পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&、も আসিয়া শায়িত লোকটির দিকে চাহিয়াই বিস্ময়ে স্তম্ভিত হইয়া গেলেন । এ যে হিরণ । মাথার একপাশ কটিয়া রক্তে রক্তে স্থানটি প্লাবিত হইয়া গিয়াছে—এক এক চাপ কালে রক্ত জমাট বাধিয়া কপালে মুখে ও গলায় লাগিয়৷ রহিয়াছে ! তিনি আর দেরী করিলেন না , নিকটেই একটি জমিতে জল বাধিয়াছিল। কেঁাচার খুটু ও চাদর ভিজাতীয় তাহার আহত স্থানে ক্রমাগত জল দিতে লাগিলেন। তারপর নাড়ী পরীক্ষা করিয়া দেখিলেন, অত্যন্ত মুদুস্পন্দন । এমনি করিয়া জল দিতে দিতে হিরণ বহুক্ষণ পরে চক্ষু মেলিয়া চাহিল । উঠিয়া বসিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু পরক্ষণেই ‘মা গো’ বলিয়া মন্ত্রণায় কাদিয়া ফেলিল। তখন অনেক বেলা হইয়াছে । অনেক চাষী মাঠে বাহির হইয়াছে। তাহারা মাধবচন্দ্র ও হিরণকে এখানে এই অবস্থায় দেখিয় ভয়ে বিস্ময়ে কৌতুহলে আসিয়া দাড়াইল। মাধবচন্দ্র তাহাদের এখানে সমবেত হইতে দৈখিয়া বলিলেন,—হতভাগার, এখানে দাড়িয়ে কি দেখছিস্ ! একটা গাড়ী নিয়ে আয়, শীগগির যা ! দুই একজন গাড়ী আনিতে ছুটিল। গাড়ী আসিলে সকলে মিলিয়া হিরণকে ধীরে ধীরে গাড়ীর উপর তুলিয়া দিল । তারপর গ্রামের মধ্যে গাড়ী প্রবেশ করিলে পিপীলিকার শ্রেণীর মত বিস্মিত নরনারীর দল রাস্তার দুইপাশে দাড়াইয়৷ রহিল । কেহই কিন্তু নির্বাক্ রহিল না । কিছুদিন পরের কথা । হিরণ সুস্থ হইয়াছে কিন্তু তাহার মনে আর শাস্তি নাই। সকল কৰ্ম্মে সে স্বচ্ছন্দগতি আর নাই। হৃদয়ের অশান্তি মুখের উপর একট। গভীর সুস্পষ্ট রেখাপাত করিয়াছে। সে পথে বাহির হইলেই অজস্র প্রশ্ন বর্ষিত হইতে থাকে। অনেক কৌতুহলী নেত্রের চাহনী-কন্টকের মধ্য দিয়া তাহাকে পথ চলিতে হয় । গ্রামের আর কোনো বাড়ীতেই সে যায় না। কেবলমাত্র মাধবচন্দ্রের বাড়ীতেই মাঝে মাঝে যায়। সন্ধ্যার ছায় ঘনাইয়া আসিলেই মাধবচন্দ্রকে গিয়া প্রণাম করে ; নির্জনে তাহার সঙ্গে সংসারের কথা—ম-ভাইয়ের চিরক্ষন্নতার কথা তুলিয়া আলাপ করে। মাধবচন্দ্র প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড তাহাকে আশ্বাস দেন, সাস্তুন দেন, কিন্তু এই সহায়সম্বলহীনাকে আশ্রয় দিতে পারেন না। কেন না, মাধব বড় শান্তিপ্রিয় লোক-কাহারও সঙ্গে বিবাদ-বিসম্বাদ তিনি বড় ভালবাসেন না । একদিন মাধব তাহাকে বলিলেন, “দেখ, তোকে একটা কথা বলি ! ক’দিন থেকে শুনছি তোর ডাক পড়বে গায়ের কাছারী বাড়ীতে। আরও শুনছি মতিচরণও নাকি তোর এই দশ করেছে । তার ও ডাক পড়বে ;–তা দেখ, কিছুতেই ভয় পাস্ ন · পরমেশ্বরকে ডাকৃ—তিনিই তোর সব বিপদ থ গুন করবেন । হিরণ আবার বিপদের সম্ভাবনায় চমকিয় উঠিল । এই ব্যাপারের মধ্যে মতিচরণের ডাক পড়িবে ইহা সে কল্পনাতেও ভাবিতে পারে নাই । এ কীৰ্ত্ত যে কাহাদের তাহা সে মনে মনে স্থির করিয়াছিল । কোনো প্রমাণ কিন্তু সে পায় নাই । কাজেই মুখ ফুটয়া একথা কাহাকেও জানাইতে পারে নাই। কিন্তু নিরীহ মতিচরণকে যে কেন ইহার পীড়া দিতেছে, তাহা সে বুঝিতে পারিল না। মাধবচন্দ্রের মুখে এই কথা শুনিয়া সে আর কিছু না বলিয়া থাকিতে পারিল না । বলিল - সবই মিথ্যে দাদা মশাই ! আমার অনেক শক্ৰ হ’য়েছে, তা’ত আপনি জানেন । এ কীৰ্ত্তি তাদেরই—অন্য কারুর নয় । মাধবচন্দ্র শাস্ত ভাবে বলিলেন--"কাউকেই ভেব না হিরণ, আজ যার তোমার শক্র হয়ে দাড়িয়েছে, তারাই কাল এমন কাজ করবে, যে, সে কাজ বন্ধুতেও পারে না । অত্যাচরিত প্রপীড়িত হিরণ মাধবচন্দ্রের একথার অর্থ বুঝিতে পারিল না। শুধু তাহার নিপীড়িত অন্তর নবতর বিপদের সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুর্ত হইতে লাগিল । কয়দিন ধরিয়া মাধবচন্দ্রের কাছেও সে আর আসিল না । ইতিমধ্যে সুদীর্ঘকায় এক পাইক আসিয়া তাহাকে জানাইয়া গেল যে, একদিন তাহাকে কাছারী বাড়ী যাইতে হইবে । អត្ថុ নীরদ দীর্ঘকাল গ্রামে আসে নাই। পরীক্ষাগুলিকে