পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سb-bج প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৭ বরষাত্রীস্বরূপ তিনিও সনাতনের সঙ্গী হইয়াছিলেন এবং তথাকার ব্যাপার সমস্তই চৰ্ম্মচক্ষে প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন । বিবাহে কন্যাকৰ্ত্ত পূৰ্ণ-স্বরূপ এক পয়সাও দেয় নাই। গোলযোগ বাধিয়াছিল, কিন্তু আপন কোটে পাইয়া উকীল বৈবাহিক সব গোলযোগের সুমীমাংসা করিতে পারিয়াছিলেন । যাহা হউক, পরদিন উদ্যোগ আয়োজন দরিত্রের পক্ষে প্রচুরই হইল। শিষ্যসেবক দলে দলে আসিল,— নববধূর মুখদর্শনীস্বরূপ হুয়ানি সিকি, কেহ কেহ বা আধুলি দিয়া প্রণাম করিয়৷ উদর পূৰ্ত্তি করিয়া চলিয়া গেল । উৎসব-পৰ্ব্ব মিটিয়া গেলে, পাওনাদার আসিয়া উপস্থিত হইল । সনাতন যজ্ঞেশ্বরের নিকট যাহা কাজ করিয়াছিলেন, তাহা নগদ দ্রব্যাদি ক্রয় করিতেই নিঃশেষ হইয়াছিল। ঘি, ময়দা, তেল, ডাল, মাছ, সন্দেশ, দধি প্রভৃতির দাম বাকী পড়িয়াছিল। ভাবিয়াছিলেন শিষ্য আদির প্রণামী হইতে উহাদের দেন শোধ করিবেন। পাওনাদারদের বসিতে বলিয়া সনাতন বাটীর মধ্যে প্রবেশ করিয়া ডাকিলেন,—ওগো ; শুনছো ? একবার এ দিকে এসে । পরদিন দলে দলে গৃহিণী তখন কক্ষাস্তরে কাহাকে উদ্দেশ করিয়া উচ্চকণ্ঠে মধুবর্ষণ করিতেছিলেন। পাড়াপ্রতিবেশীরা নিকটে বসিয়া শত কণ্ঠে সহানুভূতি প্রকাশ করিতেছিল ও দীর্ঘ অবগুণ্ঠনাবৃত নববধূ নিঃশব্দে নয়নের ধারা নিঃসরণ করিতেছিল। কৰ্ত্তার কণ্ঠস্বরে গৃহিণীর লুপ্তপ্রায় বিক্রম সহসা ভীম উৎসাহে জাগিয়া উঠিল। রোদনরতা বধূর একখানি হাত ধরিয়া সজোরে তাহা হইতে একগাছি বালা টান মারিয়া ছিনাইয়া লইয়া তিনি দুম দুম্ শব্দে বাহিরে আসিলেন ও কৰ্ত্তার সম্মুখে সেটি আছড়াইয়া ফেলিয়া ইiপাইতে হাপাইতে বলিলেন,- এই নাও। স্নাতুন বিস্ময়ে হতৃভম্ব হইয়া ভূপতিত বালাগাছির দিকে চাহিয়া রছিলেন। গৃহিণী আপন বৰ্জুলাকার কৃষ্ণবর্ণ দেহ দোলাইয়া । AMAee eMAMMAMAAAA শিষ্যি সেবকের , পাল, { ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড উচ্চকণ্ঠে দিক প্রকম্পিত করিয়া তীক্ষুস্বরে কহিলেন,— জোচ্চ রীর আর জায়গা পায়নি, তাই ঠকাতে এসেছে। আমার ছেলে কি ফেলুন-হেজিপেজী ? তাই ওই জলার পেত্নী - উঠানে কৌতুহলী জনতা ও কক্ষদ্বারে ক্ষণপূর্বের সহানুভূতি-ভর কয়েক জোড়া চক্ষু সনাতনকে বড়ই চঞ্চল করিয়া তুলিল। তাড়াতাড়ি তিনি বালাটা হাতে তুলিয়৷ লইয়া যুদ্ধস্বরে বলিলেন,—চুপ কর, চুপ কর । কিন্তু গৃহিণী পাগলের মত চক্ষু ঘুরাইয় তাহার হাত হইতে ছে। মারিয়া সেটি কাড়িয়া লইলেন ও নর্দামার মধ্যে ছুড়িয়া ফেলিয়া কৰ্কশ কণ্ঠে কহিলেন,—ঐ গিলটির গয়না দিয়ে কুচ্ছিত মেয়ে পার করেছে,—হারামজাদা মিন্সে ! আমার ছেলে কি মেকী ? সনাতন ধীরে ধীরে উঠানের ধূলার উপর বসিয়া পড়িলেন । র্তাহার নয়নের সম্মুখে রাশি রাশি হরিদ্বর্ণের বিকশিত সর্ষপ ফুল হিল্লোলিত হইয়া উঠিল। পুত্র গদাধর রণরঙ্গিণী মায়ের হাত ধরিয়া টানিতে টানিতে উচ্চকণ্ঠে প্রতিজ্ঞা করিল,—ও বউয়ের মুখ আমি যদি ইহজন্মে দেখি তো—ইত্যাদি । ভিড় কমিয়া গেলে সনাতন উঠান হইতে উঠিয় রান্নাঘরে ভূশায়িত শোকবিহবল পত্নীর নিকটে আসিয়া বলিলেন,—যা হবার তা তো হয়েছে, উপস্থিত বাইরে পাওনাদার দাড়িয়ে । প্রণামী, মুখ-দেখা যা কিছু আছে বার ক’রে দাও, আপাতত তো এ ধাক্কা সামলাই । গৃহিণী তীরবেগে ভূমিশয্যা ত্যাগ করিয়া দণ্ডায়মান হইলেন এবং দ্রুতপদে কক্ষাস্তর হইতে একগোছা, বই, আঁচল ভরিয়া সিকি, দুয়ানী ও কয়েকটি টাকা লইয়া ফিরিয়া আসিলেন । * * বইয়ের রাশি সনাতনের সম্মুখে ঝুপঝাপ করিয়া ফেলিয়া দিয়া মুখ বাকাইয়া কহিলেন,—মুখপোড়া বন্ধুর দল, এই বইয়ের গাদা দিয়ে গেছে । উকুন ধরান ছাড়া এতে যদি দেনা শোধ যায় তো দেখ ! আর এই তোমার আঙট কলার পাতা পেতে ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতনী নিয়ে আকণ্ঠ গিলে-কুটে পেরগামীদিয়ে গেছে! যেন হোটেল আর কি ! বলিয়া