পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

aS)。 প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড এত দিন পরে স্বরেশদার সহিত দেখা হওয়াতে অপুর মনে এমন বিস্ময় ও আনন্দ হইয়াছিল যে ট্রামটা ছাড়িয়া দিলে তাহার মনে পড়িল সুরেশদা’দের বাড়ীর ঠিকানাটা তো জিজ্ঞাসা করা হয় নাই। সে চলন্ত ট্রামটার পাশে পাশে ছুটিয়া জিজ্ঞাসা করিল—আপনাদের বাড়ীর ঠিকানাটা—ও সুরেশ দা— ঠিকানাটা যে – সুরেশ মুখ বাড়াইয়া বলিল—চব্বিশ এর দুই সি বিশ্বকোষ লেন—শু্যামবাজার সাম্নের রবিবারে সকালে স্নান করিয়া অপু তামবাজারে সুরেশদের ওখানে যাইবার জন্য বাহির হইল। আগের দিন টুইল সার্টট ও কাপড়খানা সাবান দিয়া কাচিয় শুকাইয়া লইয়াছিল। জুতার শোচনীয় দুরবস্থাটা ঢাকিবার জন্য একট পরিচিত মেসে এক সহপাঠীর নিকট হইতে জুতার কালি চাহিয়া নিজে বুরুশ করিয়া লইল । সেখানে অতসী-দি ইত্যাদি রহিয়াছে, দীনহীন বেশে কি যাওয়া চলে ? ঠিকানা খুজিয়া বাহির করিতে দেরী হইল না । ছোট খাটাে দোতলা বাড়ী, আধুনিক ধরণে তৈয়ারী। ইলেক্‌টিক লাইট আছে, বাহিরে বৈঠকখানা, পাশেই দোতলায় উঠিবার সিড়ি । সুরেশ বাড়ী ছিল না, ঝিয়ের কাছে সে পরিচয় দিতে পারিল না, বৈঠকখানায় তাহাকে লইয়া বসাইয়া ঝি চলিয়া গেল। ঘড়ি, ক্যালেণ্ডার একটা পুরানো রোল-টপ ডেস্ক, খানকতক চেয়ার। ভারী সুন্দর বাড়ী তো ! এত আপনার জনের কলিকাতায় এরকম বাড়ী আছে, ইহাতে অপু মনে মনে একটু গৰ্ব্ব ও আনন্দ অনুভব করিল। টেবিলে একখানা সেদিনের অমৃতবাজার পড়িয়াছিল, উলটাইয়া পালটাইয়া যুদ্ধের খবর পড়িতে লাগিল। বসিয়া বসিয়া অনেক বেলায় সুরেশ আসিল । - তাহাকে দেখিয়া বলিল, এই যে অপূৰ্ব্ব কখন এলে ! অপু হাসিমুখে দাড়াইয়া উঠিয়া বলিল-আম্বন স্বরেশ দা—আমি, আমি, অনেকক্ষণ ধরে—বেশ বাড়ীটা তো আপনাদের – —এটা আমার বড়মামা যিনি পাটনায় উকীল, তিনি কিনেচেন, তারা তে। কেউ থাকেন না, আমরাই থাকি । বসে, আমি আসি বাড়ীর মধ্যে থেকে--- অপু মনে মনে ভাবিল---এবার স্বরেশ-দী বাড়ীর ভেতর গিয়ে বল্লেই জেঠীমা ডেকে পাঠাবে, এথানে খেতে বলবে— কিন্তু ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সুরেশ বাড়ীর ভিতর হইতে বাহির না। সে যখন পুনরায় আসিল, তখন বারোটা বাজিয়া গিয়াছে। চেয়ারে হেলান দিয়া বসিয়া পড়িয়া নিশ্চিস্তমুরে বলিল, তারপর ? -- বলিয়াই খবরের কাগজখানা হাতে তুলিয়া চোখ বুলাইতে লাগিল। অপু দেখিল, স্বরেশ পান চিবাইতেছে। খাওয়ার আগে এতবেলায় পান খাওয়া অভ্যাস, না-কি খাওয়া হইয়া গেল !... - দু' চারিট প্রশ্নের জবাব দিতে ও খবরের কাগজ পড়িতে পড়িতে একটা বাজিল। সুরেশের চোখ ঘুমে বুজিয়া আসিতেছিল। সে হঠাৎ কাগজখানা টেবিলে রাখিয়া দিয়া চেয়ার হইতে উঠিয়া পড়িয়া বলিল, তুমি না হয় বসে কাগজ পড়, আমি একটুখানি শুয়ে নি । একটা ডাব খাবে ?. ডাব খাইবে কি রকম, এতবেলায়, এ অবস্থায় ? অপু ভাল বুঝিতে না পারিয়া বলিল, ডাব? না থাক, এতবেলায় —ইয়ে—ন । , সেই ষে মুরেশ বাড়ী ঢুকিল একটা—দুইটা—আড়াইট, আর দেখা নাই। ইহারা কত বেলায় খায় । রবিবার বলিয়া বুঝি এত দেরী ? কিন্তু যখন তিনটা বাজিয়৷ গেল তখন অপুর মনে হইল কোথায় কিছু ভুল হইয়াছে নিশ্চয়। হয় সেই ভুল বুঝিয়াছে না হয় উহারা ভুল করিয়াছে। তাহার এত ক্ষুধা পাইয়াছিল যে, সে আর বসিতে পারিতেছে না। - উঠিবে কিনা ভাবিতেছে, এমন সময় স্কুরেশের ছোট ভাই সুনীল বাড়ীর ভিতর হইতে বাহিরে আসিল । অপু ডাকিবার পূৰ্ব্বেই সে সাইকেল লইয়া বাটার বাহিরে কোথায় চলিয়া গেল । সেই সুনীল যাহাকে সঙ্গে লইয়া নিমন্ত্রণে ছাদ বাধিবার দরুণ , জেঠীমা তাহাকে ফলারে বামুনের