পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8● প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড বস্তুকে তাহার আরুতি, গঠনভঙ্গী, বর্ণ ও রেখাসম্পাতস্বারা যদি একটা বিশিষ্ট রূপ দিতে পারা যায়, তবে তাহাই শিল্পের প্রাণ ও মোটামুটি ভাবে আমরা তাহাকেই সৌন্দৰ্য্য বলি। আমরা হয়ত মনে করিতে পারি যে, সামান্ত একটু রং বা রেখার এমন কি মূল্য আছে ? কিন্তু এই ধারণা ভ্রান্ত । বস্তুত কোনও বৃহৎ ও বিরাট পরিকল্পনা যে মহান সৌন্দৰ্য্যকে প্রফুটিত করে, তাহাও কি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র, ও আমাদের চক্ষে অতি সামান্য, রং ও রেখার সমবায়ে গঠিত নয় ? সৌন্দৰ্য্যস্রষ্টা আপনার কল্পনাকে মূৰ্ব করিবার জন্য যে অতি ক্ষুদ্ৰাদপি ক্ষুদ্র চিত্ৰালঙ্কার প্রয়োগ করেন, সেই প্রয়োগের সমষ্টি কি একটি বিশিষ্ট কলা হইতে পারে ন! ? স্থাপত্য ও ভাস্কৰ্য্য শিল্পের, এমন কি চিত্রকলার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ যদি সম্ভবপর হয়, তাহা হইলে ইহাও প্রমাণ করিয়া দেখান যাইতে পারে যে, ঐ সকল শিল্পের মূলে মগুণশিল্প আছে। অতি আদিমযুগের মানবের মনোবৃত্তির সহিত মানবশিশুর মনোবৃত্তির এক অতি আশ্চৰ্য্য সাদৃশ্য দেখিতে পাওয়া ধায় । তাহার। উভয়েই অত্যন্ত অল্পকরণপ্রয়াসী। আদিমমানব প্রকৃতির অন্তকরণে একান্ত তৎপর । নৈসর্গিক জগতে যে অসীম রূপলোক আম|দিগকে আবেষ্টন করিয়া আছে, তাহার প্রভাব সকলেরই উপর কিছু না কিছু কাৰ্য্য করিয়া থাকে। কিন্তু কত্রিম শিক্ষার অভাবে আদিমমানব সেই প্রভাবে একেবারে অভিভূত হইয়া পড়িত এবং যখনই সে আপনার আনন্দবৰ্দ্ধনের জন্য সৌন্দর্য্যসৃষ্টি করিবার প্রয়াস পাইত, তাহার প্রত্যেক খুটিনাটিতে সেই রূপলোকের ধার করা ছবির ছাপ ফুটিয়া উঠিত। এক কথায়, তাহার শিল্প প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের উপর নির্ভর করিত। আদিমমানব ফুলে ফলে, লতায় পাতায় ও পশুপক্ষীর মধ্যে যে সকল রেখা ও রংএর ভঙ্গী দেখিয়া মুগ্ধ হইত, আপনার কুটীরে, বস্ত্রে, এমন কি আপনার অঙ্গরাগে ও প্রসাধনে সেই সকল রেখার টান ও বর্ণসম্পাত স্বকৌশলে অঙ্কিত করিত। এপর্য্যন্ত জীবজন্তুর চিত্রে সজীবতায় ও স্বাভাবিকতায় কেহই প্রস্তরযুগের ( Palaeolithic) শিল্পীদের সমকক্ষ হইতে পারে নাই । প্রাচীন মানবের শিল্পপ্রতিভা ও সৌন্দর্য্য-সংস্কাবের প্রেরণা যে প্রাকৃতিক জগতের নিকট হইতে আসিয়াছিল তাহা প্রস্তরযুগের মানবনিৰ্ম্মিত নিত্যব্যবহার্য্য জিনিষগুলি একটু লক্ষ্য করিয়া দেখিলেই স্পষ্ট বুঝা যায়। কালক্রমে যখন মানব নবপ্রস্তর ( Neolithic ) যুগে আসিয় পৌছিল, যখন সে উদ্ভিদজগতের সহিত ঘনিষ্ঠ ভাবে মেলামেশা করিতে আরম্ভ করিল, তখন তাহার অন্তর সেই সকল বৃক্ষবল্লরীর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হইল । সেই সৌন্দৰ্য্য তাহার চিত্তকে অস্থির ও ব্যাকুল করিয়া তুলিল । কোন এক গভীর রহস্যময় নৈসর্গিক নিয়মে চালিত হইয়া, মানব ধীরে ধীরে শিল্পে অনুকরণের স্তর হইতে, নব নব সৌন্দৰ্য্যস্থষ্টির স্তরে উখিত হইল । তখন সে আর যাহাই দেখিতে ঠিক তাহাই আঁকিয় আত্মপ্রসাদ লাভ করিতে পারিত না । সেই সকল সৌন্দৰ্য্যকে আত্মসত্ত্বার মধ্যে, আপনার রসামুভূতি ও সৌন্দৰ্য্যবোধের দ্বারা পরিবর্তিত ও পরিকল্পিত করিয়া রুত্রিম অভূতপূৰ্ব্ব শিল্পজগতের হুষ্টি করিল। সেই শিল্প-সৌন্দয্য স্রষ্টার কল্পনার যন্ত্রে এক অপূর্ব মূৰ্ত্তি ধারণ করিল। সেই সময় তাহার শিল্পপ্রতিভা অতি সুন্দর স্বন্দর জ্যামিতিক ও মনেকল্পিত চিত্রগুলি উদ্ভাবন করিল ; এবং সেই সকল চিত্র প্রকৃতিজাত হইয়৷ মানবের খেয়ালের চক্রে ঘূর্ণিত হইয়। অপ্রাকৃত ও অদ্ভুত সৌন্দয্যঙ্গষ্টি করিল । তাহার শিল্পের প্রেরণ। উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ হইতে আসিল বটে, কিন্তু উৰ্ণনাভ যেমন তাহার দেহাভ্যস্তরস্থ রস হইতে প্রকৃতির প্রেরণায় বিচিত্র উর্ণাজাল নিৰ্ম্মাণ করিয়া থাকে, মানবও সেইরূপ প্রাকৃতিক জগতের রূপ সৌন্দৰ্য্য আপনার অস্তরের রসবোধের দ্বারা মণ্ডিত ও পরিবর্তিত করিয়া বাস্তব জগত হইতে সম্পূর্ণ বিভিন্ন এক অভিনব রূপজগৎ স্বষ্টি করিয়া বসিল । সঙ্গীত-বিজ্ঞানে ইহা দেখিতে পাওয়া যায় যে, যখন দুইটি বিভিন্ন স্বর মিশ্রিত হয়, তখন সেই সংমিশ্রণের ফলে আর একটি তৃতীয় স্থর উৎপন্ন হয় না কিন্তু সেই দুইটি স্বর আপনাদের স্বাতন্ত্র্য না হারাইয়া সম্মিলিত ভাবে এক অভিনব শ্রীতিমধুর স্বর ( harmony ) উৎপন্ন করে । চিত্রশিল্পেও