পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bళe প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড তক্তপোষ করা চলে, কিন্তু কাঠাল-ব্যবসায়ী তা নিয়ে কাঠাল ফলাতে চেষ্টা যেন না করে। এর ভিতরকার কথাটা হচ্চে মা গৃধঃ । আমি যে-কথাটা বলতে বসেছিলুম সেটা এ নয়। তোমরা তাবুতে থাকবে কিংবা নৌকোতে থাকবে সেপরামর্শ দেওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল না, আমার হাল খবরটা হচ্চে এই যে কাল যখন জাহাজে চড়েছিলুম তখন মনটা তার নতুন দেহ না পেয়ে থেকে থেকে ডাঙা অঁাকৃড়ে ধরেছিল—কিন্তু তার দেহান্তরপ্রাপ্তি ঘটেচে। তবুও নতুন দেহ সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে কিছুদিন লাগে। কিন্তু খুব সম্ভব কাল থেকেই লেক্চার লিখতে বসতে পারব। সেটাকে বলা যেতে পারে সম্পূর্ণ নতুন ঘরকন্ন পাতানে । যে পার ছেড়ে এলুম সে পারের সঙ্গে এর দাবীদাওয়ার সম্পর্ক নেই। এর ভাষাও স্বতন্ত্র । বাজে কথা গেল। এবার সংবাদ শুনতে চাও। আজ সকাল সাতটা পৰ্য্যস্ত অত্যন্ত ক্লাস্ত ছিলুম, ক্লাস্তি যেন অজগর সাপের মতো আমার বুকপিঠ জড়িয়ে ধরে চাপ দিচ্ছিল । তারপর থেকে নিজেকে বেশ ভদ্রলোকের মতোই বোধ হচ্চে । যুগল ক্যাবিনের অধীশ্বর হয়ে খুসি আছি । পুব ক্যাবিনে দিন কাটে পশ্চিম ক্যাবিনে রাত্রি--অর্থাৎ আমার আকাশের মিতার পন্থা অবলম্বন করেছি—পূৰ্ব্বদিগন্তে ওঠা, পশ্চিমদিগন্তে পড়া, আমার সহচরত্রয় ভালোই আছে—ত্রিবেণী-সঙ্গমের মতো উত্তর-প্রত্যুত্তর হাস্যপরিহাসের কলধ্বনি তুলে তাদের দিন বয়ে চলেচে। আমি আছি ঘরে, তারা আছে বাইরে। অপূৰ্ব্ব মনে করচে এখানে আমার যা-কিছু স্থযোগ স্থবিধা সমস্তই তার নিজের ব্যবহার-গুণে । আমি তার প্রতিবাদ করিনে— প্রতিবাদের অভ্যেসটা খারাপ—স্থানবিশেষে সংসারে ছোটো ছোটো অসত্যকে যারা মেনে নিতে পারে না তারা অশাস্তি ঘটায়। এই জন্যেই ভগবান মনু বলেচেন— সে কথা যাক । ইতি ২ মার্চ ১৯২৯ । \ල জাহাজ জিনিষটা আগাগোড় চলে, কিন্তু আর সব চলাকেই সে সীমাবদ্ধ করে রেখেচে । এই বাসাটুকুর বেড়ার মধ্যে সময়ের গতি অত্যন্ত মন্দবেগে । সময়ের এই মন্দাক্রান্ত ছন্দে যে-সব ঘটনা অত্যন্ত প্রধান হয়ে প্রকাশ পায় অন্যত্র ছন্দের বেগে সেগুলো চোখেই পড়তে চায় না। এই মুহূৰ্ত্তেই ডাঙার মানুষ যে-সব খেলা খেলচে তা প্রচণ্ড খেলা—জীবনমরণ নিয়ে ছোড়াছড়ি কবৃচে। তাতেই উৎসাহ-উত্তেজনার অন্ত নেই। এই সব দেখলে এ কথা স্পষ্ট করেই বোঝা যায় যে, স্থানান্তরকে লোকাস্তর বলে না । বিশেষ বিশেষ বেড়া বেঁধে সময়ের গতির মধ্যে পরিবর্তন ঘটিয়ে আমাদের জগতের বিশেষত্ব ঘটাই । তার মানেই হচ্চে ছন্দবদল হলেই রূপ বদল হয়। আমি এবং আমার প্রতিবেশী এক জায়গায় বাস করি, কিন্তু এক জগতে নয়। তার মানে তার জীবনে কালের ছন্দ আমার থেকে স্বতন্ত্র। সেইজন্যেই তার খেলার সঙ্গে আমার খেলার তাল মিলে না। আমি ঠেলাগাড়িতে চলচি—সে মোটরে চলচে,আমাদের উভয়ের পরিমাণ এক, ছন্দ আলাদা । বস্তু এক হলেও ঋণপতালে এবং টিমেতেতালায় তার মূল্য সম্পূর্ণ বদলে যায়। মানুষে মানুষে স্বরের ঐক্য থাকতেও পারে, সবচেয়ে বড়ো অনৈক্য তালের। তালের দ্বারা জীবনের ঘটনাগুলোকে ভাগ করে, সাজায়, বিশেষ বিশেষ জায়গায় ঝোক দেয়। একেই বলে স্বষ্টি । জগৎ জুড়ে এই ব্যাপার চলচে। মহাকালের মৃদঙ্গ এক এক তাণ্ডবক্ষেত্রে এক এক তালে বাজচে । সেই নৃত্যের রূপেই রূপের অসংখ্য বৈচিত্র্য। আমার জীবনের নটরাজ আমার মধ্যে যে নাচ তুলেচেন, সে আর কোথাও নেই, কোনো জীবনচরিতের পটে এর সম্পূর্ণ ছবি উঠবে কি করে ! কোনো কালেই উঠবে না। আমাদের আর্টিষ্ট যা গড়েন তার নব নব সংস্করণ ঘটতে দেন না । সাজানো টাইপ ভেঙে ফেলেন, অতএব রবীন্দ্রনাথ কালের চয়নিকায় একবার ধরা দেয়, তারপরে তাকে ফেলে দেয়—অনন্তকালে আর রবীন্দ্রনাথ নেই। হয়তো পরকালে এর একটা ধারা চলতে পারে, কিন্তু আর এ নাম নয়, এ পরিশেষ নয়, এ সমাবেশ নয়, স্বতরাং রবীন্দ্রনাথের পালা এইখানেই চিরকালের মতো চুকিয়ে দিয়ে চলে যেতে হবে। আর যাই হোকু বিশ্বসভায় কারো মেমোরিয়াল