পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] আছিস্ ? কত বদলে গিয়েছিস্ । যত বা না বদলেছিস্, মাচুষে গুজব তুলেছে তার দশগুণ। তোকে গাউন-পরা মেম বলেই তারা এখন মনে করে, শাড়ী পরতে দেখলে অবাক হয়ে যাবে। তুই নাকি ঘোড়ায় চড়িস, মোটর হাকাস, লাটসাহেবের বাড়ী গিয়ে বল নাচিস, আরও কত কি ৷” মায়া বলিল, “বেশ বাপু, কিছু না করতেই এত । তবু যদি যা কিছু করবার স্থবিধা আছে, সব করতাম, তা হলে কি যে আমার নামে বেরত, তাই ভাবছি ।” ইন্দু বলিল, “অমৃখে পড়বার দিনকয়েক আগে প্রভাসের মায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সে বলে কি “হঁাগা তোমাদের মেয়ে নাকি বিলাত যাচ্ছে ? সে আজকাল নাকি বাংলায় কথা বলতে পারে না, মুরগী ছাড়া খায় না ? সাবিত্রীর মেয়ে শেষে এমন হ’ল ? বাপের রক্তের গুণ আর কি ? মায়ার মুখ হঠাৎ গম্ভীর হইয় গেল । সে বলিল, “ধাকৃ, গুজব না উঠেছে যার সম্বন্ধে, এমন মাতুষ আর আছে কোথায় ? তবে সাবিত্রীর মেয়ের অনুপযুক্ত এখনও কিছু করিনি। এবার গ্রামের লোককে চোখে আঙুল দিয়ে সেটা বেশ করে বুঝিয়ে আসব।” নিরঞ্জন আসিয়া ঢোকাতে এই অপ্রিয় আলোচনাটা থামিয়া গেল । তিনি ইন্দুকে সহজভাবে কথা বলিতে দেখিয়া খুসি হইয়া বলিলেন, “এই যে অনেকটাই ভাল আছিস্ দেখছি । তাই বলে ভাইঝির সঙ্গে গল্প করে জর বাড়িয়ে বসিস্ না যেন । এইবার সেরে ওঠ, আর ও গ্রামের মুখে হতে দিচ্ছি না, সোজা আমার সঙ্গে নিয়ে যাব । মায়াও লাচবে. তোরও অসুখ-বিসুখ এত করবে না।” 毫 ইন্দু হাসিয়া বলিল, “কেন মেজদ, তোমার বৰ্মা মুলুকে কি মামুষের অস্থখ করে না, না মানুষ মরে না ?” নিরঞ্জন বলিলেন, “অমুখও করে, মরেও বটে। তবে গ্রামে বসে তোমরা যে রকম ইচ্ছামরণ করতে পার, সেটার হবিধ ওখানে হয় না।” »ግ মহামায়া సిఫిసి" ইন্দু বলিল, “আচ্ছা, দেখা যাক, আগে সেরেই ত উঠি । এই বয়সে আর দেশ ছেড়ে থাকতে ইচ্ছা করে না । নেহাৎ তোমরা জেদ কর ত কলকাতায়ই । থাকব না হয় ।” সিড়িতে এমন সময় বেশ একটা কলরব শোম। গেল। কচিছেলের কান্না, নারীর কণ্ঠস্বর, গাড়োয়ানের চীৎকার প্রভৃতির এক বিচিত্র সমন্বয় । মায়া উঠিয়া পড়িয়া বলিল, “জয়ন্তীটা আসছে বোধ হয়, একটু গিয়ে দেখে আসি।” নিরঞ্জনও উঠিয়া বলিলেন, “একটু কেন আর, বেশ খানিকক্ষণের জন্যেই যাও । এঘরে এখন আর আডড কোরো না । ইন্দুকে বেশী tired করে তোলা উচিত হবে না। ওর বিটাকে ডেকে দাও গিয়ে ” মায়া ঝিকে ডাকিয়া দিয়া তাড়াতাড়ি জ্যাঠাইমার শুইবার দরে গিয়া ঢুকিল। জয়ন্তী ততক্ষণে ঘরে আসিয়া বসিয়াছে। তাহার চেহারা অনেক খারাপ হইয়া গিয়াছে, গায়ের রঙের আর সে উজ্জলতা নাই, রোগাও হইয়া গিয়াছে। পোষাক-পরিচ্ছদের সে বাহার, সে সৌষ্ঠব আর নাই, একটা সেমিজের উপর আধময়লা একখানা শাড়ী জড়াইয়া চলিয়া আসিয়াছে। সঙ্গে একটি বছর আড়াইয়ের ছেলে, কোলে একটি শিশুকন্য, মাস সাত আটের হইবে । ছেলেটি দেখিতে মন্দ নয়, মেয়েটি অত্যন্তই রোগা । মায় ঢুকিবামাত্র জয়ন্তী বলিল, “কি গো চিনতে পার ?” মায়া বলিল, “যা মূৰ্ত্তি বার করেছ, চিনতে ন৷ পারলেও কিছু অন্যায় হত না । মেয়েটিও দেখছি তোমারই দলের ।” - জয়ন্তী মান হাসি হাসিয়া বলিল, “যেমন অদৃষ্ট, তেমনি চেহারা । এটা ত হয়ে অবধি ভুগছে আর ভোগাচ্ছে। তুই ত দিব্যি দেখতে হয়েছিস্ রে! কে বলবে বাঙালীর মেয়ে । ঠিক যেন কাশ্মিরী রাঞ্জকন্যা।” মায়া বলিল, “তারা কি এত খ্যাদা হয় ?” হাস্ত-পরিহাসে সকলের মনের ভারটা একটু কমিয়৷ গেল ।