পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] মায়ের প্রতি মায়ের অথবা বাড়ীর অন্যান্য মেয়েদের তেমন আলাপপরিচয় নেই অথবা বিশেষ যাতায়াত নেই সেই সব বাড়ীতে মেয়েকে কিছুতেই যেতে দেওয়া উচিত নয়। যদি মেয়ের সমবয়সী কোনও মেয়ে পাশের বাড়ীতে থাকে, মেয়ের সঙ্গে যদি তার বন্ধুত্ব থাকে, তবে অন্ততঃ মেয়ের দিক চেয়েও মায়ের সেই সব বাড়ীর মেয়েদের সঙ্গে আলাপ করে নেওয়া উচিত। এ সমস্তই সবে বড় হয়ে উঠছে যে সব মেয়ে, তাদের বিষয়ে বলা হচ্ছে । মায়ের অজ্ঞাতে মেয়ে কোনও ছেলের সঙ্গে মিশছে তা জেনে কোনও মায়েরই উদাসীন থাকা উচিত নয়। ছেলেদের সঙ্গে কি ভাবে মিশতে হবে, তা মা মেয়েকে প্রতিদিনের দৈনন্দিন কাজের ভিতর দিয়ে বুঝিয়ে দেবেন। আমাদের বাংলা দেশ এখনও পথেঘাটে ভদ্রমেয়েদের দেখতে অভ্যস্ত হয়নি। কাজেই একটু বড় মেয়ে পথে বের হচ্ছে দেখলেই শত শত বিস্মিত চোখের দৃষ্টি তাকে আঘাত করতে থাকে। কাজেই মেয়েকে ভাল করে বোঝান উচিত যে, ওসব দিকে একেবারে মন না দেওয়াই হচ্ছে বুদ্ধিমতীর কাজ। যে-সব অভদ্র লোক মেয়েদের দেখে অভদ্রতা করে তাদের অভদ্রত, দেখেও দেখা উচিত নয় । অভদ্রের। যদি দেখে যে তাদের দিকে কেউ চেয়েও দেখছে না, তাহলে তার আপনিই নিরস্ত হবে। তারপর পোষাক-পরিচ্ছদের কথা । আমাদের দেশে ছোট মেয়েদের বিলাতী ফ্যাসানে হাটুর উপর ফ্রক পরানো হয়। অথচ বিলাতী রীতি অনুসারে মোজা দিয়ে পায়ের অনাবৃত অংশ ঢেকে দেওয়া হয় না ; হাটুর উপর পৰ্য্যস্ত যদি অনাবৃত থাকে তবে তা দেখতেও সুন্দর হয় না। আর তাতে কাপড় পরবারও সার্থকতা থাকে না। কলিকাতার বাহিরেই প্রায় এরকম অপরূপ পোষাক দেখা যায়। ইস্কুলে শিক্ষয়িত্রী যদি ওরকম পোষাকে আপত্তি প্রকাশ করেন তাতে কিছুই হয় না, কারণ বাড়ীতে মায়ের উদাসীন। আমাদের শাড়ীই যদি হাতকাটা সেমিজের উপর কোমরে একটি পাড় বেঁধে পরিয়ে দেওয়া হয় তবে ঢের স্বন্দরও দেখায়, আর গা-ও ঢাকা থাকে। অনেক সময়ে দেখা যায় রাস্তাঘাটে মেয়েরা আলগা গায়ে ছুটাছুটি २२१ করছে । আমাদের দেশ গ্রীষ্মপ্রধান, গায়ে কাপড় রাখা কষ্টকর সে-বিষয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু মেয়েদের শিশুকাল থেকেই গায়ে অন্ততঃ একটি জামা রাখা অভ্যাস করানো উচিত। শিশুকাল থেকে গা-ঢাকা অভ্যাস না করলে অনেক সময়ে বড় হয়ে তারা গা ঢেকে কাপড়-জামা পরতে চায় না, এমনও দেখা যায় । মেয়েকে লেখাপড়ার মত লজ্জাশীলতাও শিক্ষণ দিতে হয়। সঙ্কুচিত ভাবকেই লজ্জাশীলতা বলা যায় না। নতুন মাহুষ দেখলেই তিন হাত জিভ বের করে লাফ দিয়ে পালানো-রূপ লজ্জাশীলতা থেকে মেয়েকে সৰ্ব্বদা রক্ষণ করা উচিত । - সহরের উপরেই ভদ্রপৃহস্থের মেয়েদের উপরও যেরকম অত্যাচার হচ্ছে তাতে অনেকে ভয় পেয়ে মেয়েদের রাস্তায় বের হওয়া বন্ধ করছেন, হেঁটে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করছেন । সেটা আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক এবং উচিত বলেই মনে হয়। কিন্তু তাতে কি মেয়েদের উপর অত্যাচার কমবে ? মেয়েদের ঘরের মধ্যে রেপেও তো মা-বাবা তাদের দুষ্টের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছেন না । অথচ মেয়ের যেটুকু বাহিরের মুখ দেখতে পেত তাও বন্ধ করে তাদের আরও দুর্বল ক’রে তোলা হচ্ছে। রাস্তায় বের হলেই যে সবল হয় তা নয়, কিন্তু রাস্তায় বের হলে বাহির সম্বন্ধে মেয়েদের কাল্পনিক ভয় ভেঙে যায়। সাহস বাড়ে। আত্মরক্ষার পক্ষে সাহস শারীরিক বলের থেকে কোনও অংশে হীন নয়। অবশ্য এ বিষয়ে শুধু মায়েদের ব’লে কোনও লাভ নেই, মা বাবা উভয়েরই এদিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। অন্যান্ত স্বাধীন দেশের মত আমাদের মেয়েরাও যদি বাইরে বের হতে অভ্যস্ত হয় তবে তারাও লোকের চোখে খুব বেশী করে পড়বে না। আর তাতে সুবিধাও অনেক । সে-সব সুবিধার কথা আলোচনা করতে গেলে অনেক কথাই বলতে হয়। স্বাধীন দেশেও যে মেয়েদের উপর অত্যাচার হয় না তা নয়, কিন্তু সে-সব দেশে মেয়েকে ভুলিয়ে নিয়ে যাওয়াই বেশী । আমাদের দেশের মত ঘরের মধ্যে থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে তো শুনিনি। নিরীহ মেষশাবকও শত্রুর দিকে তেড়ে যায় ! কিন্তু হায় ! আমাদের মেয়েরা তার