পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংখ্যা ] পুস্তক-পরিচয় ১২৩ বর্ণনাভঙ্গী সরল ও আড়ম্বরশস্ত। সাধারণ পাঠকের বুঝিতে কোনই কষ্ট হয় না। পুস্তকের পঞ্চম সংস্করণই ইহার গুণের প্রমাণ। সম্প্রতি “ভাইটামিন সম্বন্ধে যে-সমস্ত নুতন তথ্য জানা গিয়াছে চুণীবাৰু সংক্ষেপে তাহার সমস্তই বর্ণনা করিয়াছেন। পূৰ্ব্ব সংস্করণ অপেক্ষ এই সংস্করণের উপযোগিতা অনেক বেশী হইয়াছে। ছাত্রদের খাদ্যখাদ্য নির্ণয় সম্বন্ধে চুণীবাবু যাহা বলিয়াছেন তাহ বিশেষ প্রণিধানযোগ্য । পুস্তকের শেষে বর্ণানুক্রমিক সূচী থাকায় পাঠকের বিশেষ সুবিধা হইয়াছে। এই পুস্তক প্রত্যেক গৃহস্থের একখানি করিয়া রাখা উচিত । ঐগিরীন্দ্রশেখর বসু মার্কে পোলে—শ্ৰীগঙ্গাচরণ দাশ-গুপ্ত, বি-এ, বি-টি প্রণীত, সচিত্র ভ্রমণকথা। প্রকাশক-—ম্যাক্‌মিলান এও কোং লিমিটেড, ২৯৪নং বহুবাজার ষ্ট্রীট, কলিকাতা । ভেনিস নগরে পরিব্রাজক মার্কে পোলো প্রায় সাড়ে ছয় শত বৎসর পূৰ্ব্বে এসিয়ার বহুস্থান পৰ্য্যটন করিয়া এ দেশের সম্বন্ধে নানা তথ্য সংগ্রহ করেন। ইউরোপের লোকদের নিকট এগুলি এতই বিচিত্র বলিয়া মনে হইয়াছিল যে, তাহারা ইহ সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিতে চায় নাই—গাজাখুরি বলিয়া হাসিয়া উড়াইয়া দিয়াছিল। কিন্তু আধুনিক বড় বড় পরিব্রাজকগণ এসিয়ার ঐ সব অঞ্চল পরিভ্রমণ করিয়া বুঝিয়াছেন যে মার্কে পোলোর বিবরণের মধ্যে অত্যুক্তি নাই বলিলেও চলে। তাই এখন আবার উপহার ভ্রমণকাহিনীর কদর খুব বাড়িয়া গিয়াছে। মার্কে পোলো উীহার ভ্রমণকথা নিজের হাতে লেখেন নাই, জেনোয়ার জেলে বন্দী হইয়া, দেশভ্রমণের বহুদিন পরে বন্ধু রাষ্টশিয়ানোকে দিয়া লিখাইয়াছিলেন। এই বিচিত্র ভ্রমণকথা গঙ্গাচরণবাবু বাহুল্য বর্জন করিয়া এমন মধুর সরল ভাষায় লিথিয়াছিলেন যে, দেশের তরুণেরা ইহা পাঠে জ্ঞান ও আনন্দ দু-ই লাভ করিতে পারিবে । শ্ৰীনিশিকান্ত সেন বাঙ্গালীর খাদ্য-কবিরাজ শ্ৰীইন্দুভূষণ সেন আয়ুৰ্ব্বেদশাস্ত্রী, ভিষগরত্ন, এল-এ-এম-এস্ প্রণীত, ও ২• বলরাম ঘোষ ষ্ট্রট, কলিকাতা হইতে গ্রন্থকার কর্তৃক প্রকাশিত, ১১১ পৃষ্ঠা, মূল্য ॥• মাত্র। মহামহোপাধ্যায় কবিরাজ শ্ৰীযুত গণনাথ সেন সরস্বতী মহাশয় এই পুস্তকখানির ভূমিকা লিখিয়াছেন। বাঙ্গালীর খাদ্যতত্ব বুঝাইবার জন্ত স্বগীর ডাক্তার ইন্দুমাধব মল্লিক, রায় বাহাদুর ডাঃ চুণীলাল বস্ব, ডাঃ রমেশচন্দ্র রায়, প্রভৃতি অনেকদিন হইতেই চেষ্টা করিতেছেন। আয়ুৰ্ব্বেদের দিক দিয়া কিছু কিছু বুঝাইবার জন্ত লেখকের এই উদ্যম প্রশংসনীয় । পুস্তকখানিতে বিভিন্ন জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজনীয়ত, নিত্যব্যবহার্য্য খাদ্যগুলির পরিচয় ও দোষগুণ ও অন্যান্ত খাদ্য সম্বন্ধে আয়ুৰ্ব্বেদ ও পাশ্চাত্য চিকিৎসাশাস্ত্রের অভিমত, লেখক বিশদভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। পরিশেষে বিভিন্ন ঋতুর উপযোগী খাদ্য, দিনচৰ্য্য, আহার সম্বন্ধে কয়েকটি সাধারণ নিয়ম ও কয়েকটি রোগের সংক্ষিপ্ত পথ্য * সম্বন্ধেও উপদেশ দিয়াছেন । বাঙ্গালীর খাদ্যসমস্ত সমাধানে এ পুস্তকের দ্বারা অনেক সহায়তা হুইবে, এ কথা আমরা নিঃসঙ্কোচে বলিতে পারি। শ্ৰীঅরুণকুমার