পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] কুমার রাজসিংহের প্রথম বিবাহ হয় । তাহার দুই কন্যার সম্বন্ধ একই সময়ে কুমার রাজসিংহ ও যশোবন্ত সিংহের সহিত স্থির হইয়াছিল ; এবং একই দিনে মিবার ও মারবাড়ের বর-পক্ষ বুদীতে উপস্থিত হন। কোন রাজকুমার প্রথমে বিবাহমগুপে প্রবেশ করিবে এই লইয়া উভয় দলের মধ্যে বিবাদ বাধিল । কোনো পক্ষই পশ্চাৎপদ হইবার নহে ; ক্রুদ্ধ সিংহশাবকদ্বয় পরস্পরের প্রতি কুটিল দৃষ্টি হানিতে লাগিল। যশোবন্ত বলিয়া উঠিলেন, “আমরা উদ্ধত রাঠোর ; অনাদিকাল হইতে মূৰ্দ্ধাভিষিক্ত রাজা ; বিবাহ-তোরণে আমিই প্রথমে ভল্লাঘাত করিব।” কুমার রাজসিংহ বলিলেন, “বটে কামধ্বজ ! তোমরা কোন দিন হইতে নৃপ-পদ-বাচ্য হইলে ? তোমরা অস্বরের পদানত ; কন্যা-বিনিময়ে ভূমি রক্ষা করিয়াছ ; এস ! আজই পুরুষকারের পরীক্ষা হউক।” শিশোদিয়া ও রাঠোরের তরবারি যুগপৎ কোষমুক্ত হইল ; বুদীরাজ তখন যুদ্ধোদ্যত কুমারদ্বয়ের মধ্যবর্তী হইয়া যশোবস্তের হাত ধরিলেন। বৃদ্ধ হাড়ী-নৃপতির বাক্যে উভয় পক্ষ নিরস্ত হইল। তিনি যশোবন্তকে বলিলেন, “কামধ্বজ কুমার ! ইহার সহিত তোমার স্পৰ্দ্ধা ও বিরোধ শোভা পায় না । ইহার যুগে যুগে হিন্দুপতি আখ্যা সার্থক করিয়া আসিতেছেন।” কুমার রাজসিংহ প্রথমে “তোরণ বন্দনা" করিলেন ; কিন্তু চতুর বুদীরাজ কনিষ্ঠ জামাত যশোবস্তকে অধিক ধন ও যৌতুক দিয়া সম্বৰ্দ্ধনা করিলেন। রাজকুমারদ্বয় বন্ধুভাবে পরস্পরের নিকট বিদায় গ্রহণ করিয়া নিজ নিজ রাজধানীতে ফিরিয়া গেলেন। কয়েক বৎসর পরে যশোবন্ত রাজসিংহের এক ভগ্নীকে বিবাহ করেন ; ইহাতে উভয়ের মধ্যে প্রতির বন্ধন আরও দৃঢ় হইল। রাজবিলাসে রাজসিংহের রাজ্যারোহণের পূৰ্ব্বে উদয়পুরের অগ্নিকোণে খুতু-বিলাস নামক উদ্যান-নিৰ্ম্মাণের উল্লেখ আছে। ছাব্বিশ বৎসর রাজত্বের পর মহারাণা জগৎসিংহ পরলোকগমন করেন । তেইশ বৎসর বয়সে ১৬৫৩, ২৮এ মার্চ* খৃষ্টাব্দে রাজসিংহ গীতে বসিলেন ; তাহার

  • টডের মতানুসারে ১৭১• সম্বতে জগৎসিংহের মৃত্যু হইয়াছিল ; ইহা ভুল। রাজবিলাসে সঠিক তারিখ নাই। ওয়ারিসের গ্রন্থপাঠে (f 88 b) জানা যায়, ১৬৫২, ২৭এ জক্টোবর তারিখে বাদশাহ পয়ামের সরহিদের নিকট জগৎসিংহের মৃত্যু-সংবাদ পান।

