোটবেলায় বাপ-মা ছাড়িয়া আমার কাছে আসিয়াছিল বলিয় রাগ, অভিমান, দুঃখ, আবার সবই সে আমার উপর করিত। বাপ, মা, স্বামী, সবই সে অল্প বয়সে হারাইয়াছিল, কাজেই সব আবার, অভাব পূর্ণ করিতে আমিই তাহার একমাত্র সহায় ছিলাম । শরীর অনেক দিন হইতেই তাহার অসুস্থ হইয়া পড়িয়াছিল, কাসি মাঝে মাঝে হইত এবং তাহারই দরুণ হাপ হইতে স্বরু হইল। এই সবের জন্য প্রায়ই তাহাকে বায়ুপরিবর্তনের জন্য বিদেশে যাইতে হইত। মৃত্যুর কয়েক মাস পূৰ্ব্বে তাহার ইচ্ছা হইল সে একবার কাশ্মীর ভ্রমণ করিয়া আসিবে। সেই সময় আমার ছোট ননদ বনকুমারীর পুত্র সরোজ ও তাহার স্ত্রী দুইজনে কাশ্মীর যাইতেছিলেন। সাহান তাহাদের সঙ্গে যাওয়া স্থির করিল। আমার এক ভাইপোর পুত্র স্বশীল, সে সাহানার শরীর অসুস্থ হওয়া অবধি তাহার সেবা করিত এবং সৰ্ব্বদা নিকটে থাকিত, ইহাকে সে আপনার পুত্রের স্থায় ভালবাসিত, এবং যাহা কিছু তাহার অর্থ ছিল সবই মৃত্যুর পর তাহাকে উইলে দান করিয়া যায়। স্বশীলকেও সে সঙ্গে লইয়া গেল। কিন্তু কাশ্মীর হইতে ফিরিবার পথে রাওলপিণ্ডির নিকট আসিয়া তাহার বুকের ব্যথা খুবই বাড়িয়া গেল। বাড়ী ফেরা তার পক্ষে খুবই কঠিন হইয়া দাড়াইল। এমন কি একদিন নাড়ী ছাড়িয়া গিয়া । প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড প্রাণ বাহির হইবার উপক্রম হইল। সেখানকার একজন পঞ্জাবী ডাক্তার তাহার চিকিৎসা করিতে থাকেন। অনেক সেবা-যত্বের পর সুস্থ হইলে, তাহাকে বাড়ী ফিরাইয়া আন হয়। সেই কাশ্মীর-যাত্রাই তাহার মরণ-পথের দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দিল, বাড়ী আসিয়া ক্রমশঃই বুকের ব্যথা বাড়িতে লাগিল, চিকিৎসাতে কোনও ফল আর হইল না । ফাল্গুন মাসে ঐ রোগই বৃদ্ধি পাইল। ২৭শে ফাল্গুন বেলা একটার সময় তাহার সকল জাল জুড়াইয়া সে চিরশাস্তি লাভ করিল। দুঃখের ভিতরেও শাস্তি পাইবার জন্য যাহার মুখ তাকাইয়া এতদিন কাটাইয়াছিলাম, সেও আমাকে এই বুদ্ধ বয়সে ছাড়িয়া চলিয়া গেল। পাষাণের ন্যায় বুক বাধিয় এককোণে পড়িয়া আছি। এই দুঃখিনীর একমাত্র সম্বল, শুধু সেই দয়াময় । দুঃখশোকে অমৃতাপের মধ্য দিয়া সেই পরব্রহ্মের লাভ ঘটিয়া থাকে। মানুষ যখন দুঃখসাগরের ভিতরে পড়িয়া কুলকিনারা খুজিয়া পায় না, শাস্তির পথ খুজিবার জন্য চারিদিকে অস্থিরভাবে ছুটাছুটি করে, তখন তিনি তার পরশকাঠিখানি ছোয়াইয় তাহাকে বিপদের সম্মুখ হইতে উদ্ধার করিয়া দেন । সংসারে নানা বিঘ্ন বাধী ঘুচাইয়া কাহাকে কোন পথের পথিক করিয়া, আলোকের সন্ধান দেখাইয়া দেন কেহ তাহ বলিতে পারে না । মহাত্মা বাল্মিকীর দস্থ্যবৃত্তির ভিতর তাহার পরম ধনের সন্ধান লাভ ঘটিয়াছিল, অমুতাপের তীব্র জালায় যখন তাহার দেহমন জর্জরিত, সেই জালা জুড়াইবার জন্য যখন সত্যই ভগবানের দর্শনের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হইয়া উঠিয়াছিল, তখন সেই হৃদয়ভেদী ক্ৰন্দন বিশ্ববিধাতার আসন টলাইতে সক্ষম হইয়াছিল । বিধাতা স্বয়ং আসিয়া তাহার জীবনকে পবিত্র করিয়া মলিনতার আবরণ ঘুচাইয়া দিলেন। স্বথ ঐশ্বৰ্য্যের প্রলোভনের মাঝখানে গৌতমের জ্ঞানের পিপাসা জাগিয়াছিল, জর মৃত্যু শোকের অতীত যিনি সেই বস্তুকে পাইবার জন্য র্তাহার অতি প্রিয়, পিতামাত পুত্র পরিবার সকলকে ত্যাগ করিতে কুষ্ঠিত इन नाहे । সংসারে দুঃখরূপ পাষাণ আমাদের হৃদয়ে