পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রোগেরই একটি বিশেষ লক্ষণ—এ কথা উল্লেখ করলে মতিলাল বলত—গড়ের মাঠের দিকে কি হাওয়া খেতে যাই রে । ওদিকে মেম-সাহেবদের পেছু-পেছু ঘুরলে witza; stai stă Idioms and Phrases fos পারা যায়। সাহেব-মেমেরা যে কি অযাচিতভাবে মুক্তকণ্ঠে Idioms & Phrases E\pro-Eglos osco food করে,মধ্যে মধ্যে মতিলালের মুখে তারই দু-একটা উদাহরণ শুনে আমাদের মনে হোতো ইংরেজী ভাষাটা আমাদের আর শেখ হ’ল না। কারণ তা শিখতে যা অধ্যবসায়ের প্রয়োজন তা একমাত্র মতিলালেরই আছে এবং তার জন্য অনুপ্রেরণা আসছে ভবিষ্যতের সেই হাকিমী-পদ থেকে—যে অমুপ্রেরণা আমাদের মধ্যে কারুরই ছিল না । মতিলালের দেশ ছিল পূর্ববঙ্গে। কিন্তু পিতা ও পিতামহের সঙ্গে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা ও ছোটনাগপুরের জেলায়-জেলায় ছেলেবেলা থেকে ঘুরে তার পূর্বত্বটুকু সম্পূর্ণরূপে খসে গিয়েছিল। কথাবাৰ্ত্তা বলত সে পরিষ্কার, আর তার কণ্ঠটি ছিল মন-মাতানো । তা ছাড়া গানের সংগ্রহও ছিল তার বিস্তর। সে-সব গান তখনও কারুর মুখে শুনতে পেতুম ন—এখনও পাই না । পাঠক, দৃষ্টি আর একটু প্রসারিত করুন। মাঠের আর এক কোণে কতকগুলো ভাঙা ঘর। এক সময়ে বোধ হয় সেখানে গোয়াল ছিল। এখানটায় রীতিমত জঙ্গল। মানুষ-ভর উচু উচু বুনো কচুগাছ হঠাৎবড়লোকের মত অত্যন্ত কদৰ্য্যভাবে নিজেদের সমারোহ জাহির করতে ব্যস্ত। এদের মাঝে পাচ-ছটা উচু নারকোল গাছ মাথার ওপরে চিরশুম ডালি নিয়ে দিনরাত তাদের ঝঝর রাগিণীতে বোধ হয় সেই বাড়ীরই পুরোণে গাথা গেয়ে যেত। মাঝে-মাঝে সন্ধ্যার পরে এই জঙ্গলটার ঠিক পেছন দিকে চাদ উকি দিত। জঙ্গলের পরেই ছিল একখানা, বাড়ী। এই বাড়ীর একটা আল্‌সে-বিহীন খোলা ছাত মাঠের দিকে বার করা ছিল। যেন দেওয়ালের কঠোর ३ মতিলাল సి ാബാ নিয়ম করে এই বায়ু সেবন করতে যাবার স্পৃহা যে বায়ু আলিঙ্গন থেকে মুক্তি পাবার জন্ত বাড়ীরই খানিকট মাঠের দিকে ছুটে বেরিয়ে এসেছে । নারকোল গাছগুলোর পেছন থেকে চাদ উকি দেওয়ার কিছু পরেই সেই খোলা ছাতে এসে দাড়াত একখানি চাদমুখ। এরা ছিল যেন দুই সখী । চাদের সাড়া পেলে চাদমুখ আর কিছুতেই ঘরে থাকতে পাবৃত না। সে ছিল তরুণী। উজ্জল গৌর ছিল তার দেহের বর্ণ। কিছুক্ষণ চাদের দিকে চেয়ে থেকে সে আকুল ভাবে মাঠের দিকে চাইত। মাঠের মধ্যে কি যে ছিল তার ধ্যানের বস্তু, কে যে তার কামনার ধন তা আমরা কেউ জানতুম না। জানবার চেষ্টাও কোনো দিন করি-নি। অনেকক্ষণ সেইভাবে চেয়ে থেকে আস্তে-আস্তে আবার সে ঘরে ফিরে যেত । যেদিন এই ব্যাপার হোতে, সেদিন আর আমাদের গান মোটেই জমত না । তরুণী ছাতের ধারে এসে দাড়ানোর সঙ্গে-সঙ্গে নিৰ্ম্মলের হাতে ফুটবলের ওপর তবলার বোল তার অজ্ঞাতেই থেমে যেত। মতিলালের কণ্ঠ ধীরে-ধীরে কখন যে বাতাসে মিলিয়ে যেত তা আমরা বুঝতেই পারতুম, না। আমরা অনিমেষ নয়নে সেই তরুণীর দিকে চেয়ে থাকতুম । তার পরে ধীরে-ধীরে যখন তার মূৰ্ত্তি ছাতের এক কোণে মিলিয়ে যেত তখন আমাদের মনের পটে ফুটে উঠত এক একটি ভাব-মূৰ্ত্তি, আর উঠত ছোট্ট সেই সভাতলে দীঘশ্বাসের ঝড় । এর পরে কথা কি গান কিছুই জম্বে না বুঝেই আমরা যে যার বাড়ীর দিকে রওনা হতুম | কৈশোরের কল্পনা-সাগরে আমাদের জীবন-তরণী যখন এইভাবে টলমল করছে তখন চাদ এসে ধরলে তার হাল আর লক্ষ্য হ’ল চাদমুখ। চাদের সঙ্গে তার সঙ্গিনীর দলও এল । চিত্রা আসতে লাগল তার বিচিত্র রূপ ধরে, শ্রবণা এল নৃত্যের তালে দু্যলোকে ভূলোকে মাদল বাজিয়ে, ভদ্রা তার বিরহের গাথা অশ্রদ্ধারে ঢেলে দিতে লাগল। স্বাতী, রাধা আর অনুরাধ খেলতে লাগল লুকোচুরি আর সবার শেষে ফন্তু যেত হৃদয়-দোলায় দোল দিয়ে। এদের পাল্লায় পড়ে কোথায় গেল পড়াশুনো আর কোথায় গেল কি ! বাইরের