মহারাণ রাজসিংহ సిలి কাছে যথারীতি বাদশাহী “খেলাত” ( পোষাক, এবং উপহার ইত্যাদি ) প্রেরিত হইল। কিন্তু রাজ্যারোহণের কয়েক মাস পরেই মোগল-সম্রাটের সহিত মহারাণার যুদ্ধ বাধিবার সম্ভাবনা দেখা গেল। অমরসিংহ কত্ত্বক সন্ধির সপ্ত ভঙ্গ করিয়া রাজসিংহ চিতোর-ভুর্গের প্রাকারাদি সংস্কার করিয়া দৃঢ়ীভূত করিতে লাগিলেন। তাহার উদ্দেশু কি ছিল বুঝা যায় না ; রাজবিলাসের কবি প্রভুর পক্ষে অযশস্কর এই সংঘর্ষের কথা আদৌ উল্লেখ করেন নাই ; জানিয়াও এ বিষয়ে সত্য গোপন কিংবা, ভদ্রভাষায় বলিতে গেলে, “সত্যের মিতব্যয়” করিয়াছেন । তিনি কবি ; তাহার কাব্য চাটুবাদ, এজন্য তিনি বিশেষ নিন্দাহঁ নহেন । পারিপার্থিক অবস্থা আলোচনা করিয়া আমরা শুধু অনুমান করিতে পারি, হয়ত চিতোর-দুর্গ সংস্কারের উদ্দেশ্য মোগল-সম্রাটের সহিত যুদ্ধ করা ; কিংবা যুদ্ধের ভয় দেখাইয়া সন্ধির ঐ অপমানজনক সৰ্ত্তটি অপসারিত করা। ১৬৫২ ও ১৬৫৩ খৃষ্টাব্দে ঔরঙ্গজেব ও দারার সেনাপতিত্বে দুইবার অৰ্দ্ধলক্ষাধিক সৈন্য পাঠাইয়া শাহ জাহান কান্দাহার-দুর্গ পারসীকদিগের হাত হইতে উদ্ধার করিতে পারেন নাই। ইহাতে হয়ত রাজসিংহুও সম্রাটের বৈরিতা সাধনে সাহসী হইয়াছিলেন । মোগল-সম্রাটের অধীনতাপাশ ছিন্ন করিবার এই নিস্ফল চেষ্টাকে অনেকে হয়ত রাজসিংহের অবিমুষ্যকারিত বলিবেন ; এবং সাম্রাজ্যের দুদিনে তাহার পূর্বপুরুষগণের সহিত সখ্য সূত্রে আবদ্ধ শাহজাহান এই বিরুদ্ধাচরণকে কৃতঘ্নত বলিয়া নিন্দা করিবেন। অধীনতার অপমানে উদাসীনতা স্বাধীনতা লাভে নিশ্চেষ্টত বোধ হয় এরূপ নিস্ফল চেষ্টা হইতে সমধিক নিন্দনীয় ; কৃতজ্ঞতার প্রতিদান সখ্য ও প্রত্যুপকার ;–উপকারীর কাছে আত্মসন্মান বিক্রয় কিংবা দাসত্বস্বীকার নহে। ১৬৫৪ খৃষ্টাব্দে শরৎকালে মহারাণার বিরুদ্ধে এক বিরাট মোগল-বাহিনী সুজিত হইল । মোগলের ইঙ্গিতে কচ্ছবাহ, রাঠোর, হাড় প্রভৃতি সমস্ত রাজপুত কুল শিশোদিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে প্রস্তুত হইল ; কেননা, তাহারা মোগলদরবারের ভূতিভূক যোদ্ধা; কয়েক পুরুষ ধরিয়া বাদশার নিমক খাইয়াছেন, স্বকৃত কার্ধ্যের দ্যায়-জন্তায় বিচারের