পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২২ কৃষকের অমিতব্যয়িতা ও দূরদৃষ্টির অভাব। আবার পূর্ববঙ্গে তাহাদের মামলাপ্রিয়তা। এই মামলা প্রিয়তার মূলে হিংস্র প্রকৃতি ও বৈরনির্যাতনস্প হা । আমি একটা দৃষ্টান্ত দিয়া ইহা বুঝাইতেছি। রমজান সেথ এ বছর পাট বেচিয়া ৩০০ টাকা পাইয়াছিল। তাহার কতক টাকা দিয়া সে মহাজনের দেন শোধ করিয়াছে, কতক টাকা নানা বাবদে খরচ করিয়া ফেলিয়াছে। কারণ নগদ টাকা হাতে আসিলে ইহাদের নানা প্রকার অভাব ত আসিয়া উপস্থিত হয় । যে ধান পাইয়াছিল তাহা চৈত্র মাসের মধ্যেই খাইয় ফেলিয়াছে । বৈশাখ মাসেই মাসিক টাকা প্রতি এ০ আনা মুদ স্বীকার করিয়া সে মহাজনের নিকট হইতে আবার ২৫ টাকা কর্জ করিল। ইহাতে দুই মাস কষ্টেস্বষ্টে চালাইয়া আষাঢ় মাসে কিছু আউষ ধান পাইল, এবং শ্রাবণ মাসে পাট বেচিয় কিছু নগদ টাকা হাতে পাইল । তখন তাহাকে পায় কে ? সে একদিন হাটে যাইয়া একটা ইলিশ মাছের দাম বার আন বলিল ; তাহার প্রতিবেশী আরজান সেথ ঐ মাছের দাম চৌদ আনা বলাতে রমজান এক টাকা দিয়া ঐ মাছ কিনিল, এবং আরজানের প্রতি ক্রুদ্ধ হইয়া বলিল—“কি ? আমি আব্বাচ মাতব্বরের বেট, আমার দরাস করা মাছ তুই কিনতে চাস্ ? আমি তোর চেয়ে কম কিসে?” আরজানও ক্রোধাভরে একটা গালি দিল । তখন রমজান তাহার মাথায় লাঠির বাড়ি মারিল । আরজানের সঙ্গে আরও লোক ছিল, তাহারা লাঠি হাতে আসিয়া জুটিল, রমজানের আত্মীয়স্বজনও আসিয়া জুটিল। এইরূপে উভয় পক্ষে একটা মস্ত হাঙ্গামা হইল। তাহার ফলে উভয় পক্ষের -চার পাচ জন লোকের মাথায় জখম হইল । পরে থানায় এজাহার দেওয়া হইল, পুলিশ আসিল, উভয় পক্ষের ঘুষ খাইয়া রমজান ও তাহার ছেলে বছিকদিকে চালান দিল। এই মোকদ্দমা তিনমাস ঘুরিল, রমজান উকীল মোক্তার আমলা প্রভৃতিকে ২০০২ টাকা আক্কেল সেলামী দিয়া তিন মাস জেল খাটিয়া ঘরে ফিরিল । এই ব্যাপারে সে পাট বেচিয়া যে টাকা জমাইয়াছিল তাহ নিঃশেষ হইয়। আরও ১০০ টাকা মহাজনের নিকট ঋণগ্রস্ত হইল । প্রবাসা—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড অজ্ঞানান্ধকারে নিমগ্ন কৃষক শ্রেণীর এই সকল দোষ সংশোধন করিবার জন্ত চাই (১) বাধ্যতামূলক শিক্ষাবিস্তার (২) বাধ্যতামূলক অর্থসঞ্চয় এবং (৩) বাধ্যতামূলক বিবাদের নিষ্পত্তি। বাধ্যতামূলক শিক্ষাবিস্তারের জন্য গ্রামে গ্রামে পাঠশালা ও স্কুল স্থাপন করা আবশ্বক। বাধ্যতামূলক সঞ্চয় শিক্ষার জন্য কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক স্থাপন করিতে হইবে। বাধ্যতামূলক বিবাদনিষ্পত্তির জন্য সালিসী পঞ্চয়েং স্থাপন করিতে হইবে । যে সকল কৰ্ম্মীযুবক এখন পল্লীগ্রামের পুনর্গঠন (reconstruction) ও উন্নতিবিধানের সঙ্কল্প করিতেছেন, আমি এই কয়েকটি বিষয়ে তাহদের মনোযোগ আকর্ষণ করিতেছি । যে সকল ক্লষকের জমি আছে, তাহণদের অভাবঅনটনের জন্য বরং তাহারা নিজের দায়ী । যাহাদের অধিক জমি নাই, তাহারা যদি কায়িক শ্রম দ্বারা রোজগারের চেষ্টা করে তবে তাহাদের অভাব দূর হইতে পারে । শ্রমিকগণের মজুরির হার ক্রমেই বাড়িতেছে, সুতরাং তাহাদের জন্য ভাবনার বিশেষ কারণ নাই । কিন্তু মধ্যবিত্ত ভদ্রসস্তানগণের অন্নসমস্যাই ক্রমে অধিকতর কঠিন হইয়া পড়িতেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করিয়া হাজার হাজার যুবক বেকার বসিয়া আছে। একজন গ্রাজুয়েট যদি এখন ৩০ টাকা মাহিনায় একটি চাকুরী পায় তবে সে নিজেকে সৌভাগ্যশালী মনে করে। একটা ৫০ টাকা মাহিনীর চাকুরীর বিজ্ঞাপন দিলে তিন চারি শত দরখাস্ত আসিয়া উপস্থিত হয়। তাহার মধ্যে সকলেই গ্রাজুয়েট, অনেকে এম-এ পাশ, আবার দুই চারি জন এম-এ বি-এলও হইতে পারেন । 学 গবর্ণমেণ্টের গত পাচসনা শিক্ষাবিভাগের রিপোর্ট হইতে জানা যায়, ১৯২৬-২৭ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪,২৯০ জন বালক ম্যাটিকুলেশন পরীক্ষা দিয়াছিল, তাহার মধ্যে পাশ হইয়াছিল ৭,৫৩৭ জন। বাকী সাত হাজার ছেলের মধ্যে যাহারা আবার পড়ে নাই তাহারা অবশুই চাকুরীর উমেদার হইয়াছে। আবার যাহারা পাশ করিয়াছিল তাহাদের মধ্যেও অনেক