পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২০ প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৭ లeft ভাগ, ১ম খণ্ড কাজ করে, এতদ্ভিন্ন স্বর্ণকার, লোহার কামার, কুম্ভকার, মালাকার,চৰ্ম্মকার ইত্যাদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পী অনেক আছে। সাতৈর গ্রামে উৎকৃষ্ট শীতলপাট প্রস্তুত হয়, কিন্তু এই শিল্প শ্ৰীহট্টের আমদানী সস্ত পাটির সহিত প্রতিযোগিতা করিতে না পারিয়া লোপ পাইতে বসিয়াছে। পূৰ্ব্বে এ জেলায় অনেক সুত্রধর ছিল, তাহার কাঠের উপর অতি স্বল্প খোদাইকার্য্য এবং মূৰ্ত্তি নিৰ্ম্মাণ করিতে পারিত। এখন সেরূপ কারিগর প্রায় দেখা যায় না, কেবল বিষ্ণুদি নিবাসী শ্ৰীপূৰ্ণচন্দ্র মিস্ত্রীকে রথের ঘোড়া ও সারথি, শিব, দুর্গ, গণেশ, রাধাকৃষ্ণ প্রভৃতি উৎকৃষ্ট মূৰ্ত্তি নিৰ্ম্মাণ করিতে দেখিয়াছি। গাজনা গ্রামের কুম্ভকারগণ ( “দেউড়ী” ) উৎকৃষ্ট দেবদেবীর মৃন্ময়মূৰ্ত্তি নিৰ্ম্মাণ করিত, এখন তাহাদের বংশ প্রায় লোপ পাইয়াছে। তবুও স্থানে স্থানে এখনও অনেক “দেউড়ী" আছে। ফরিদপুর সহরের নিকটেও অনেক গ্রামে রাজমিস্ত্রী আছে, তাহারা পাকা কোঠা নিৰ্ম্মাণ করে । এই সকল শিল্পীদিগের মাসিক আয় সাধারণত: ৩০২৩৫২ টাকা, বেশী দক্ষ হইলে ৫০ টাকা পৰ্য্যন্ত হইতে পারে। আমি যে পূর্ণচন্দ্র মিস্ত্রীর কথা বলিলাম, তাহার মাসিক বেতন ৩৫ টাকা এবং খোরাকী । দিনমজুর বা শ্রমিকগণ যাহারা দিনমজুরী করিয়া খায় এবং অন্য জেলায় যে সকল লোক “মুনিয,” “জনমজুর”, “কামলা” ইত্যাদি নামে পরিচিত, ফরিদপুর জেলায় সে শ্রেণীর লোক খুব কম, সেইজন্য এই জেলায় সেই শ্রেণীর লোক বুঝায় এরূপ শব্দ ও প্রচলিত ছিল না—সম্প্রতি "কৃষাণ” শব্দ প্রচলিত হইয়াছে। তাহার কারণ এ জেলায় সকলেরই কিছু-না-কিছু জমি ছিল, ভূমি-শূন্ত লোক খুব কম। তবে মহাজনের কবলে পড়িয়া আজকাল এইরূপ অনেক লোকেব উৎপত্তি হইয়াছে। এখনও সহর বাজারের নিকটেই এরুপ কতক লোক দেখিতে পাওয়া যায়। স্বদুর পল্লীগ্রামে কোন একজন কৃষক শ্রেণীর লোককে যদি বলা যায়, “তুমি আমার এই বাক্সটা মাথায় করিয়া লইয়া চল, তোমাকে ॥• আন দিব,” তবে সে বলিবে ।” “ক্যান তুমি নিজে মাথায় করিয়া নিতে পার না ? আমি বুঝি তোমার । চাকর ?” এ জেলায় কুষ্টিয়া, মেহেরপুর প্রভৃতি স্থানের লোক আসিয়া মাটিকাট, জঙ্গল, আবাদ, পুষ্করিণী খনন প্রভৃতি কাজ করে এবং ধান কাটার সময় ঢাকা জেলা হইতে অনেক কৃষক আসিয়া ধান কাটে এবং পারিশ্রমিকস্বরূপ ধান লইয়া যায়। যাহাদের চাষের জমি নিতান্ত অল্প সেরূপ কোন কোন লোক আবার এ জেলা হইতে বরিশাল, খুলনা জেলার “ভাটা অঞ্চলে’ ধান কাটিতে যায়। তবে কৃষকের দলগঠন ( গীত ) করিয়া পরস্পরের ধানপাট নিড়ান ও ধানকাটার কাজ করে তাহাতে অপমান বোধ করে না । যে সময়ে ক্ষেতে কোন কাজ থাকে না, তখন ইহার আলস্তে কাল কাটায় অথ পয়সা লইয়া কোন কাজ করে না । তবে কোন কোন লোক নৌকার মাঝিগিরি করে। ইহারা আরোহিগণের বাকৃষ্ণ বিছানা মাথায় করিয়া লইতে অপমান বোধ করে না, কিন্তু পয়সা লইয়া অন্য লোকের মোট বহিতে কিছুতেই সম্মত হইবে না। এইরূপ শারীরিক পরিশ্রমে অপমানবোধ শুভ লক্ষণ নহে, ইহা তাহদের দুৰ্ব্বদ্ধির পরিচায়ক। এ জেলায় দিনমজুরের সংখ্যা কম বলিয়া শ্রমিকের মজুরীও অত্যন্ত বেশী। পল্লীগ্রামে সাধারণতঃ দৈনিক ॥০ আনা ও দুই বেল খোরাকী ন দিলে লোক পাওয়া যায় না । ইহার বেল ৬টা ৭টা হইতে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত কাজ করে, মধ্যাহ্নভোজনের পর ২ ঘণ্ট বিশ্রাম করে । সহরের নিকট দৈনিক হার ॥y০ আনা, কিন্তু খোরাকী দিতে হয় না । ইহারা বেলা ৮টা হইতে ৩টা পৰ্য্যন্ত কাজ করে । ষেবার পাটের দর খুব বাড়ে সে বার এই সকল কৃষাণগণ দৈনিক একটাকা পাচ সিকাও রোজগার করে। পাটের চাষ পাটের চাষ এই জেলায়, এমন কি পূর্ববঙ্গের ও পশ্চিম বঙ্গের কোন কোন জেলায় এতদূর বদ্ধমূল হইয়াছে যে, কৃষক, মজুর, জমিদার, মহাজন, উকীল, মোক্তার, ডাক্তার, কবিরাজ প্রভৃতি সৰ্ব্বশ্রেণীর লোকের সচ্ছলতা এই পাটের মূল্যের উপর নির্ভর করে। জ্যাক সাহেব বলেন, ফরিদপুর জেলার কৃষকের পাট বেচিয়া বৎসরে বার