পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরুচারিণী শ্ৰীহেমচন্দ্র বাগচী রাত্রি এক প্রহর থাকিতে মাধব শয্যা ত্যাগ করিয়া বাহিরের চৌকীতে বসিয়া নিৰ্ব্বিকারভাবে ভৃত্য হরিধনের স্বহস্তে-সাজা তামাকু সেবন করিলেন। তাহার পর কোচার খুটটি অনাবৃত বক্ষের উপর জড়াইয়া লইয়া গ্রামের রাস্তায় আসিয়া দেখিলেন, তাহারই আদেশ-মত গরুর গাড়ী গরু ও গাড়োয়ান-সহ প্রস্তুত হইয়া আরোহীর প্রতীক্ষা করিতেছে। গাড়োয়ানকে সম্বোধন করিয়া একবার বলিলেন,—“কিরে নিধে, সব ঠিক রেখেছিস্ ত ? অৰ্দ্ধতন্দ্রামগ্ন গাড়োয়ান নিধিরাম সহসা সেই গম্ভীর স্বরে সচকিত হইয়া উঠিয়া বসিল, বলিল—আজ্ঞে ই্যা কত্তা— সব ঠিক রয়েছেন । —পাচটা সাতায় মিনিট, কি না, একটু সকাল হ’লেই ইষ্টশান থেকে গাড়ী ছাড়ে—একটু তাড়াতাড়ি গাড়ী হাকিয়ে যাস্—কি জানি যদি— কৰ্ত্তাকে আর কিছু বলিতে হইল না । চতুর নিধিরাম কৰ্ত্তার মুখের কথা লুফিয়া লইয়া বলিল—তুমি কিছু ভাববেন না কত্তা—ঠিক টাইনে গাড়ী যদি ধরিয়ে দিতে না পারি, ত আমার নাম নিধিরাম-ই নয় ! “আচ্ছা, আচ্ছা বলিয়া কৰ্ত্তা নিধিরামকে জাগাইয়া দিয়া সেই পথ ধরিয়া আরও খানিকটা অগ্রসর হইয়া গেলেন। পথ যেখান হইতে মোড় ফিরাইয়া পশ্চিমের দিকে চলিয়া গিয়াছে, পথের সেই বাকে একঝাড় বঁাশের পিছনে কচ ও চিতার বেড়া-ঘেরা দু’খানি ছোট ছোট মাটির ঘর। সেইখানে আসিয়া কৰ্ত্তা ডাকিলেন— হিরণের মা ! ও হিরণের মা ! বার-কয়েক ডাকার পর একটি বৃদ্ধ সাড়া দিয়া বেড়ার কাছ পৰ্য্যস্ত অতি কষ্টে লাঠি ধরিয়া ধরিয়া আসিয়া দাড়াইলটি বলিল—চোখে ত ভালো দেখতে পাইনে, কানেও কি ভালো শুনতে পাই ছাই! হিরণ আমাকে উঠিয়ে দিলে—বললে বড়বাড়ীর কত্তাবাবু এসেছেন— তুমি যাও! ত, আজ্ঞে কি বলছেন ? কৰ্ত্ত। আরও একটু আগাইয়া আসিয়া একটু উচ্চকণ্ঠেই বলিলেন,—হিরণকে তৈরী হয়ে নিতে বলো, গাড়ী ছাড়বার আর দেরী নেই।—বলিয়া তিনি আর উত্তরের অপেক্ষা করিলেন না, ধীরে ধীরে যে-পথে আসিয়াছিলেন, সেই পথেই বাড়ীর দিকে ফিরিলেন । ঘণ্টাখানেক পরে সেই বাড়ীর সদর-দরজা হইতে একটি দশ-এগারো বছরের ছেলে একটি অৰ্দ্ধাবগুষ্ঠিত মহিলার আগে আগে বাহিরে আসিয়া দাড়াইল । হিমশীতল পৌষ-রাত্রি-শেষের বাতাস বহিয়া যাইতেছিল । সম্মুখের পূজামণ্ডপের পাশে দুইটি শেফালি তরু । তখনও সেই শেফালি তরু-তলে রাত্রিতে ঝর কতকগুলি শুভ্ৰ শেফালি ফুল পড়িয়া রহিয়াছে। তাহারই পাশ দিয়া শিশির-সিক্ত দুৰ্ব্ব-লুটানো ছোট একটুখানি পথ পূজামন্দিরের দিকে চলিয়া গিয়াছে। ছোট ছেলেটি ও মহিলাটি সেই পথ ধরিয়া পূজামন্দিরে আসিয়া উঠিলেন। মহিলাটি গলায় অণচল দিয়া নত হইয়া সেই মন্দিরের সোপানে প্রণাম করিলেন ; বালককে বলিলেন—নীরদ, প্রণাম করে। ’ * ভোরের দিকের গাঢ় ঘুম ভাঙিয়া যাওয়াতে বালক সন্তুষ্ট ছিল না। বলিল,-“খুড়ি মা, আমরা কোথায় যাচ্ছিা! দৃঢ়স্বরে মহিলা বলিলেন,—“আগে আমার কথা শোনো, তার পর তোমার কথার উত্তর দেব।’ অগত্যা নীরদ নত হইয়া প্রণাম-কাৰ্য্য শেষ করিয়৷ উঠিয়া বলিল—এবারে বলে খুড়ি-ম! খুড়ি-মা মৃন্ময়ী বলিলেন—আমাদের সহরে যেতে হবে ।