মুখোপাধ্যায় بےھمبـھ* পুর্ণচ্ছেদ-প্রশৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়। প্রকাশক, রাখহন্ধি জীমানী এণ্ড সঙ্গ, ২-৪ কর্ণওয়ালিস্ট্রট। পৃঃ ২৩৪। মূল্য ১ । শৈলজাবাবু কথাসাহিত্যে প্রতিভার পরিচয় দিয়াছেন। আলোচ্য উপন্যাসখানিতেও উপহার সে প্রতিভা অক্ষুণ্ণ অাছে। শৈলজাবাবুর ভাষায় একটা নতুন স্বর আছে। যে আবহাওয়া তিনি বর্ণনা করিতে যাইতেছেন, যে ভাবকে ফুটাইতে চেষ্টা পাইতেছেন—উণর শব্দচয়নও তখন সে ভাব ও আবহাওয়ার উপযোগী হয়। এই জিনিষটা লেখনী-শিল্পের একটা পুরাতন কথা বটে কিন্তু ইহাকে কার্য্যে পরিণত করার কৃতিত্বের পরিচয় আমরা আধুনিক তরুণ সাহিত্যের যে লেখকদের লেখায় পাই, তাহদের সংখ্যা খুব বেশী নয়। বইখানাতে একটি দরিদ্র পল্লীযুবকের চিত্র আঁকা হইয়াছে। দরিত্রের গৃহস্থালী বর্ণন সংক্ষেপে অতি নিপুণতার সহিত করা হইয়াছে। ছোট মেয়ে পুটি যখন মারের সঙ্গে পরের বাড়ী,হইতে খাইয়া আসিয়া আনলে বাবকে পানে রাঙাজিব বাহির কঠিয়া দেখাইতেছে, তখনই এই দরিদ্র পরিবারের সমগ্র দৈন্ত ও অতৃপ্ত লোভের ইতিহাস এক নিমেষে আমাদের চোখের সাম্নে ফুটিয়া ওঠে। বইয়ের শেষদিকে অতি ট্যাজিক স্বরটা আমাদের ভাল লাগে নাই। যে প্রশাস্ত বেদনার ভাব প্রথম পাত হইতেই মনে গড়িয়া উঠে,—এইথানে তাহা একটা রূঢ় ভাবের খোচ খাইয়া ভাঙিয়া চুরিয়া পড়ে। Emotional unity একটু ব্যাহত হয়। ছাপ ও কাগজ ভাল। গরীবের ছেলে—শ্ৰীসৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়। প্রকাশক রাখহরি স্ত্রীমানী এণ্ড সঙ্গ, ২-৪, কর্ণওয়ালিস্ ট্রীট, কলিকাত। পৃঃ ২৯৫। মূল্য দুই টাকা আলোচ্য উপন্যাসখানিতে গ্রন্থকার যে সমস্তার অবতারণা করিয়াছেন, উপাখ্যানভাগেই তাহার স্বাভাবিক সমাধানের ইঙ্গিতও করিয়াছেন। সরোজ দরিদ্রের ছেলে, কলিকাতায় কলেজে পড়ে। এক সহপাঠীর জন্মদিনে তাহার বাড়ীর পার্টিতে নিমন্ত্রণে গিয়া কুশল্পী তরুণী মিনি রায়ের সহিত পরিচয় হইল। মিনি রায় ভাবপ্রবণ ও মার্জিতরুচি, কিন্তু তাহার বিবাহ হইয়াছে যাহার সঙ্গে, সে লোকটি কয়লায় ব্যবসায় কি করিয়া গড়িয়া তুলিতে হয় জানে—আর্ট বা কবিতার ধার ধারে না। প্রথম দর্শনেই মিনি ও সরোজ পরম্পর পরস্পরের দিকে আকৃষ্ট হইল। গল্পের বাকীটুকু বলিবার কোনো প্রয়োজন নাই, এই আকৃষ্ট হওয়াটাই সমস্ত এবং এই সমস্ত কোনো বিশেষ সমাজের বা বিশেষ সময়ের নহে। গ্রন্থকার কোনো কৌশল অবলম্বন না করিয়া চরিত্র দুটিকে স্বাভাবিক পরিণতির দিকে লইয়া গিয়াছেন, কিন্তু শ্লীলতা বা শোভনতাকে বিসর্জন দেন নাই। মিনির চরিত্র বেশ ফুটিয়াছে কিন্তু সরোজের পরিণীত পত্নী নিতাকে অতটা জড়পদার্থ না করিলেও ক্ষতি ছিল না। পাঠকের মনে এ কৌতুহল হওয়া স্বাভাবিক যে, নিভ বুদ্ধিমতী ও স্বন্দরী হইলে অবস্থান জানি কিরূপ দাড়াইত। নিস্তাকে নেহাৎ পুটুলী বানাইয়া গ্রন্থকার ঘটনাকে অনেক সহজ করিয়া তুলিয়াছেন। অপরপক্ষে এ কথা মনে ওঠে যে দরিত্রের ছেলে পঞ্চানন নিজের গুণে মিনি রায়ের পিতার দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া তাহার অর্থে বিলাত গেল ও তাহার কস্তা মিনিকে বিবাহ করিল এবং যে ব্যবসায় পরিচালনে তাহার দক্ষিণহস্ত—সে কি অতথানি জানোয়ার ? শ্ৰীবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়