পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

šლვ প্রবাসী—জৈষ্ঠৈ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড হইতে চোখ একবার এদিকে ফিরিলে পালানো অসম্ভব হইবে, কারণ এদিকে এখনও অনেক ছেলেকে প্রশ্ন করিতে বাকী। এই স্বর্ণ সুযোগ। বিলম্ব করিলে... । ছু একবার উদখুধ করিয়া, একবার এদিক ওদিক চাহিয়া অপু বেঞ্চি হইতে উঠিয়াই সা করিয়া খোলা দরজা দিয়া বাহির হইয়া পড়িল । পিছু পিছু হরিদাস-অল্প পরেই নৃপেন।. তিন জনেই উপরের বারান্দাতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করিয়া তবু তবু করিয়া সিড়ি বাহিয়া একেবারে একতালায় নামিয়া আসিল । অপু পিছন ফিরিয়া সঙ্গীদের দিকে চাহিয়া হাসিয়া বলিল-হি-হি-হি—উ—আর একটু হোলেই— নৃপেন বলিল-আমাকে তো—মিনিট দুই দেরী— . কাল হয়েচে কি বুঝলে ?. অপু বলিল - যাক এখানে আর দাড়িয়ে খোসগল্প করার দরকার দেখছিনে। এখুনি প্রিন্সিপ্যাল নেমে আসবে গাড়ী লাগিয়েচে দরজায়—কমনরুমে বরং এস– একটু পরে সকলে বাহির হইয়া পড়িল। আজ আর ক্লাস ছিল না । ইহাদের সেই প্রথম যৌবন, যে দৃপ্ত যৌবন যুগে যুগে বিপদকে, বাধাকে, দুঃখকষ্টকে, মৃত্যুকে পৰ্য্যস্ত তুচ্ছ করিয়া আসিয়াছে—শুধু বাচার আনন্দে ইহারা মাতাল—সারা পৃথিবীট। ইহাদের পায়ে-চলার পথ । কে গ্রাহ করে বুড়ে সি-সি-বি ও তাহার রোমের ইতিহাসের যত বাজে প্রশ্ন ? অপু কিন্তু কিছু নিরাশ হইল। ক্লাস হইতে পালাইতে পারিলে প্রতুলের দল খাওয়াইবে বলিয়াছিল। কিন্তু লাইব্রেরীয়ানের কাছে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল তাহারা অনেকক্ষণ চলিয়া গিয়াছে ;.কোন সকালে দু পয়সার মুড়ি ও এক পয়সার ফুলুরি খাইয়া বাহির হইয়াছে— পেট যেন দাউ দাউ জলিতেছিল, কিছু খাইতে পারিলে হইত। ক্লাসে এতক্ষণু বেশ ছিল, বুঝিতে পারে নাই, বাহিরে আসিয়া ক্ষুধার যন্ত্রণাই প্রবল হইয়া উঠিল। এদিকে পকেটে একটাও পয়সা নাই। সে ভাবিল-ওরা জাচ্ছতো ? বল্পে খাওয়াবো তাই তো আমি পালাতে গেলাম, নিজেরা এদিকে সরে পড়েচে কোন কালে !... এখন কিছু খেলে তবুও রাত অবধি থাকা যেতো-আজ সোমবার, আটটার মধ্যেই আরতি হয়ে যাবে-উঃ খিদে যা পেয়েচে !... এ ধরণের কষ্ট করিতে অপু কখনো অভ্যস্ত নয়। বাড়ীর এক ছেলে, চিরকাল বাপ-মায়ের আদরে কাটাইয়াছে। সহরে বড় লোকের বাড়ীতে অন্য কষ্ট থাকিলেও খাওয়ার কষ্টটা অন্ততঃ ছিল না। তা ছাড়া সেখানে মাথার উপর ছিল মা, সকল আপদবিপদে সৰ্ব্বজয়া ভান মেলিয়া ছেলেকে আড়াল করিয়া রাখিতে প্রাণপণ করিত, কোনো কিছুর আঁচ লাগিতে দিত না । দেওয়ানপুরে স্কলারশিপের টাকায় বালকবুদ্ধিতে যথেষ্ট সৌর্থীনতা করিয়াছে - খাইয়াছে, খাওয়াইয়াছে, ভাল ভাল জাম কাপড় পরিয়াছে - তখন সে সব জিনিস সস্তাও ছিল। কিন্তু শীঘ্রই অপু বুঝিল কলিকাতা দেওয়ানপুর নয়। এখানে কেহ কাহাকে পোছে না । ইউরোপে যুদ্ধ বাধিয়া গত কয়েক মাসের মধ্যে কাপডের দাম এত চড়িয়াছে, যে কাপড় আর কেনা যায় না । ভাল কাপড় তাহার মোটে আছে একখানা, একটা টুইল সাট সম্বল । ছেলেবেলা হইতেই ময়লা কাপড় পরিতে সে ভালবাসে না, দেওয়ানপুরে থাকিতে আবার সৌখীন চাল বাড়িয়া গিয়াছে দু’তিন দিন অন্তর সাবান দিয়া কাপড় কাচিয়৷ শুকাইলে, তবে তাহাই পরিয়া বাহিব হইতে হয়। সবদিন কাপড় ঠিক সময়ে শুকায় না, কাপড় কাচিবার পরিশ্রমে এক একদিন আবার ক্ষুধা এত বেশী পায়, যে, মাত্র দু' পয়সার খাবারে কিছুই হয় না—ক্লাসে লেকচার শুনিতে বসিয়া মাথা যেন হঠাৎ সোলার মত হালকা বোধ হয় । & এদিকে থাকার কষ্টও খুব । স্বরেশ্বর এম-এ পরীক্ষা দিয়া বাড়ী চলিয়া গিয়াছে, তাহার মেসে আর থাকিবার সুবিধা নাই। যাইবার আগে স্বরেশ্বর একটা ঔষধের কারখানার উপরের একটা ছোট ঘরে তাহার থাকিবার স্থান ঠিক করিয়া দিয়া গিয়াছে। ঐ কারখানায় সুরেশ্বরের জানাশোনা একজন লোক কাজ করে ও রাত্রে ওপরের