পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] হাইকোর্টের জজ, কাউন্সিলের সভ্য নিযুক্ত হইতেন। এখন তাহাদিগকে জেলে যাইতে হয়। মহাত্মা গাঁধি, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, লালা লাজপত রায়, পণ্ডিত মতিলাল নেহেরু, পণ্ডিত জওয়াহর লাল নেহেরু সকলেই জেলে বাস করিয়াছেন । তাহাতে কি তাহাদের কলঙ্ক হইয়াছে, না গৌরব আরও বাড়িয়াছে ? র্যাহারা দেশসেবাব্রত গ্রহণ করিয়াছেন তাহারা জেলে যাইতে ভয় পান না, দেশের লোকের চক্ষে তাহাদের সম্মান হ্রাস হয় না। এখন দেশের লোকের মনের যে অবস্থা তাহাতে ত্যাগস্বীকার না করিলে, সকল রকম শাস্তি ও লাঞ্ছনার জন্য প্রস্তুত না থাকিলে কেহ লোকনেতা হইতে পারে না। যেমন যেমন দেশোন্নতির বাসনা প্রবল হইবে সেইরূপ সকল প্রকার নিগ্রহ সহ্য করিতে হইবে। জাতির বল একতায় । যাহারা শু্যাম ও কুল দুই রাখিতে চান, একদিকে গবমেণ্টের মন রাখেন অপর দিকে পেট্রিয়ট বলিয়া পরিচয় দেন তাহদের কথা ছাড়িয়া দিতেছি । এই শ্রেণীর লোক না থাকিলে দেশের মঙ্গল আরও দ্রুত সাধিত হইত। ইহারাই দেশের অধঃপতনের প্রধান কারণ, উন্নতির পথে ইহারাই কণ্টক। কিন্তু যাহারা যথার্থ দেশভক্ত, যাহার দেশসেবায় ত্যাগস্বীকার করিয়াছেন ও ক্লেশ সহ্য করিয়াছেন তাহাদের মধ্যে বিবাদ হইলে নিতান্ত হতাশ হইয়া পড়িতে হয় । বঙ্গদেশেই ইহার পরিচয় পাওয়া যায়। শ্রযুক্ত যতীন্দ্রমোহন সেন গুপ্ত ও শ্ৰীযুক্ত স্বভাষচন্দ্র বস্থ উভয়েই যথাসাধ্য দেশের কাজ করিতেছেন। যতীন্দ্রবাবু সম্প্রতি কারাগার হইতে মুক্তি লাভ করিয়াছেন, স্বভাযবাবু ভারত-ভাগ্য 이 এখনও কারাগারে। ইহাদের দুই দলের মধ্যে এরূপ বিরোধের কারণ কি ? বাংলার কন্‌গ্রেস কমিটী কোন দলের হাতে থাকিবে ইহা লইয়াই বিবাদ । কেন ? কনগ্রেসের হাতে রাজ্যভার নাই, কোন ক্ষমতাও নাই। কন্‌গ্রেস জাতীয় একতা সাধন করিতে নিরত। কনগ্রেসের কাজ উদ্যোগ সাধনা, দেশের লোককে ত্যাগ শিক্ষা দেওয়া, মনের বল কিসে বাড়িবে তাহার উপায় দেখা । সে কাজ কমিটিতে থাকিলেও হয়, না থাকিলেও হয়। কিন্তু আত্মবিরোধ হইলে যে সকল কাজ পণ্ড হুইবে তাহা কি কেহ ভাবিয়া দেখেন না ? গবমেণ্টের কৃপায় এ বিরোধ ঘুচিয়া যাইবে এমন আশা করা যাইতে পারে। ভারতের কলঙ্কমোচনের চেষ্টা সবেমাত্র আরম্ভ হইয়াছে, ইহারই মধ্যে নিজেদের মধ্যে কলহ উপস্থিত হইলে সকল নষ্ট হইবে, শক্র হাসিবে। আত্মসংযম আত্মশাসন না শিখিলে আমরা স্বায়ত্তশাসন লইয়া কি করিব ? আমাদের মুক্তিপথ আমরাই রোধ করিয়াছি। জাতি যদি একমত হয়, বিবাদ-বিসস্বাদ ছাড়িয়া সকলে এক উদ্যমে যোগ দেয় তাহা হইলে সকল বাধাবিঘ্ন ভাগীরথীর স্রোতের মুখে ঐরাবতের তুল্য ভাসিয়া যায়। যুক্তবেণী ন হইয়া বহুমুখী স্রোত হইলে উপলখণ্ডও সরাইবার শক্তি থাকে না। ভারতের ভাগ্য ভারতবাসীর চেষ্টা ও সাধনাসাপেক্ষ । কনগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা হিউম সাহেব একটি কবিতায় fiftison, Nations by themselves are made. ইহাই নিত্য সত্য। যেদিন ভারতবাসী মুক্তির নিমিত্ত বদ্ধপরিকর হইবে সেইদিনই ভাগ্যবিধাতা প্রসন্ন হইবেন ।