পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨88 রস-সৌন্দর্ঘ্যের সন্ধান পায়, যে দৃষ্টি দ্বারা শিল্পী জ্বতি তুচ্ছ ও হেয় বস্তুর মধ্যে আপনার শিল্পকলার প্রেরণা পায় এবং যে কল্পনা থাকিলে, সেই অন্তরের বস্তু-স্বতন্ত্র রূপ-সৌন্দৰ্য্য অভিনৰ শ্ৰী ধারণ করে এবং এক অবাস্তব কল্পনারাজ্যের স্বাক্ট করিয়া থাকে, সে দৃষ্টি উড়িয়া শিল্পীর ছিল। তাহা না হইলে সে বনের পশুপক্ষীর গঠনভঙ্গীটুকু প্রস্তরগাত্রে উৎকীর্ণ করিয়৷ এক অবিনশ্বর কীত্তি স্থাপন করিতে পারিত না। আজ যে জগতের স্বসভ্য দেশের স্বধী ও সহৃদয় সমালোচকগণ উড়িয়া শিল্পীর প্রস্তর ক্ষোদিত লতাপাত ও জীবজন্তু দেখিয়া মুগ্ধ ও বিস্মিত হইতেছেন, সেই শিল্পের মূলে যে কতখানি গভীরতা ও রসবস্তুর অনুভূতি আছে তাহ বর্তমানের সাধারণ শিল্পীর বা সাধারণ দর্শকের কল্পনার অতীত । বৰ্ত্তমানে এমন কোন মগুণ-শিল্প-বিশারদ আছেন কিনা জানি না, র্যাহার বা র্যাহাদের শিল্প-কল্পনা উড়িয়া-শিল্পীর সান্নিধ্যলাভের দাবী করিতে পারে। উড়িয়া শিল্পী প্রাণীজগৎ হইতে কত মনোহর আকৃতি, কত সুন্দর অঙ্গবিন্যাস, কত স্থঠাম ভঙ্গী, কত বিচিত্র চলন আপনার শিল্পকল্পনার আলোকে উদ্ভাসিত করিয়া প্রোজ্জল ও ভাস্বর রূপচ্ছটায় দেবমন্দিরের গাত্রকে ভূষিত করিয়াছে। যে পশুপক্ষীর আকৃতি বা শক্তি তাহাদিগকে আকৃষ্ট করিয়াছিল বা যাহাদিগের নিকট মানুষ উপকারের ঋণে আবদ্ধ ছিল কিংবা যাহাদিগের ভীষণ মূৰ্ত্তি মানবচিত্তে ত্রাস উৎপন্ন করিত তাহদের সকলে উড়িয়া-শিল্পীর শিল্পসাধনায় যথাযোগ্য স্থান পাইয়াছিল। প্রত্যেক মূৰ্ত্তিটিকে আপনার স্বরুচি এবং স্বকৌশল স্বারা শিল্পী অতি সযত্বে নবসৌন্দর্য্য মণ্ডিত করিয়া স্বষ্টি করিয়াছিল। প্রাণীরাজ্যের প্রায় সকলই এই ভাস্কৰ্য্যশিল্পে স্থান পাইয়াছিল এবং যে স্থানে ও যে ভাবে স্বশোভন হইত সেই স্থানে সেই সকল পণ্ডমূৰ্ত্তিকে উৎকীর্ণ করিয়া শিল্পী অশেষ চতুর্ঘ্য প্রকাশ করিয়াছিল। এই সকল জীবশ্রেণীর মধ্যে যে কেবলমাত্র পশুরাজ সিংহ, মাতঙ্গ, অশ্ব, হরিণ প্রভৃতির মূৰ্ত্তিই মন্দিরগাত্রের শোভা সম্পাদন করিবার জন্য প্রযুক্ত হইয়াছিল তাহা নহে ; হংস, মীন, বানর, মেষ, সারমেয়, কুৰ্ম্ম, শুক, বরাহ, বৃষ, এমন কি ഹസാ { ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড সামান্ত দর্দ র ও কর্কট পর্য্যন্ত–মানবের অতি ভয়ঙ্কর শত্রু হইতে তাহার অতি অন্তরঙ্গ গৃহপালিত পশু পৰ্য্যস্ত, সকলকেই শিল্পী সমাদৃত করিয়াছিল। এই সকল জীবজগতের প্রতিনিধিগণ, শিল্পীর কলাকৌশলে, প্রস্তর মূৰ্ত্তি হইয়াও যেন সজীব এবং সজাগ হইয়া অবস্থিতি করিতেছে। প্রস্তরশিল্পে এরূপ বস্তুতান্ত্রিকতা, এরূপ প্রাকৃতিক সাদৃশু ও গঠন-বিন্যাসের জীবন্ত অনুকরণ অতি বিরল। এই সকল জাস্তব চিত্র সূক্ষ্মভাবে পৰ্য্যবেক্ষণ করিলে উহাদের অঙ্কন ও গঠন-ভঙ্গীর বৈচিত্র্যে মুগ্ধ না হইয়া পারা যায় না। ভাস্কর শিল্পী এই সকল পাষাণ চিত্র এরূপ বলদৃপ্ত ও তেজস্ব করিয়া খোদিত করিয়াছে এবং এই সকল মুক্টির স্বাভাবিকতা এতই মনোরম যে, ইহার আশেপাশে চিরপ্রচলিত কলাপদ্ধতির প্রথাতুযায়ী ও কল্পনা-প্রস্থত ভাবপ্রবণ মূৰ্ত্তিগুলির তুলনায় একটা সুস্পষ্ট বৈসাদৃশ্ব পরিলক্ষিত হয়। ভারতীয় শিল্পী আপনার শিল্পকলার সৌন্দৰ্য্যসম্পাদনের জন্য প্রাকৃতিক জগতকে কত পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পর্য্যবেক্ষণ করিতেন এবং কিরূপ তন্ময় হইয়া বনের পশুপক্ষীদিগের রূপ ও গঠন - সৌন্দৰ্য্য আপনার স্মৃতিতে অঙ্কিত করিয় রাখিতেন এবং কিরূপ স্বকৌশলে সেই সকল মূৰ্ত্তির স্বাভাবিক রেখাবিন্যাস ও গঠন-ভঙ্গী প্রস্তরশিল্পের চিত্ররূপে একেবারে অবিকল ফুটাইয়া তুলিতেন এবং তাহাদের কল্পনাকুশল এবং সহৃদয় তক্ষণ সূচিকাম্পর্শে সেই সকল পশু ও পক্ষীর চিত্র কি অপূৰ্ব্ব শ্ৰীমণ্ডিত হইত তাহা ভাষার দ্বার প্রকাশ করা যায় না । ভারতীয় শিল্পীর, বাস্তবের এই সজীব ও মৰ্ম্মস্পর্শী অনুকরণ এবং পাষাণশিল্পের কুহক-মন্ত্রবলে উৎকীর্ণ পশুপক্ষীর দেহ-সৌন্দর্ঘ্যের জীবন্ত ব্যঞ্জন, এই বিশেষ বিদ্যার পারদর্শিতার সাক্ষ্য আজও রহিয়াছে। লিঙ্গরাজের অপূৰ্ব্ব সিংহ মূৰ্ত্তি, অনস্তবাস্থদেব ও কোণার্কের বলদৃপ্ত। গজগামিনী, মুক্তেশ্বরের স্বন্দর স্বঠাম মৃগযুথ এবং স্বৰ্য্যদেউলের অনলোপম তেজস্বী এবং প্রাণবান যুদ্ধাশ্বসমূহ, ভারতীয় শিল্পীর অবিনশ্বর স্মৃতিস্তম্ভরূপে এখনও তাহার ভাস্কৰ্য্য শিল্পের বিজয়ঘোষণা করিতেছে । একজন বিচক্ষণ সমালোচক যথার্থ বলিয়াছেন,—