পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] ভারত-ভাগ্য 6: বিরুদ্ধে কি অমুযোগ ? বিদেশী গবর্মেন্ট হইলে নানা দোষ হইতে পারে, সে কথা বার বার বলিলে কি কোন লাভ আছে ? স্বদেশী গবর্মেন্ট হইলেই যে নিষ্কলঙ্ক হয় তাহাও নয়। চীনের, রুশিয়ার, জাৰ্ম্মানির, তুর্কির সম্রাটেরা কোথায় গেল ? স্বরাজ হইলেই রামরাজ্য হয় না। আবার প্রজার মঙ্গলের জন্য যে দেশস্থদ্ধ লোককে বিদ্রোহী হইতে হইবে এমনও কোন কথা নাই । ইংরাজ জাতির স্বাধীনতার প্রধান পাট ম্যাগনা চার্ট ; সেজন্য যুদ্ধও হয় নাই, বিদ্রোহও হয় নাই । কয়েক জন প্রধান ব্যক্তি মিলিত হইয়া জন রাজাকে দিয়া স্বাক্ষর করাইয়া লইয়াছিলেন । কন্‌গ্রেসের স্বত্রপাত হইতে বহু বৎসর ধরিয়া বক্তৃতা হইত। বৎসরের শেষে তিন দিন জাতীয় সভার অধিবেশন, তিন দিন অজস্র বক্তৃত, তাহার পরে সকলে নিজের নিজের ঘরে ফিরিয়া যাইত। সংবাদপত্রে লেখালেখি হইত তাহাও অনেকট অরণ্যে রোদনের ন্যায়। যখন একটু বাড়াবাড়ি আরম্ভ হইল অমনি ১২৪ক ধারা অনুসারে অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি হইতে আরম্ভ হইল । র্যাহাদের রাজ্য র্তাহীদেরই আইন, সেই আইনের অনুযায়ী বিচার। আর এক আইনে বিচারেরও প্রয়োজন হয় না, ধরিয়া মাটক করিয়া রাখিলেই হইল। র্যাহারা গোড়াগুড়ি কন্‌গ্রেসে ভিড়িয়াছিলেন তাহার দেখিলেন বেগতিক। র্তাহাদের স্বদেশপ্রেম বক্তৃতার ফোয়ারা দিয়া বাহির হইত, ধরপাকড়ের সমারোহ দেখিয়া তাহারা মানে মানে পাশ কাটাইলেন । পেটিয়টিজম যে সখের যাত্রার অপেক্ষ কখনও গুরুতর ব্যাপার হইতে পারে ইহ। তাহার স্বপ্নেও অকুমান করিতে পারিতেন না। বড়দিনের অবকাশের সময় তাহার রেলের টিকিট কিনিয়া কনগ্রেস-সভায় উপস্থিত হইয়া বকৃত করিতেন । তাহাদের স্বাৰ্থত্যাগের সীমা এই পৰ্য্যন্ত । ইহার অধিক আর কিছু করিতে র্তাহারা প্রস্তুত ছিলেন না । দেশহিতব্ৰত যে কিরূপ কঠোর সাধনা মহাত্মা গাধি সে শিক্ষার প্রথম আভাস দিলেন। তিনি দেখাইলেন যে, দেশের মঙ্গলকামনায় সৰ্ব্বস্ব ত্যাগ করিতে হইবে । সম্পদ, মান, জীবনের স্বচ্ছন্দতা সব ঠেলিয়া ফেলিতে হইবে, কারাবাসে ভীত হইলে চলিবে না। সৰ্ব্বস্ব পণ করিলে তবেই দেশের, জাতির কল্যাণ সাধিত হইবে। পতিতকে উদ্ধার করিতে হইবে, অস্পৃষ্ঠ ঘূর্ণিত জাতিকে বর্ণাশ্রমে স্থান দিতে হইবে। ইংরাজি ১৮৯৭ সালে বিবেকানন্দ স্বামী লাহোরে আমার গৃহে অবস্থানকালে আমাকে বলিয়াছিলেন, ভারতের মুক্তি উচ্চশ্রেণীর লোক দ্বারা কখন সাধিত হইবে না। বিবেকানন্দ মহাপুরুষ, তাহার ভবিষ্যদ্বাণী এখন সফল হইতেছে। তিনি বলিতেন, সঙ্গতিপন্ন অথবা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকের দ্বারা আর কোন বড় কাজ হইবে না। তাহাদের দ্বারা যাহা সম্ভব তাহা হইয়া গিয়াছে। সমাজে এখন যাহারা স্থান পায় না, আমরা নীচশ্রেণী বলিয়া যাহাদিগকে ঘৃণা করি তাহারাই জাগিয়া উঠিবে, দেশে নবযুগের অবতারণা তাহারাই করিবে। ঘটিয়াছেও তাহাই। ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় এখন দেশের কি করে ? মহাত্ম। গাধি জাতিতে বণিক, পঞ্জাবকেশরী লাজপত রায়ও বণিক-জাতীয় ছিলেন। কিন্তু ইহাদের তুল্য তেজস্বিত কোন ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়ের দেখিতে পাওয়া यांग्न ? জলিয়নওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পর মহাত্মা গাধি যে ননকোঅপারেশনের সূত্রপাত করেন তাহা ইঙ্গিত মাত্র । অতি অল্পসংখ্যক লোকই তাহাতে যোগ দিয়াছিল, কিন্তু সেই ইঙ্গিতে সিংহাসন টলিয়াছিল, রাজা-মহারাজার আহার-নিদ্রা ঘুচিয়া গিয়াছিল। কথাটা বদথত লম্বা, কিন্তু স্বয়ং যীশুখৃষ্ট ননকোঅপরেটরদিগের শীর্ষস্থানীয়। পণ্টিয়স পাইলেটের নিকটে যখন র্তাহার বিচার আরম্ভ হইল সে সময় তিনি উকীল কউন্সিলী ডাকিলেন না, আত্মরক্ষার কোন চেষ্টা করিলেন না । তিনি যে একেবারে নিরপরাধী সে কথা পৰ্য্যস্ত বলিলেন না। ইংরাজদিগের প্রধান ধৰ্ম্মগ্রন্থে, মণ্ডপৃষ্টের নিজের জীবনে ননকোঅপরেশনের সর্বশ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত দেখিতে পাওয়া যায়। বাইবেল হইতে একটু উদ্ধত করিতেছি—